ছোট শহর এবং গ্রামে বাড়ছে বিক্রিবাট্টা, চাঙ্গা অর্থনীতি
ক্রমেই লকডাউন থেকে বেরিয়ে ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি। আনলক-১ ও ২ পর্বে জুন, জুলাই মাসে বিক্রিবাট্টার ছবিটা অন্তত সেকথাই বলছে। মেট্রো কিংবা বড় শহরগুলির তুলনায় অপেক্ষাকৃত ছোট শহর এবং গ্রামে অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সমীক্ষা এবং রিপোর্টে এরকমই বার্তা পেয়েছে অর্থমন্ত্রক। কৃষি, অটোমোবাইল, যন্ত্রাংশ, ক্ষুদ্র শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদি সেক্টরের বাণিজ্যিক লেনদেন এবং চাহিদা জোগানের পরিসংখ্যান জমা পড়েছে মন্ত্রকে। তা থেকে জানা যাচ্ছে, জুন মাসেই গ্রামাঞ্চল ও ছোট শহরে ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস মিলেছিল। জুলাই মাসে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে স্বাভাবিকতায় ফেরার এই প্রয়াস।
গ্রামীণ অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে চাঙ্গা হওয়ার মাধ্যম হিসেবে কয়েকটি কারণ সামনে আসছে। প্রথমত, এ বছর অনেক বেশি পরিমাণ চাষযোগ্য জমিতে ফসল উৎপাদন হয়েছে। বর্ষা ইতিমধ্যেই যথেষ্ট গতি পেয়েছে। যা এখনই টের পাওয়া যাচ্ছে। ফলে এবারে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে খরিফ শস্য উৎপাদনের ব্যাপারে আশাবাদী সরকার। নভেম্বর মাস পর্যন্ত ৮০ কোটি গরিব মানুষকে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। সরকারি শস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে। যার ফলস্বরূপ টাকা আসছে গ্রাম্য ভারতের হাতে। দ্বিতীয়ত, লকডাউনের আরও একটি সুফল পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরে আসা। দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে বড় শহরগুলিতে কারখানা কিংবা নির্মাণ শিল্পে কাজ করতে যায় লক্ষ লক্ষ শ্রমিক। তারা ফিরে আসায় কৃষিকাজ, গ্রামীণ শিল্প ও পরিকাঠামো নির্মাণের কাজে অনেক বেশি কর্মী পাওয়া যাচ্ছে। ফলে উৎপাদনও বেশি হচ্ছে।
সরকারি সূত্রে আরও বলা হয়েছে, বিগত তিন মাসে আর্থিক প্যাকেজ প্রদানে সবথেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল কৃষি বিপণনে। তার ফল এখন মিলতে শুরু করেছে। সেই কারণে বিভিন্ন কৃষি উপকরণ উৎপাদনকারী সংস্থার প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে, এপ্রিল ও মে মাসের তুলনায় ট্রাক্টর বিক্রির পরিমাণ কারও ২৩ শতাংশ, কারও বা ১২ শতাংশ বেড়েছে। একইভাবে জুন ও জুলাই মাসের জিএসটি সংগ্রহের পরিমাণও শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামীণ ভারতে অনেক বেশি। বিগত এক মাসে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, হরিয়ানার গ্রাম-নির্ভর এলাকা থেকে জিএসটি জমা পড়ার হার ২৪ থেকে ২৮ শতাংশ বলে জানা গিয়েছে। তুলনায় দিল্লি ও গুজরাতের শহরাঞ্চলে যা অনেকটা কম।
অর্থমন্ত্রক সূত্রে খবর, স্কুটার, টু-হুইলারের পাশাপাশি ট্রাক্টর, ট্রেলারের মতো কৃষি উপকরণের চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে গ্রামাঞ্চলে। যা গ্রাম ও ছোট শহরের অর্থনীতিতে ইতিবাচক সাড়া ফেলার অন্যতম লক্ষণ। এই প্রবণতার নেপথ্যে কিন্তু রয়েছে অন্য একটি কারণ। তা হল, গ্রাম্য এলাকা ও ছোট ছোট শহরগুলিতে করোনার সংক্রমণ তুলনামূলকভাবে কম। এপ্রিল থেকে গ্রামীণ অর্থনীতি, শিল্প ও পরিকাঠামো নির্মাণকে লকডাউনের আওতার বাইরে রাখার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। পরবর্তীকালে সংক্রমণের প্রবণতা মূলত শহরাঞ্চলেই বেড়েছে। ফলে বিগত দু’মাস ধরে কোনও ব্যাঘাত ছাড়াই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে গ্রামের অর্থনীতি। সমীক্ষা অনুযায়ী, এপ্রিল ও জুন মাসে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ক্ষেত্রে বস্ত্র ও চর্ম ইউনিটে উৎপাদনের হার ছিল অনেক কম। জুলাই মাসে সেই পরিস্থিতিতে সামান্য হলেও উন্নতি চোখে পড়েছে। রপ্তানির ক্ষেত্রে বরাত আবার বাড়ছে। যদিও এই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উৎপাদন ইউনিটগুলিতে আগামী তিন মাস কোনও নতুন কর্মী নিয়োগ হবে না বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু এই ক্রমোন্নতির ধারা বজায় থাকলে, আগামী দিনে আবার চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক নেওয়ার পথ সুগম হবে।
ফাস্ট মুভিং কনজিউমার গুডস (এফএমসিজি) বিভাগে চাহিদা বৃদ্ধির হারে শহরাঞ্চলের থেকে গ্রামীণ ভারত অনেক এগিয়ে রয়েছে বলে মন্ত্রক সূত্রে খবর। করোনা ভাইরাসের জেরে গ্রামাঞ্চলে সতর্কতা ও পরিচ্ছন্নতার প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। তাই সেই পণ্যগুলির চাহিদা বাড়ছে। সুতরাং গ্রাম-ছোট শহর অর্থনীতির সুসংবাদ বয়ে আনবে, সেই প্রত্যাশার পারদ চড়ছেই।