বাংলার সিনেমার অরিজিনাল ‘আধুনিক নায়ক’ শমিত ভঞ্জ
স্বভাব চিরকালই ডানপিটে ধরণের। এখনকার ভাষায়, একটু ‘দাদাগিরি টাইপের’। অভিনয় করবেন বলে বাবার সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি ছেড়েছিলেন। নিজের বেকারত্বকে পাত্তা না দিয়ে কলেজ পড়ুয়া প্রেমিকাকে বিয়ে করেছিলেন জেদের বশে। অনুমতির তোয়াক্কা না করে, তপন সিংহের মতো নামী পরিচালকের ঘরে ধাক্কা দিয়ে ঢুকে বলেছিলেন, “অভিনয় করতে চাই।”
অভিনেতা হিসেবে তাঁর জায়গা হওয়া উচিত ছিল হলিউডের ক্লিন্ট ইস্টউড, লি ভন ক্লিফ বা ডেনজেল ওয়াশিংটনের মতো অভিনেতাদের পাশেই। কিন্তু কপালদোষে বাংলা সিনেমার প্রথম ‘আধুনিক নায়ক’কে সে দিন চিনতে পারেননি কেউ। উত্তম মোহে তখনও বিভোর বাংলার পরিচালক থেকে দর্শককুল। তবু হতাশা তাঁকে গ্রাস করতে পারেনি। সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা সিনেমাকে।
দেখে নেওয়া যাক তাঁর কিছু অনবদ্য সিনেমার তালিকাঃ-
১. আপনজন (১৯৬৮)
পরিচালক তপন সিংহর সিনেমা ‘আপনজন’। ষাটের দশকে সারা পশ্চিমবাংলা জুড়ে চলতে থাকা রাজনৈতিক অস্থিরতার এক জ্বলন্ত দলিল এই সিনেমা। অভিনেতা শমিত ভঞ্জ নিজের অভিনয়ের জাত চিনিয়েছিলেন এই সিনেমাতেই।
২. পরিণীতা (১৯৬৯)
১৯৬৯ সালে মুক্তি পায় এই ছবি। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়য়ের রচিত উপন্যাস অবলম্বনে তৈরী ছবিটিতে প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেন মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, ও শমিত ভঞ্জ।
৩. অরণ্যের দিনরাত্রি (১৯৭০)
সত্যজিৎ রায় পরিচালিত এই ছবি ১৯৭০ সালে মুক্তি পায়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় রচিত উপন্যাস অবলম্বনে এই ছবিতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, রবি ঘোষ, শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়দের পাশে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন তিনি।
৪. গুড্ডি (১৯৭১)
হৃষীকেশ মুখার্জির নির্দেশনায় এই প্রথম হিন্দী ছবিতে কাজ করেন তিনি। তাঁর বিপরীতে ছিলেন জয়া ভাদুড়ি এবং ধর্মেন্দ্রর মত শিল্পীরা।
৫. ফুলেশ্বরী (১৯৭৪)
তরুণ মজুমদার পরিচালিত এই সিনেমায় মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন সন্ধ্যা রায় এবং শমিত ভঞ্জ। সঙ্গীত পরিচালনা করেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।
৬. স্ট্রাইকার (১৯৭৮)
মতি নন্দীর উপন্যাস অবলম্বনে কেয়া ফিল্মের ব্যানারে এই ছবিটি তৈরী করেন অর্চন চক্রবর্তী। প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন শমিত ভঞ্জ।
৭. সবুজ দ্বীপের রাজা (১৯৭৯)
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কাকাবাবু’ সিরিজের রোমাঞ্চকর উপন্যাস ‘সবুজ দ্বীপের রাজা’ অবলম্বনে নির্মিত এই সিনেমা। তপন সিংহ পরিচালিত এই ছবিতে কাকাবাবুর ভূমিকায় ছিলেন শমিত ভঞ্জ। আজও সমালোচকদের মতে শমিত ভঞ্জই এখন পর্যন্ত বাংলা সিনেমার সেরা কাকাবাবু।
৮. আবার অরণ্যে
অরণ্যের দিনরাত্রির সিকোয়েল। গৌতম ঘোষ পরিচালিত এই ছবিই সমিত ভঞ্জের শেষ ছবি। শ্যুটিং চলাকালীনই তিনি মারণ কর্কটরোগে আক্রান্ত। তবুও অনবদ্য অভিনয় উপহার দিয়েছেন দর্শকদের।