২১শের অচেনা ধর্মতলা
হাওড়া-শিয়ালদহে পিলপিল করে নামছে মানুষ। স্টেশনের কাছেই বা শহরের স্টেডিয়ামে হাজার হাজার কর্মীর লঙ্গরখানা। ধর্মতলা মোড়ে বিশাল মাপের মঞ্চ, রাস্তায় পুলিসকর্তাদের সাজসাজ রব। আর সভার পরদিন জনপ্লাবন, জনস্রোত, জনসুনামি ইত্যাদি নানা অলঙ্কারে সাজানো মমতার অগ্নিঝরা ভাষণ। এই সব নিয়েই তো ২১ জুলাই। কিন্তু, এবার কোথায় কী?
প্রাণঘাতী করোনা মহামারীর দাপটে সব যেন এলোমেলো। কয়েক ঘন্টা আগেও ধর্মতলায় গিয়ে বোঝার উপায় নেই, এই জায়গাটাই লাখো মাথার ভিড়ে হারিয়ে যেত। সোমবার ঘড়ির কাঁটায় তখন ১টা ২০ মিনিট। ধর্মতলা থেকে সরকারি-বেসরকারি বাস ছুটে চলেছে বিভিন্ন গন্তব্যে। বাসের কন্ডাক্টর থেকে, দামি গাড়ির কাচ নামানো যুবক ঘাড় ঘোরাচ্ছেন আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের মূর্তির দিকে। যেন হাতড়াচ্ছেন আগের বছরের স্মৃতিটা। সিগনালে বাস থামতেই কন্ডাক্টর বলতে থাকলেন, কী বড় স্টেজ হতো! আগের দিন দুপুর থেকে এ রাস্তায় ভিড় শুরু হয়ে যেত। বাস চলাচল স্বাভাবিক হতো পরদিন কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর বিকেল থেকে।
এদিন ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিস কর্মী থেকে পথচারীদের মুখে মুখে শুধু আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল ২১ জুলাই। সকলের কাছেই জায়গাটি অচেনা ঠেকছে। ধর্মতলার মুখে জনপ্রিয় মিষ্টির দোকানের ধার ঘেঁষে ফুটপাতের উপর রয়েছে শেখ সেলিমের চশমা-সানগ্লাসের দোকান। তাঁর কথায়, ৩০ বছর ধরে দোকান চালাচ্ছি। কত ২১ জুলাইয়ের সাক্ষী। কিন্তু এবছরটাকে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। চশমা-সানগ্লাসের বদলে বিক্রি করতে হচ্ছে মাস্ক, স্যানিটাইজার। পাশেই ষাটোর্ধ্ব শওকত আলি বিক্রি করেন রিস্টব্যান্ড। জানালেন, ২১ জুলাইয়ের দু’দিন আগে থেকেই এখানে নিরাপত্তার কড়াকড়ি শুরু হয়ে যেত। সমাবেশের দিন দোকান বন্ধ রাখতে হতো। তবুও সকাল সকাল চলে আসতাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণ শুনতে।
এবার অবশ্য কাউকে দোকান বন্ধ রাখতে হচ্ছে না। করোনার মোকাবিলায় সমাবেশ হবে ভার্চুয়াল। মূল মঞ্চের পাশেই থাকত আরও একটি ছোট মঞ্চ। আর সংবাদ মাধ্যমের জন্য আলাদাভাবে মঞ্চ তৈরি হতো। ঠিক সেখানেই ফুটপাতের উপর স্যান্ডউইচের দোকানে আসা দুই যুবক আলোচনা করছেন, ২১ জুলাই আর ধর্মতলা সমার্থক। প্রত্যেকটা দল একটা দিন বড় সমাবেশ করতেই পারে। আশা করা যায় ২০২১-এ করোনা মুক্ত হয়ে আবার ধর্মতলায় সভা হবে। এই দিনটায় টুপি, মমতার ছবি, চাবির রিং, পোস্টারের পসরা সাজিয়ে সভামঞ্চের পাশে অনেকেই বসতেন। করোনার আতঙ্কে এবার তাঁদেরও ঘরবন্দি থাকতে হচ্ছে।