জেনে নিন জাতীয় পতাকা ব্যবহারের নিয়মাবলী
স্বাধীনতা দিবসে পতাকা উত্তোলনের পরে বিভিন্ন স্থানে এই প্লাস্টিক পতাকা পড়ে থাকতে দেখা যায় যা দেশের পক্ষে অপমানজনক৷ তাই প্লাস্টিক পতাকা না কেনার জন্য জনসাধারণকে বারবার সচেতন করে থাকে সরকার৷ তবে এরই সঙ্গে জাতীয় পতাকার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বেশ কিছু নিয়ম-কানুনও।
ভারতের জাতীয় পতাকা হল কেন্দ্রে চব্বিশটি দণ্ডযুক্ত নীল “অশোকচক্র” সহ গেরুয়া, সাদা ও সবুজ আনুভূমিক আয়তাকার ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা। ১৯৪৭ সালের ২২ জুলাই গণপরিষদের একটি অধিবেশনে এই পতাকার বর্তমান রূপটি ভারত অধিরাজ্যের সরকারি পতাকা হিসেবে গৃহীত হয়েছিল। পরবর্তীকালে এটি ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের জাতীয় পতাকার মর্যাদা লাভ করে।
ভারতে এই পতাকাটিকে সাধারণত “তেরঙা” বা “ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা” বলা হয়। পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া কৃত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের “স্বরাজ” পতাকার ভিত্তিতে এই পতাকাটির নকশা প্রস্তুত করা হয়েছিল। Prevention of Insults to National Honour Act, 1971 অনুযায়ী, (দেশের জাতীয় প্রতীকগুলিকে) না মানলে শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে৷
ভারতের জাতীয় পতাকা সম্পর্কে এইসব তথ্য অবশ্যই জেনে রাখা উচিতঃ-
১. আইনত, কেবলমাত্র খাদিবস্ত্রেই জাতীয় পতাকা প্রস্তুত করার নিয়ম রয়েছে। প্রস্তুত পদ্ধতি ও নির্দিষ্ট নিয়মকানুন স্থির করা রয়েছে৷
২. জাতীয় পতাকায় তিনটি আয়তকার প্যানেল রয়েছে৷ সবথেকে ওপরে গেরুয়া, মাঝে সাদা এবং নিচে সবুজ রং রয়েছে৷ মধ্যে নীল রংয়ে অশোক চক্র৷
৩. দৈর্ঘ্য-প্রস্থে এর অনুপাত হবে ৩:২
৪. কোনও অবস্থাতেই জল বা মাটিতে এটি যেন না পড়ে৷
৫. পতাকার ক্ষতি হবে এমনভাবে সেটি যেন না রাখা হয়৷
৬. অর্ধেক উত্তোলন যেন না হয়৷ সঠিকভাবে উত্তোলন যাতে হয় সেই ব্যবস্থা করে রাখতে হবে৷ (যদিও কিছু কিছু সরকারি দপ্তরে বিশেষ কোনও ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম হয়ে থাকে)
৭. পোশাকে কোথাও জাতীয় পতাকার ব্যবহার যেন না করা হয়৷
৮. সোফার কুশন, রুমাল, ন্যাপকিন, কোথাও যেন একে ব্যবহার না করা হয় ভুলেও৷
৯. কোনও বাড়িকে ঢাকতে বা মূর্তি আচ্ছাদনে বা কোনও বাহন, ট্রেন, নৌকা, বিমানের আগে পরে নিচে কোথাও যেন একে আচ্ছাদন হিসেবে ব্যবহার না করা হয়৷
১০. কাটা-ছেঁড়া, নোংরা অবস্থায় পতাকাকে যেন উত্তোলন করা না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে৷
১১. গেরুয়া রংটি যেন ওপরের দিকেই থাকে৷ জাতীয় পতাকায় যেন কোনওরকম কিছু লেখা না হয়৷ জাতীয় পতাকায় (প্রজাতন্ত্র দিবস এবং স্বাধীনতা দিবসে উত্তোলনের সময় ফুল ছাড়া) কোনও কিছু না রাখা হয়৷
জাতীয় পতাকার ব্যবহারঃ-
জাতীয় পতাকার ব্যবহার ও প্রদর্শনী সংক্রান্ত একাধিক প্রথা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
- সাধারাণত সূর্যোদয়ের সময় পতাকা উত্তোলিত হয় এবং সূর্যাস্তের সময় তা নামিয়ে ফেলা হয়।
- জাতীয় পতাকা কখনই উলটো অবস্থায়প্রদর্শিত করা, বা উত্তোলন করা অনুচিত।
- প্রথা অনুসারে পতাকাটিকে ৯০ ডিগ্রির বেশি আবর্তিত করা যায় না।
- কোনও ব্যক্তি যেন পতাকাকে উপর থেকে নিচে ও বাঁদিক থেকে ডান দিকে বইয়ের পাতার মতো “পড়তে” পারেন এবং আবর্তিত হওয়ার পরও যেন এই বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন না হয়।
- ছেঁড়া বা নোংরা অবস্থায় পতাকার প্রদর্শনী অপমানজনক। পতাকাদণ্ড বা উত্তোলন রশির ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য; এগুলিকেও যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হয়।
- জাতীয় পতাকা ক্ষতিগ্রস্থ হলে বা নোংরা হলে, এটিকে ফেলে দেওয়া বা অমর্যাদার সহিত নষ্ট করা যায় না।
জাতীয় পতাকাকে অসম্মান করলে (অগ্নিসংযোগ, ছিঁড়লে বা কোনওভাবে অপমান করলে) সেই ব্যক্তির তিন বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে৷ সঙ্গে জরিমানা৷