বটুকেশ্বর দত্ত – ইতিহাসে উপক্ষিত এক স্বাধীনতা সংগ্রামী
বটুকেশ্বর দত্ত বাংলার ছেলে হলেও উচ্চশিক্ষার জন্য কানপুরে যান। সেখানেই স্নাতক হন। সেই সময়ই আলাপ হয় ভগত সিংয়ের সঙ্গে। বিবাহ থেকে বাঁচতে কানপুরে পালিয়ে এসেছিলেন পঞ্জাবের সান। ভগত সিং ও অজয় ঘোষের সঙ্গে তত্কালীন হিন্দুস্তান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়নের সদস্যপদ গ্রহণ করেন বটুকেশ্বর দত্ত। পরে যুক্ত হন হিন্দুস্তান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে। যতীন্দ্রনাথ দাসকে সংগঠনে তিনিই নিয়ে এসেছিলেন।
পাবলিক সেফটি ও ট্রেড ডিসপুট বিলের প্রতিবাদে সংসদে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা। এই হামলার জন্যে নির্বাচন করা হয় বটুকেশ্বর দত্ত ও ভগত সিংকে। সংসদে জোড়া বোমা ফাটানোর পর দুই তরুণ নির্ভয়ে দেন ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগান। ইংরেজ পুলিস সামনে চলে এলেও নিজের জায়গায় অনড় থাকেন এই দুই বীর, ওড়ান কালা বিলের কাগজ। গ্রেফতার হন তাঁরা।
কালাপানির সাজা হয় বটুকেশ্বরের। আন্দামান সেলুলার জেলে স্থানান্তরিত করা হয় তাঁকে। লাহোর বিস্ফোরণ মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে পোক্ত প্রমাণ মেলেনি, মুক্তি দিতে বাধ্য হয় ইংরেজ সরকার।
কিন্তু এই বাঙালি বীরের নাম দেশ স্বাধীন হওয়ার পর, উঠে আসেনি ইতিহাসের পাতায়, জোটেনি ন্যূনতম সম্মান। একটি সরকারি চাকরিও জোটেনি, সফলতা আসেনি ব্যবসাতেও। অভাবেই কাটে সারাটা জীবন। ধরা পড়ে যক্ষা রোগ। পটনার হাসপাতালে জীবনের সাথে লড়াই শুরু হয় অসহায় বটুকেশ্বরের।
বিহারের এক সাংবাদিক তাঁকে নিয়ে খবর করে বলেছিলেন,’বটুকেশ্বর দত্তের মতো বিপ্লবীর এদেশে জন্ম নেওয়াই বৃথা। ঈশ্বর ভুল করেছে’। হুশ ফেরে কেন্দ্রীয় সরকারের। বটুকেশ্বরের সাথে সাক্ষাৎ করেন তত্কালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গুলজারিলাল নন্দা। অর্থ সাহায্য পান পঞ্জাব সরকার থেকেও। কিছুদিন পরে ধরা পড়ে ক্যানসার। দিল্লিতে নিয়ে আসা হয় বটুকেশ্বরকে। ক্যান্সারের শেষ পর্যায় তখন। আক্ষেপ করে বলেছিলেন,’ভাবতেও পারিনি হুইল চেয়ারে বসে দিল্লিতে আসব।’
১৯৬৫ সালে ২০ জুলাই নীরবেই চলে যান বর্ধমানের বীর সন্তান বটুকেশ্বর দত্ত। শেষ ইচ্ছা মেনে ফিরোজপুরে ভগত সিং, রাজগুরুর সমাধির পাশে সমাহিত করা হয় তাঁকে। এই বঙ্গসন্তান দেশ মাতৃকার জন্যে নিজের জীবন, যৌবন সব উৎসর্গ করলেও, স্বীকৃতি চিরকালই রয়ে গেল তাঁর অধরা। ইতিহাস কখনোই চিনল না এই বীরকে।