ইন্ডাস্ট্রির ভার্চুয়াল লড়াইয়ে সামিল কঙ্গনা,তাপসী,কাশ্যপেরা
গত কয়েকদিন ধরে টুইটার যেন রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। এমনিতে কঙ্গনা রানাউত সোশ্যাল মিডিয়াকে তাঁর রণমঞ্চ হিসেবেই ব্যবহার করে থাকেন। এ বার তাঁর বিরোধীরাও ছেড়ে কথা বলছেন না। তাপসী পান্নু, রিচা চড্ডা, স্বরা ভাস্কর এবং অনুরাগ কাশ্যপের সঙ্গে কঙ্গনার যে মৌখিক লড়াই শুরু হয়েছে, তার জল কত দূর গড়াবে সে দিকে তাকিয়ে বলিউড।
গত শনিবার একটি চ্যানেলে কঙ্গনা তাঁর সাক্ষাৎকারে তাপসী, স্বরাদের ‘বি গ্রেড’ অভিনেত্রী হিসেবে অভিহিত করার পর থেকেই দু’দলের মধ্যে মৌখিক লড়াই শুরু হয়ে যায়। প্রথমে মুখ খোলেন তাপসী। ‘‘ক্লাস ইলেভেন-টুয়েলেভের পরীক্ষার রেজ়াল্টের পরে আমারও রেজ়াল্ট বেরিয়েছে শুনছি…’’ টুইট তাপসীর। চুপ থাকেননি স্বরাও, ‘‘আলিয়া ভট্ট আর অনন্যা পাণ্ডের চেয়ে আমাদের বেশি ভাল অভিনেতা বলেছে কঙ্গনা। বিষয়টা কমপ্লিমেন্ট হিসেবেই নিলাম।’’ অন্য দিকে কখনও নরমে, কখনও গরমে জবাব দিয়েছেন কঙ্গনা। তাপসীর উদ্দেশে কঙ্গনা টুইটে লিখেছেন, ‘‘আমি তোমার বিরুদ্ধে বলিনি। তুমি আরও বেশি ডিজ়ার্ভ করো, সেটাই বলেছি।’’ আবার আর একটি টুইটে কঙ্গনার বক্তব্য, ‘‘এই সব অভিনেত্রীরা নিজেদের ইএমআই মেটানোর জন্য স্তাবকতা করে।’’ স্বরা এবং রিচাকে ট্যাগ করে পাল্টা জবাবে তাপসী লেখেন, ‘‘কেউ কেউ আমাদের জন্য সত্যিই চিন্তিত। আমাদের মতো বি গ্রেড শিল্পীদের স্ট্রাগলকে শ্রদ্ধা করার জন্য ধন্যবাদ।’’
দু’পক্ষের কেউই চুপ করে থাকার পাত্র নন। কঙ্গনা অনেক দিন ধরেই ইন্ডাস্ট্রির নেপোটিজ়ম নিয়ে সরব। তিনি যেমন অন্যের পুরনো সাক্ষাৎকার খুঁজে বার করে তা হাতিয়ার করেন, এ বার তাঁর বিরোধীপক্ষ সেটাই করেছে। একটি পুরনো সাক্ষাৎকারে কঙ্গনা স্টারকিডদের সুযোগ পাওয়ার বিষয়টিকে ‘কোটা সিস্টেম’ বলেছেন এবং তা নিয়ে তিনি মোটেও চিন্তিত নন জানিয়েছিলেন। আর একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘‘কে কোন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসছে তাতে কিছু এসে যায় না। শেষ কথা দর্শকই বলবেন।’’ যদিও অভিনেত্রী এখন আত্মপক্ষ সমর্থনের সুরে বলেছেন, ‘‘দশ বছর আগের পুরনো কথা তুলে এখন আক্রমণ করার মানে নেই।’’ তাপসীরা তাতে পাল্টা বিদ্রুপ করতে ছাড়েননি। ‘‘ও নিজের অবস্থান নিয়েই ধোঁয়াশায়,’’ মন্তব্য তাপসীর। এই প্রথম বার নয়, এর আগেও তাপসীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছে কঙ্গনার।
