করোনা-লকডাউনের গেঁড়োয় বিদ্যুৎ বিল আকাশ ছোঁয়া
করোনা-আম্পানের ধকল সামলে ওঠার আগেই সিইএসসি’র বিদ্যুৎ শকে নাভিশ্বাস কলকাতাবাসীর। নাকাল নগরবাসী সেই ক্ষোভ কোনও রাখঢাক না রেখেই উগরে দিচ্ছেন শহরে বিদ্যুৎ বণ্টনের একচ্ছত্র অধিকারপ্রাপ্ত সিইএসসি’র টুইটার এবং নিজেদের ব্যক্তিগত সোশ্যাল মিডিয়া পেজে।
গত ৭ জুলাই টলিউড তারকা টোটা রায়চৌধুরী তাঁর টুইটার পেজে সিইএসসি’র জুন মাসে পাঠানো বিলের ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘আমার মনে হয় এটা সিইএসসি’র নিশ্চয় একটা বড় ভুল। কিন্তু, এই শক মারাত্মক! আমার গড় মাসিক বিল যেখানে ৫,০০০ টাকার বেশি হয় না, সেখানে এই মাসের জন্য ২৬,০০০ টাকার বিল পাঠানো হয়েছে!!! দয়া করে এটা একটু দেখুন।’
ওই দিনই পিডিজি টুইটার হ্যান্ডেল সিইএসসি’র আর এক গ্রাহক একই অভিযোগ করেন। গত ১২ জুলাই জনৈক কৃষাণু মিত্র অভিযোগ করেন, ‘সিইএসসিতে চরম দুর্নীতি শুরু হয়েছে। ১১ জুলাই সিইএসসি আমাকে এসএমএস পাঠিয়ে কনফার্ম করে যে জুন মাসে আমার ৩৪৫ ইউনিট মিটার রিডিং হয়েছিল। অথচ, আমাকে যে বিল পাঠানো হয়েছে তাতে ৬১৩ ইউনিটের হিসাব দেখানো হয়েছে!’
সিইএসসি’র গ্রাহকদের এই ভুরিভুরি ভুল এবং অতিরিক্ত বিল পাঠানোর বিষয়টি সিইএসসি কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েঙ্কা এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজরে আনতে কৃষাণু তাঁদেরও তাঁর ওই টুইট মেসেজে ট্যাগ করেন। সিইএসসি’র তরফে অবশ্য এই ভুয়ো বিলের অভিযোগকারীদের টুইটের জবাবে তাঁদের কনজিউমার নম্বর ও ফোন নম্বর পাঠাতে বলে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু, অভিযোগকারীদের সংখ্যা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে।
সিইএসসি যাতে শহরের কোভিড-লকডাউন-আমপানধ্বস্ত সাধারণ মানুষের আর্থিক দুর্ভোগের বোঝা অযৌক্তিক বিদ্যুৎ বিল পাঠিয়ে আরও দুর্ভর করে না তোলে এবং ওই দায় কমাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয় তার জন্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র মঙ্গলবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানিয়ে একটি চিঠি লেখেন। সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে সিইএসসি’র বিরুদ্ধে কংগ্রেস রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করবে বলেও ওই চিঠিতে সোমেনবাবু হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
বিদ্যুৎ বিলের বিষয়টি নিয়ে এর আগে শহরে বিজেপিও তাদের বিক্ষোভ দেখিয়েছে।
সিইএসসি’র বহু গ্রাহকের অভিযোগ এপ্রিল, মে মাসের তুলনায় তাদের জুন মাসের বিদ্যুৎ বিল অনেক বেশি এসেছে — অনেকের ক্ষেত্রে দ্বিগুণ বা তিনগুণ। এক মাসে হঠাৎ করে এতটা বিল বেড়ে যাওয়ায় গ্রাহকরা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। তাঁরা অনেকেই সিইএসসিকে মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। সিইএসসি-র তরফে বলা হয়েছে, করোনা-লকডাউনের জন্যই কোনও কোনও গ্রাহকের এক মাসে বিল হঠাৎ করে বেড়ে গিয়েছে। লকডাউনের জন্য সিইএসসি গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার রিডিং করতে পারেনি। তাই, এপ্রিল ও মে মাসে তাঁদের যে বিল পাঠানো হয়েছে তা আগের ছ’মাসের গড় ইউনিট খরচ ধরে করা হয়েছে।
সংস্থার ভাইস-প্রেসিডেন্ট (বিদ্যুৎ বণ্টন), অভিজিৎ ঘোষের কথায়, ‘জুন মাসের ৮ তারিখ থেকে আমরা ফের মিটার রিডিং শুরু করি। ওই রিডিং হিসাবে একজন গ্রাহকের যত টাকা দেয় হচ্ছে তার থেকে আগের দু’মাসের প্রভিশনাল বিলের টাকা বাদ দিয়ে যা বকেয়া থাকে সেটা জুন মাসের বিলে যোগ করে আমরা বিল পাঠিয়েছি।’ এই কারণেই অনেক গ্রাহকেরই জুন মাসের বিল এতো বেশি এসেছে বলে সিইএসসি’র দাবি।
বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘সিইএসসি-র অনেক গ্রাহকের কাছ থেকে আমি অভিযোগ পাওয়ার পর সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছি। ওরা জানিয়েছে, লকডাউনের জন্য মিটার রিডিং না করতে পারাতেই এই সমস্যা হয়েছে। কমিশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী, কোনও নির্দিষ্ট মাসের মিটার রিডিং না করতে পারলে গ্রাহককে তার আগের ছ’মাসের গড় ইউনিট খরচ হিসাব করে বিল পাঠাতে হয়। এই সমস্যা বণ্টন সংস্থার ক্ষেত্রেও হতে পারে।’
বিদ্যুৎ বিল নিয়ে এই গ্রাহক অভিযোগ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান সুতীর্থ ভট্টাচার্য বলেন, ‘আইন অনুযায়ী, গ্রাহক অভিযোগ নিষ্পত্তিতে প্রত্যেক বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার গ্রিভান্স রিড্রেসাল ব্যবস্থা রয়েছে। সেই ফোরামের সিদ্ধান্তে কোনও গ্রাহক সন্তুষ্ট না হলে তিনি কমিশনের ওমবাডস্ম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ জানাতে পারেন। সেই রাস্তা গ্রাহকদের কাছে সব সময় খোলা রয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার পর ওমবাডস্ম্যান তা খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষের বক্তব্য শুনে অভিযোগ নিষ্পত্তি করবেন।’