বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

ব্যোমকেশ বক্সীকে তো চেনেন, সত্যরঞ্জন বক্সীর নাম শুনেছেন?

July 15, 2020 | 2 min read

আমাদের কাছে ব্যোমকেশ বক্সী নামের কাল্পনিক চরিত্রটি সুপরিচিত কিন্তু রক্তমাংসের বিপ্লবী চরিত্র সত্যরঞ্জন বক্সী নামটি অনেকের কাছেই অচেনা। ইনি সারাজীবন লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে দেশমাতৃকার সেবা করেছেন। প্রতিদানে তাম্রপত্র, সরকারি পেনসন বা সরকারি উচ্চপদ কিছুই নেননি। 

সত্যরঞ্জন বক্সী ছিলেন দেশবন্ধুর শিষ্য এবং নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর দক্ষিণ হস্ত। একাধারে দেশপ্রেমিক, শক্তিশালী সাংবাদিক ও সম্পাদক, বিপ্লবী সংগঠক, বিপ্লবী মন্ত্রগুপ্তির সাধক ছিলেন তিনি। সম্পাদনা করেছেন ‘Forward’, ‘Liberty’, ‘The Uniformed’, ‘বাংলার কথা’, ‘আত্মশক্তি’, ‘The Nation’। 

সাংবাদিকতায় তিনি নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান ছিলেন। বিখ্যাত প্রবন্ধ ‘এশিয়াটিক ফেডারেশন’ লিখে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের স্নেহভাজন হন। দেশবন্ধুর মৃত্যুর পর ‘ফরওয়ার্ড’ এর সম্পাদনার দ্বায়িত্ত্বে আসেন তিনি। ১৯২৭ এ রাজদ্রোহের অপরাধে ধারাবাহিকভাবে জেলযাত্রা শুরু।

১৯১১ সালে মাত্র চোদ্দ বছর বয়সেই মাতুল হেমচন্দ্র ঘোষের গুপ্ত বিপ্লবী দল বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্সের সংস্পর্শে আসেন। ১৯১৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইংরাজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করার পর ১৯২০ সালে আইনশাস্ত্রে স্নাতক হন। 

চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখলের লড়াই,  বিপ্লবীদের উপর অত্যাচারের প্রতিশোধ হিসেবে ঢাকায় লেম্যান, হাডসন, মেদিনীপুরে বার্জ, পেডি, ডগলাস, কুমিল্লায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের উপর শান্তি-সুনীতির গুলি, অ্যান্ডারসনের উপর আক্রমণ, রাইটার্সের অলিন্দ যুদ্ধে বিনয় বাদল দীনেশের আত্মাহুতি – সর্বত্র তিনি হয় নেপথ্য নায়ক , নতুবা পরামর্শদাতা, আবার কোথাও বিপ্লবীদের সাহায্যকারী ও আশ্রয়দাতা।

সুভাষচন্দ্র ১৯৪২ সালের ১৬/১৭ জানুয়ারি সঙ্গোপনে তাঁর অভীষ্ট লাভের উদ্দেশ্যে নিরুদ্দেশ যাত্রা শুরু করলেন। যার নেপথ্য নায়কও এই সত্যরঞ্জন। নেতাজি তাঁকে বলেছিলেন ” We shall live together , die together” । মহানিষ্ক্রমণের পর্বটি নেতাজী বা সত্যরঞ্জন কেউই নিজের মুখে বলে যাননি তাই অনেক যথার্থ তথ্য অজানাই রয়ে গেছে।

মহানিষ্ক্রমণের পর নেতাজীর সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করার এবং তাঁর নির্দেশকে বাংলায় গুপ্ত সংগঠনের মাধ্যমে কার্যকরী করার গুরুদ্বায়িত্ব পান তিনি। নেতাজী সম্বন্ধে তাঁর অসামান্য রচনা ‘An Adventure in Life ‘। 

তাঁর মতে কোনও প্রচলিত আইডিয়োলজির আটপৌরে নক্সার চার-সীমায় নেতাজীর জীবনদর্শনকে বাঁধা যায় না। গ্রেপ্তারের পর তাঁকে অর্পণ করা হয় সামরিকবাহিনীর হেফাজতে – যারা তাঁকে ল্লীর লালকেল্লায় ভূগর্ভস্ত প্রকোষ্ঠে অমানুষিক অত্যাচার, অনাহার ও অর্ধাহারে রেখে ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে হাজির করে কয়েক দফায়। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি বিশ্বাস করেছিলেন যে নেতাজী ফিরে আসবেন এবং আবার যোগাযোগ হবে। 

আমাদের দুর্ভাগ্য তাঁর মত সৎ, নিঃস্বার্থ, বলিষ্ঠমনা দেশপ্রেমিকরা আজ হারিয়ে গেছেন, তাঁরা আজ রূপকথার গল্প, নামও অনেকে জানেন না।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Satya Ranjan Bakshi, #Bengal History

আরো দেখুন