শতদিনের সফল সফর পূর্ণ যাদবপুরের শ্রমজীবী ক্যান্টিন
নামী একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত উৎসব গুহঠাকুরতা এখন ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এর মধ্যেই সময় বের করেছেন। হয় তিনি খাবারের প্যাকেট তৈরি করছেন, না-হয় তিনি খাবারের কুপন বিলি করছেন। মিউনিখে ক্যান্সার নিয়ে গবেষণা করছেন মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ধারাবাহিক ভাবে অনলাইনে আর্থিক সহায়তা পাঠাচ্ছেন। গৃহিণী গোপা রায়চৌধুরী আবার রবিবার দু’বস্তা চিনি দিয়েছেন।
এই ভাবে তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী থেকে রিকশা চালক, বিদেশে কর্মরত ক্যান্সার গবেষক থেকে গৃহ পরিচারিকা, সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সহায়তা সম্বল করেই বিনামূল্যে বা ন্যূনতম দামে টানা ১০০ দিন ধরে আম জনতাকে দুপুরের খাবার তুলে দিল ‘যাদবপুরের রান্নাঘর’। যার পোশাকি নাম ‘শ্রমজীবী ক্যান্টিন’। যেখানে রোজ দুপুরে ২০ টাকায় লাঞ্চ প্যাকেট পাওয়া যাচ্ছে। কোনও দিন মেনুতে থাকছে ভাত, দু’রকম তরকারি আবার কোনও দিন ভাত, এক রকম সব্জি ও ডিম।
রবিবার ‘যাদবপুরের রান্নাঘর’ থেকে ‘শ্রমজীবী ক্যান্টিনের’ এই রূপান্তর পর্বের একশো দিন অতিক্রম করায় মেনু ছিল বাসন্তী পোলাও, চিলি চিকেন ও ফ্রুট জুস। সেই ২০ টাকাতেই দক্ষিণ কলকাতার একটি বড় শপিং মলের নিরাপত্তারক্ষী থেকে নির্মাণ শ্রমিক, ছোটখাটো দোকানের কর্মী থেকে ই কমার্স সংস্থার ডেলিভারি বয়— সবাই খাবার নিয়েছেন। গড়ে রোজ ৪৫০-৫০০ লাঞ্চ প্যাকেট দেওয়া হচ্ছে আম জনতাকে। আর এখনও নিখরচায় খাবারের প্যাকেট দেওয়া হচ্ছে হতদরিদ্র ৭০-৭৫ জনকে। ১০০ দিনে দেওয়া হয়েছে সব মিলিয়ে ৫০ হাজারের বেশি প্যাকেট।
এর নেপথ্যে যাদবপুরে সিপিএমের ছাত্র ও যুব ফ্রন্টের প্রায় ৭৫ জন কর্মী। রস্টার তৈরি করে রোজ সকাল-বিকেল ২৫-২৭ জন কাজ করছেন। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী উৎসব এই টিমের একজন। তাঁর কথায়, ‘এক দিকে করোনাযর সংক্রমণে মৃত্যুর আশঙ্কা অন্যদিকে ক্ষুধার জ্বালায় মৃত্যুর হাতছানি। ঝুঁকি নিয়েই এর মোকাবিলা করতে হবে। সেই জন্য এই কাজে যুক্ত হয়েছি।’
দলীয় সূত্রের খবর, দখলে থাকা যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্রে দলের ভিত আরও মজবুত করতেই ওই এলাকায় ধারাবাহিক ভাবে এই কর্মসূচি নিয়ে চলেছে সিপিএম। ওই জায়গাতেই পার্টির উদ্যোগে দরিদ্রদের বিনামূল্যে আনাজপাতি দেওয়া হয়। দলের এক নেতার কথায়, ‘পার্টির কাছে যাদবপুরের গুরুত্ব বরাবরই বেশি। এই এলাকাকে জুড়ে অনেক লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস। আর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর মতো নেতা দীর্ঘদিন এখানকার বিধায়ক ছিলেন।’
একশো দিনের এই ‘সফরকে’ মাথায় রেখেই এ দিন যাদবপুরের শ্রমজীবী ক্যান্টিনের সামনে এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিমান বসু, মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তী প্রমুখ সিপিএম নেতৃত্ব। সেলিম বলেন, ‘রাষ্ট্র যখন তার দায়িত্ব পালন করতে পারে না, তখন সাধারণ মানুষ এই ভাবে এগিয়ে আসে।’ এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিদের প্রশংসা করে বিমান বলেন, ‘ওদের অভিনন্দন। মহামারীর মধ্যে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমাদের নেই।’
এক জন রান্নার ঠাকুর ও তাঁর তিন জন সহযোগীকে টাকা দিয়ে নিয়োগ করা হয়েছে এই ক্যান্টিনে। সিপিএমের কলকাতা জেলার নেতা সুদীপ সেনগুপ্তর আফসোস, ‘দিনে ৫০০-র বেশি প্যাকেট আমরা করে উঠতে পারছি না।’ তিনি বলেন, ‘লকডাউনের প্রথম দিকে যখন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে খাবার বিতরণ করা হচ্ছিল, তখন কাজ হারানো বহু গৃহ পরিচারিকা খাবার নিয়েছিলেন। আবার তাঁরাই এখন কাজ ফিরে পাওয়ার পর সাধ্য মতো অর্থ সাহায্য করছেন।’