শোকস্তব্ধ বিজেপি ! থানায় বসে মাংস – ভাতের ভুরিভোজ নেতাকর্মীদের
হেমতাবাদের বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায় ২০১৬ সালে ভোটে জেতেন বাম বিধায়ক হিসাবেই। তার তিন বছর পরে ২০১৯ সালে তিনি যোগ দেন বিজেপিতে। সেই হিসাবে গেরুয়া শিবিরে তাঁর যোগদান এখনও ১ বছরও পূর্ণ হয়নি। সরকারিভাবে এখনও তিনি খাতায় কলমে বাম বিধায়ক হিসাবেই রয়ে গিয়েছেন। অথচ এই বিধায়কের রহস্যজনক মৃত্যুকে এখন রাজনীতির ঘুঁটি বানিয়ে মাঠে নেমে পড়েছে বিজেপি। এখনও পর্যন্ত তদন্তের গতিধারা যেখানে আত্মহত্যার দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে সেখানে বিজেপির নেতা থেকে সাংসদ মায় কেন্দ্রের মন্ত্রীরা পর্যন্ত গলা ফাটিয়ে মরছেন খুনের দাবি তুলে। এমনকি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে বাংলার নির্বাচিত সরকারকে ফেলা দেওয়ার দাবিও জানিয়ে আসছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে নিজেরাই বারবার বলছে বিধায়কের মৃত্যুতে তাঁরা নাকি শোকস্তব্ধ। আর সেই শোকস্তব্ধতার নমুনাই ধরা পড়ল জলপাইগুড়ি টাউন থানায়। সেখানে বনধ পালন করতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া বিজেপির নেতাকর্মীরা থানায় বসেই দুপুরে সাঁটিয়ে দিলেন মাংস-ভাত। বুঝুন তালে শোকের ঠ্যালা। বিজেপি নাকি শোকস্তব্ধ।
দেবেন্দ্রনাথ রায়ের মৃত্যুর ঘটনা আত্মহত্যা নয়, খুন। এই দাবি তুলে সিবিআই তদন্ত চেয়ে বিজেপি এদিন ১২ ঘন্টা উত্তরবঙ্গ বনধের ডাক দিয়েছে। এদিন সকাল থেকেই শুরু হয়েছে এই বনধ যা হাতেগোনা কয়েকটি এলাকা বাদ দিয়ে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। উত্তরবঙ্গের জনতা চূড়ান্ত ভাবে প্রত্যাখান করেছে বিজেপির ডাকা এই বনধকে। কোচবিহার, মালদা ও উত্তর দিনাজপুর জেলার কিছু কিছু এলাকায় বনধের সাড়া পড়লেও বাকি এলাকা পুরোপুরি স্বাভাবিক। আর তা দেখেই বিজেপির নেতাকর্মীরা নেমে পড়ে রাস্তা অবরোধের পাশাপাশি বাস ও দোকানপাট ভাঙচুর করতে। জলপাইগুড়ি টাউনেই রাস্তায় নেমে ধর্মঘট করতে গিয়ে গ্রেফতার হন বিজেপির বেশ কিছু নেতা কর্মী। তাঁদের গ্রেফতার করে নিয়ে আসা হয় জলপাইগুড়ি টাউন থানায়। সেখানে পুরুষদের রেখে মহিলাদের নিয়ে যাওয়া হয় জলপাইগুড়ি মহিলা থানায়।
দুপুর গড়াতেই খিদে পায় গ্রেফতার হওয়া ওই বিজেপি কর্মীদের। এরপর পুলিশকে জানালে পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়। ফয়েল প্যাক করে আনা হয় তাদের পছন্দের মেনু খাসির মাংস আর ভাত। যা পেটপুরে খেয়ে খুব খুশি বিজেপি নেতা কর্মীরা। বিজেপি মজদুর মোর্চার জেলা সভাপতি মানস মুস্তাফি জানান, ‘গ্রেফতার করে থানায় আনার পর পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের জিজ্ঞাসা করা হয় আপনারা দুপুরে কী খাবেন। আমরা বলি খাসির মাংস আর গরম ভাত খাব। পুলিশি পক্ষ থেকে তার ব্যাবস্থা করা হয়। পুলিশের আপ্যায়নে আপাতত আমরা খুশি।’ আর এই মনোভাব তথা মানসিকতা নিয়েই এবারে উঠে গিয়েছে প্রশ্ন। আদৌ কী বিজেপির নেতাকর্মীরা দেবেন্দ্রনাথ রায়ের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ? শোকস্তব্ধ হলে কেউ মাংসভাত খেতে পারে? মানুষের মৃত্যুর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে অবরোধ করে কেউ মাংসভাত গিলতে পারে? তাহলে প্রতিবাদের নামে যা কিছু বিজেপি করছে সবটাই কী নাটক নয়! সবটাই কী রাজনীতির মাঠে ফায়দা তোলার প্রচেষ্টা নয়! সবটাই কী সাধারন মানুষকে বোকা বানাবার একটা গভীর আর সাংঘাতিক ষড়যন্ত্র নয়! প্রশ্ন কিন্তু উঠছে। মাংস ভাত পুরো বেআব্রু করে দিয়েছে গেরুয়ার মানসিকতা।