নৌকা চলছে মালদা শহরের বুকে
ছবি দেখলেই মনে পড়ে যেতে বাধ্য ৯৮-এর বন্যার কথা। গ্রামাঞ্চল তো বটেই, সেবার নৌকা চলেছিল মালদা শহরের বিভিন্ন রাজপথেও। ২০২০ তে এসে যেন আবার ঠিক সেই দিনগুলিকেই চোখের সামনে দেখতে পেলেন খোদ মালদা শহরের বাসিন্দাদেরই একাংশ। তবে এবার কিন্তু আর বন্যার জলে নয়, বরং লাগাতার বৃষ্টির জলেই রাস্তা ডুবে রয়েছে ইংরেজবাজার পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক জায়গায়। ফলে রাস্তা পারাপার করতে শিশু-বৃদ্ধদের ভরসা নৌকা। এমনকি নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীও নৌকায় করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন জলবন্দি বাসিন্দারা।
এমনিতে করোনা আবহে লকডাউন। তাই খুব একটা বাড়ি থেকে বের হতে হচ্ছে না সকলকে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস থেকে শুরু করে ওষুধপত্র কিনতে চরম সমস্যায় পড়তে হচ্ছে স্থানীয় মালঞ্চপল্লি সহ আশেপাশের এলাকার বাসিন্দাদের। নীচু এলাকায় অধিকাংশ বাসিন্দার ঘরে এখনও জল ঢুকে রয়েছে। বাধ্য হয়ে ঘরের মেঝেতে জমা জলের উপর ইট পেতে চলাফেরা করছেন তারা। প্রায় দুই মাসের বেশি সময় ধরে জমে থাকা জল থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে। মাঝেমধ্যেই ঘরের জমা জলে দেখা দিচ্ছে সাপ। উপদ্রব বাড়ছে বিভিন্ন পোকামাকড়ের। ফলে আতঙ্কে রাতের ঘুম উড়েছে অনেকেরই। বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় বৃষ্টির জল জমে থাকলেও এখনও কোনও পদক্ষেপ করেনি পুরকর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসন। বহুবার পুরসভার তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল জলবন্দি বাসিন্দাদের। কিন্তু এখনও জমা জল নিকাশ করার কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।
ইংরেজবাজার পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মালঞ্চপল্লি এলাকায় বিগত কয়েক বছর থেকেই বৃষ্টির জল জমা নিয়ে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। বর্ষার আগে একটু বৃষ্টি হলেই জল জমে যায় এই এলাকায়। মালঞ্চপল্লি সহ নেতাজি পার্ক, কৃষ্ণপার্কের আশেপাশে বৃষ্টির জল এখনও জমে রয়েছে। এই এলাকার প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ বৃষ্টির জলে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন। বৃষ্টির জলের সঙ্গে নোংরা আবর্জনা এসেও জমা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, তিন চার বছর আগে এই সমস্যা ছিল না। রাস্তায় জল জমলে দুই-একদিনের মধ্যে নেমে যেত। কিন্তু এলাকায় বেআইনিভাবে বিল ভরাট শুরু হয়েছে। যার জেরে নোংরা জল আটকে পড়ছে। তার থেকেই সমস্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত দুই বছর থেকে বর্ষা নামলেই ঘরবন্দি হয়ে পড়তে হয় তাঁদের। যদিও পুরকর্তৃপক্ষের দাবি, ইতিমধ্যে একটি ক্যানাল খননের কাজ শুরু হয়েছে। দ্রুত জল নিকাশ করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এক বাসিন্দা বর্ণালি দাস জানান, আগে এই সমস্যা ছিল না। জল জমলেও বেরিয়ে যেত। গত দুই বছর ধরে জলবন্দি হয়ে পড়ছি আমরা। আমরা কাউকে কিছু বলতে পারছি না। চোখের সামনে ট্র্যাক্টরে করে মাটি ফেলা হচ্ছে বিলে। ভরাট হচ্ছে বিল। আর তার থেকেই আমাদের এলাকায় জল জমছে। আমরা দুর্ভোগে পড়ছি। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ি কাউন্সিলার পরিতোষ চৌধুরি জানান, আমরা দ্রুত জল নিকাশির ব্যবস্থা করছি। ক্যানালে কাজ চলছে। আর্থমুভার দিয়ে ড্রেন পরিষ্কার ও ক্যানালের কাজ শুরু হয়েছে। মানুষ সমস্যায় রয়েছে, সেই ভেবেই দ্রুত কাজ করানো হচ্ছে। ইংরেজবাজার পুরসভার প্রশাসক তথা বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ জানান, বর্তমান বিদায়ি কাউন্সিলারের আগে যিনি কাউন্সিলার ছিলেন তার নেতৃত্বে এলাকায় বিল ভরাট করা হয়েছিল। তার জেরেই এখন মানুষ সমস্যায় পড়ছে। আমরা ইতিমধ্যে একটি ক্যানাল খননের কাজ শুরু করেছি। আশা করি দ্রুত সমস্যা সমাধান হবে।