থিয়েটার থেকে আসা এক অভিনেতা যিনি কাঁপিয়েছেন বলিউড
থিয়েটার থেকে আসা বলিউডের এক নক্ষত্রের নাম নাসিরুদ্দীন শাহ। মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমা থেকে আলাদা ধরনের ছবিতে অভিনয় করে দর্শকের হৃদয়ে দাগ কেটেছেন তিনি। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলোর মধ্যে আছে আক্রোশ, নিশান্ত, মিরচ মাসালা, স্পর্শ, ত্রিকাল, আলবার্ট পিন্টোকো গুসসা কিউ আতা হ্যায়, ডার্টি পিকচার, ইশকিয়া ও আরও অনেক।
এছাড়া ছোটপর্দায় ও মঞ্চ নাটকে তিনি প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তার মঞ্চনাটকের দল ‘মোটলে প্রোডাকশনস’ তাদের প্রথম নাটক স্যামুয়েল বেকেটের ‘ওয়েটিং ফর গডো’ -র মাধ্যমেই প্রশংসা কুড়াতে শুরু করে। অভিনয় তার কাছে অন্য সবকিছুর চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থেকেছে সব সময়। মূলত এ কারণেই তাকে বলা হয় ভারতের থিয়েটার থেকে উঠে আসা বলিউড নক্ষত্র।
নাসিরুদ্দীনের জীবনও তার সিনেমাগুলোর মতো অসাধারণ আর বৈচিত্র্যময়। পারিবারিক জীবনে বাবার সঙ্গে তার বেশ দূরত্ব ছিল আর সে কথা তার আত্মজীবনী থেকেই জানা যায়। বেশীরভাগ বাবা-মার মতো তার বাবাও মেনে নিতে চাননি লেখাপড়ার প্রতি তার অনাগ্রহ এবং খারাপ প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফল। তিনি চেয়েছিলেন পড়াশোনা করে নাসির কিছু করুক, জীবনে বড় কিছু হোক।
তাদের মধ্যকার সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে যখন নাসির প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া আর সামনে এগিয়ে নিয়ে না গিয়ে আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটির নাট্যমঞ্চের সঙ্গে জড়িয়ে যান। কিন্তু নাসিরুদ্দীন নিজেই উল্লেখ করেছেন, তার পিতা বকাবকি করা ছাড়া কোনোদিন তার ওপর একটা আঙুলও তোলেননি। তা ছাড়া আত্মজীবনীতে তিনি স্বীকার করেন, নিজের সন্তানদের মাধ্যমেই তিনি এখন তার বাবার দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে পারেন।
তার ঘটনাবহুল জীবনের সবচেয়ে নাটকীয় পর্ব শুরু হয় যখন ১৯-২০ বছরের নাসির পরিবারের সবার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে ৩৬ বছরের মানারা শিকরিকে বিয়ে করেন। তার প্রথম স্ত্রী মানারা শিকরি পারভিন মুরাদ নামেও বেশ পরিচিত। তিনি ছিলেন একজন তালাকপ্রাপ্ত মহিলা এবং প্রথম স্বামীর ঘরে তার একাধিক সন্তান ছিল।
নাসির ও পারভিনের বিয়ের এক বছরের মধ্যেই তাদের ঘর আলো করে আসে একমাত্র সন্তান, তাদের কন্যা হিবা শাহ। কন্যার জন্মের এক বছরের মধ্যেই ঘর ভেঙে যায় পারভিন-নাসির দম্পতির। কিন্তু আগের বিয়ের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে পারভিন যে পরিমাণ ক্ষতিপূরণ নাসিরের সঙ্গে বিয়ের সময় নির্ধারণ করেছিলেন তা পূরণ করে জীবন নতুন করে শুরু করতে অভিনেতা নাসিরের ১২ বছরের বেশী সময় লেগে যায়।
পারভিনের সঙ্গে সম্পর্কে যখন ভাঙনের সুর বেজে উঠেছিল, তখন ১৯৭০ সালে নাসির স্বনামধন্য অভিনেত্রী দীনা পাঠকের মেয়ে রত্না পাঠকের প্রেমে মজেন। ১৯৮২ সালে নাসির ও রত্না বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। এ দম্পতি এখন তাদের দুই ছেলে ইমাদ শাহ ও ভিভান শাহ এবং নাসির ও পারভিন দম্পতির মেয়ে হিবার সঙ্গে বোম্বেতে থাকেন।
ভারতীয় চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য ভারত সরকার তাকে ১৯৮৭ সালে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ সম্মাননা পদ্মশ্রী ও ২০০৩ সালে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা পদ্মভূষণ পদকে ভূষিত করে। স্পর্শ ও পার ছবিতে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা এবং ইকবাল ছবিতে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এ ছাড়া তিনবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।