স্বরার সঙ্গেও কঙ্গনার সম্পর্ক ভাল নয়। ‘তনু ওয়েডস মনু রিটার্নস’-এর সেটে পরিচালক স্বরার প্রশংসা করায় সেটে সকলের সামনেই মেজাজ হারিয়েছিলেন অভিনেত্রী। এক নেটিজ়েন টুইটারে সে ঘটনার কথাও তুলে ধরেছেন।
এই বিতর্কে অনুরাগ কাশ্যপ যোগ দিলে বিষয়টি আরও জটিল আকার নেয়। ঘটনাচক্রে তাপসী এবং রিচা দু’জনেই অনুরাগের ঘনিষ্ঠ। এ দিকে কঙ্গনা এবং অনুরাগ রাজনৈতিক দিক থেকেও সম্পূর্ণ ভিন্ন মত পোষণ করেন। এই বিবাদে তাঁর সমর্থন যে তাপসীদের দিকে তা বুঝিয়ে দিতে কসুর করেননি অনুরাগ। তাপসীর সব টুইট তিনি রিটুইট করতে থাকেন। কিন্তু কঙ্গনা ক্রমশ আক্রমণাত্মক হতে থাকলে সরাসরি আসরে নামেন পরিচালক। অনুরাগের কথায়, ‘‘একটা সময়ে কঙ্গনা আমার ভাল বন্ধু ছিল। কিন্তু এই কঙ্গনাকে আমি চিনি না। ‘মণিকর্ণিকা’র পর থেকে দেখছি, অনেক বদলে গিয়েছে।’’
কঙ্গনার কেরিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ছবি ‘কুইন’-এর অন্যতম প্রযোজক ছিলেন অনুরাগ। সে সময়ে তাঁদের হৃদ্যতাও ছিল। অনুরাগের ছবির প্রিমিয়ারে যেতেন কঙ্গনা। রাজনৈতিক শিবির বদলে যাওয়ার পর থেকেই কি বন্ধুত্বে ফাটল ধরল? কঙ্গনার বিরুদ্ধে মুখ খোলার পর থেকে অনুরাগকেও ব্যঙ্গবিদ্রুপ সহ্য করতে হচ্ছে। এক নেটিজ়েন অনুরাগকে ‘মুভি মাফিয়া’ গোষ্ঠীর সদস্য বলে চিহ্নিত করে। তাতে অনুরাগের টুইট, ‘‘আমার ছবি ধর্মা, এক্সেল, যশ রাজ প্রোডিউস করে না। নিজের সংস্থা খুলে কাজ করেছি, যে সংস্থা থেকে ‘কুইন’ প্রোডিউস করেছিলাম, যখন কঙ্গনার হাতে কোনও কাজ ছিল না…’’ অভিনেত্রী পাল্টা জবাব দিতে সময় নেননি। ‘‘এটার মতো আর একটা সত্যি হল, ওই প্রযোজনা সংস্থা থেকে ‘কুইন’-ই একমাত্র হিট ছবি। আমার মতো তোমারও তাই কৃতজ্ঞ থাকা উচিত,’’ লিখেছেন কঙ্গনা। টুইটারে একজন অনুরাগকে পরামর্শ দেয়, ভার্চুয়াল ঝগড়া না করে, কঙ্গনার সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে কথা বলার জন্য। তাতে অনুরাগের জবাব, ‘‘শেষ বার যখন মেসেজ করেছিলাম, তার উত্তর ও টুইটারে দিয়েছিল। এই প্ল্যাটফর্মেই ও আমার সঙ্গে কথা বলে এখন।’’ এই বিতর্কে কঙ্গনার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন হনসল মেহতা, অনুভব সিংহের মতো পরিচালকেরা।
সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যু বিতর্ককে ঘিরে ঝগড়ার সূত্রপাত। কিন্তু এত বিতর্কের মাঝে, সেই বিষয়টি এখন গৌণ হয়ে গিয়েছে। একই বিতর্ককে মাধ্যম করে টুইট-দ্বন্দ্বে লেখক চেতন ভগত এবং জনপ্রিয় এক চিত্র-সমালোচক। আগেও ইন্ডাস্ট্রি এমন দ্বন্দ্ব দেখেছে। রুপোলি চাকচিক্যকে মলিন করা ছাড়া যার ভূমিকা ছিল না। এর ফলও হয়তো তার ব্যতিক্রম হবে না।