পুলিসকর্মীর নাতনি জেএমবি জঙ্গি! গ্রেপ্তার বাংলাদেশে
চার বছর আগে ধনেখালির বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল আয়েশা জন্নত মোহনা। বাংলাদেশে গ্রেপ্তার হওয়া সেই নব্য জেএমবি জঙ্গির আসল নাম প্রজ্ঞা দেবনাথ। শুক্রবার ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) হাতে গ্রেপ্তার হয় ধনেখালির এই যুবতী। সেই খবর জানাজানি হওয়ার পর অবাক তার প্রতিবেশীরাও।
খবর ছড়িয়ে পড়ায় শনিবার সকালে ধনিয়াখালি থানার পশ্চিম কেশবপুরের সদগোপ পাড়ায় যুবতীর ভাঙাচোরা বাড়িতে ভিড় করেন প্রতিবেশীরা। তাঁরাই বাড়িতে জানান, নিখোঁজ মেয়ে জঙ্গি হয়ে গিয়েছে। খবর শুনে তার মা গীতা দেবনাথ বলেন, ঠোঙা বানিয়ে, কাপড় সেলাই করে মেয়েকে বড় করেছি। আর আজ তার জন্যই জঙ্গির মায়ের তকমা পেতে হল। এর থেকে ওর মরে যাওয়া ভালো ছিল।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালে সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতা যাওয়ার নাম করে প্রজ্ঞা বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। সে আর ফেরেনি। সেসময় সে ধনেখালির শরৎ ইনস্টিটিউশনের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিল। বাড়ি থেকে সে পরিকল্পনা করেই বেরিয়েছিল। পরিবারের লোকজন পরে তার প্রমাণ পেয়েছেন। নিজের যাবতীয় ছবি, নথিপত্র সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিল। তার পরিচয় প্রকাশ পেতে পারে এমন কোনও তথ্যই রেখে যায়নি। দীর্ঘ চারবছর বাড়ির সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই আয়েশার। ২০১৬ সালে ডিসেম্বর মাসে শেষবার মা বাবার সঙ্গে কথা হয়েছিল। তার বাবা প্রদীপ দেবনাথ মুসলিম ধর্ম ত্যাগ করে মেয়েকে ফিরে আসতে বলেছিলেন। কিন্তু সে রাজি হয়নি। প্রদীপবাবু বলেন, ওকে আমরা ত্যাগ করেছি। কিন্তু এভাবে ওর খবর পেতে হবে ভাবিনি। ও যদি অপরাধী হয় তবে শাস্তি হোক।
প্রজ্ঞার দাদু পুলিসকর্মী ছিলেন। পুলিসকর্মীর নাতনি যে জঙ্গি হতে পারে তা ভাবতে পারছেন না প্রতিবেশীরা। গীতাদেবী বলেন, চুপচাপ, শান্ত একটা মেয়ে কীভাবে জঙ্গি হতে পারে! ও বাড়ি ছাড়ার সময় থেকেই সমস্ত বিষয়ে আমরা অবাক হয়েছি। মেয়েটা স্বেচ্ছায় পুজো আচ্চা করত। মুসলিম ধর্ম নিয়ে কোনও কথাই কখনও বলতে শুনিনি। অথচ ঢাকা থেকে ফোন করে বলল, তোমাদের ধর্ম আমার ভালো লাগে না। মেয়ের সঙ্গে তো কারও তেমন ঘনিষ্ঠতা ছিল না। সোশ্যাল মিডিয়াতেও যোগাযোগ ছিল না। মেয়ের কাছে একটি সাধারণ ফোন ছিল। মা বলছেন, এর থেকে ওর মরে যাওয়া ভালো ছিল। ধনিয়াখালি থানার পুলিস ইতিমধ্যেই তদন্ত করেছে। এদিন জঙ্গিনেত্রীর ভাই ও বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পুলিস জানিয়েছে, ২০১৬ সালে একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেছিল ওই পরিবার। পরে তা তুলেও নেওয়া হয়। মেয়েটির সঙ্গে পরিবারের কোনও যোগাযোগ ছিল না। জানা গিয়েছে, বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির মহিলা শাখার শীর্ষ নেতা ছিল প্রজ্ঞা। ২০১৬ সালে নিজের গ্রাম ছেড়ে বাংলাদেশে চলে যাওয়ার পর বাড়ির সঙ্গে তার আর কোনও যোগ ছিল না। সেই মেয়ের জঙ্গিযোগের খবরে পুলিসও নড়েচড়ে বসেছে। কারণ ধনিয়াখালির সঙ্গে জঙ্গিযোগ এই প্রথম নয়। দশঘড়ার বাসিন্দা দুর্গাপুরের কাঁকসায় ইঞ্জিনিয়ারিং পাঠরত আশিক আহমেদকে ২০১৬ সালেই এনআইএ গ্রেপ্তার করেছিল। তার সঙ্গে আইএস জঙ্গিদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। এমনকি তারকেশ্বর মন্দির উড়িয়ে দেওয়ার ছক কষেছিল ওই ছাত্র। এবার প্রজ্ঞার জঙ্গিযোগের খবরে উদ্বেগ বাড়ছে পুলিসের।