নেটিজেনদের বাড়াবাড়িতে বিরক্ত টলিপাড়ার নতুন প্রজন্ম
যত দিন যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায় একে অপরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেওয়া যেন বেড়েই চলেছে। ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে অশালীন ভাষার প্রয়োগ তো আছেই, কারও বক্তব্যে ভিন্নমত হলেই প্রাণে মারার হুমকি বা আত্মহত্যার পরামর্শও দিচ্ছেন কেউ কেউ। সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যার পর সেলিব্রিটিদের উপর এই আক্রমণ যেন আরও বেড়েছে। আলিয়া ভাট, সোনম কাপুর, মহেশ ভাট, করণ জোহর, সলমন খান তালিকাটা দীর্ঘ। এবার সেই আঁচে পুড়ল টলিউডের ঘরও। সম্প্রতি স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়কে সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাসিড আক্রমণ ও ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়। পুরোটাই ঘটেছে একটি ভুয়ো খবরকে কেন্দ্র করে। ওই খবরে দাবি করা হয়েছিল যে, সুশান্তের মৃত্যুর পর স্বস্তিকা নাকি আত্মহত্যাকে ‘আজকালকার ফ্যাশন’ বলে মন্তব্য করেছেন। আর এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় লাগাতার এই বঙ্গ অভিনেত্রীকে ট্রোল করা শুরু হয়। অবশেষে অভিনেত্রী কলকাতা পুলিসের সাইবার অপরাধ দমন শাখায় অভিযোগ জানান। তারপর ওই ভুয়ো খবর যিনি পোস্ট করেছিলেন এবং যিনি অভিনেত্রীকে হুমকি দিয়েছিলেন— দু’জনকেই পুলিস গ্রেপ্তার করে। সেই খবর সোশ্যাল মিডিয়াতে স্বত্বিকা নিজেই জানিয়েছেন। পাশাপাশি ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ায় কলকাতা পুলিসকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।
প্রত্যেকেরই একটু ধৈর্য্য রাখা উচিত: ঈশা
বুঝতে পারছি, ধীরে ধীরে আমরা খুবই খারাপ একটা সময়ের দিকে এগিয়ে চলেছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের নামে হুমকি চলতে পারে না। এটা তো জবরদস্তি! চারিদিকে এই এক সমস্যা দেখে আমি বীতশ্রদ্ধ। তাই আমি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে এবার কিছুদিন দূরে থাকতে চাই। তাছাড়া আমাদের গালাগাল করাটা তো সহজ। কারণ সেলিব্রিটিরা সাধারণত সব বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে পারেন না। তার উপর একটা ভুয়ো খবরের সত্যতা বিচার না করেই কাউকে এইভাবে হেনস্তা করা অযৌক্তিক। আমার তো মনে হয় সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্তব্য প্রকাশ করতে গিয়ে প্রত্যেকেরই একটু ধৈর্য রাখা উচিত।
মানুষ পারস্পরিক সম্মানবোধ হারাতে বসেছে সৌরসেনী
সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষকে ‘ছোট’ করা দেখছি এখন নতুন ট্রেন্ড। সুশান্তের জন্য বিচার তো আমরা সবাই চাই। সেই বিচারের নামে কিন্তু আমি কাউকে সোশ্যাল মিডিয়ায় গালিগালাজ করতে পারি না বা খুনের হুমকি দিতে পারি না। ট্রোলিং পর্যন্ত ঠিক ছিল। এখন তো দেখছি সোজা খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আজকে স্বস্তিকাদির সঙ্গে হয়েছে মানে কাল আমার সঙ্গেও এরকম হতে পারে। ভাগ্যক্রমে এখনও পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাকে এরকম ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়নি। কিন্তু ভবিষ্যতে সেটা হলে আমার পরিবারের সুরক্ষা নিয়ে আমার একটা ভয় থেকেই যাবে। প্রচারের আলোয় থাকি মানে কি আমাদের কোনও ব্যক্তিগত জীবন নেই? আমার তো মনে হয় ধীরে ধীরে মানুষ পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ হারাতে বসেছে।
‘ব্যক্তিগত স্বাধীনতা’ কারও ক্ষতি করতে পারে না সোহম
এর থেকে খারাপ আর কিছু হতে পারে না। মনুষ্যত্ব আর যে কত নীচে নামবে সেটাই ভাবছি। একদিকে মত প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে বিদ্যুতের বিল নিয়ে যেখানে মানুষের কণ্ঠ হয়ে উঠছে সোশ্যাল মিডিয়া, সেখানে কাউকে খুনের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে! এটা দেখে আমি সত্যিই হতাশ। ব্যক্তির কাজের উদ্যাপনের মাধ্যমেই তাঁকে শ্রেষ্ঠ শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া সম্ভব। এইভাবে কাউকে হুমকি দেওয়া সেই মানুষটাকে অপমান করারই সমার্থক। ‘ব্যক্তিগত স্বাধীনতা’র নামে অন্য কারও ক্ষতি করা যায় না। এই করোনা পরিস্থিতিতে আমার মনে হয়, আমাদের প্রত্যেকেরই একটু মাথা ঠান্ডা রাখা উচিত। প্রশাসনের উপর আস্থা রাখা উচিত। আমি এবং আমার মুম্বইয়ের কিছু বন্ধু সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর কাছে অনুরোধ করেছি, যাতে সেখানে অশালীন মন্তব্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে চিহ্নিত করা যায় এবং ফ্ল্যাগড করে দেওয়া যায়।
খুব তাড়াতাড়ি ফেসবুক ছাড়ব ঋতব্রত
সোশ্যাল মিডিয়া এখন আনসেন্সরড একটা জায়গায় পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে ফেসবুক। বাক স্বাধীনতা প্রত্যেকেরই রয়েছে। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় আমি কী আচরণ করব, সেটা কেউ নির্ধারণ করে দেবে এটা মানা যায় না। কারও সঙ্গে মতের অমিল হতেই পারে। কিন্তু তার মানে কি একে অপরের প্রতি অভব্য আচরণ করা বা হুমকি দেওয়া! কোনটা উচিত বা কোনটা অনুচিত শেখানোর জন্য আপনি কে মশাই? শুরু থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার আপত্তি। কিন্তু কাজের জন্য একটু আধটু ব্যবহার করতেই হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোলিং, বডি শেমিং, হুমকি ইত্যাদি দেখে দেখে আমি রীতিমতো ক্লান্ত। খুব তাড়াতাড়ি ফেসবুক ছেড়ে দেব।
সত্যি কথা বলার মধ্যেও একটা সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকে উজান
জানি না এটা নিয়ে বিশদে আমার কিছু বলা উচিত কিনা। তবে, একটাই জিনিস বলতে চাই যে, শুধু সেলিব্রিটি নয় সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোলিংয়ের শিকার যে কেউই হতে পারেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় বাকস্বাধীনতার আমি বিরুদ্ধে নই। কেন না সাবলীলভাবে সত্যি কথা বলার মধ্যেও একটা সৌন্দর্য লুকিয়ে রয়েছে। কিন্তু সেই মন্তব্য যেন শালীনতার মাত্রা না অতিক্রম করে সেটা অবশ্যই দেখা উচিত। আর সেটা যাঁরা করতে পারবেন না, আমার মতে তাঁদের সোশ্যাল মিডিয়ায় থাকার কোনও অধিকার নেই।