ঋণখেলাপি আইন লঘু করতে চেয়েছিল কেন্দ্র! পদত্যাগ নিয়ে বিস্ফোরক উর্জিত প্যাটেল
রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর পদে উর্জিত প্যাটেলের (Urjit Patel) নিয়োগ এবং বছর দুই বাদে হঠাৎ তাঁর পদত্যাগ। দুটি ঘটনা নিয়েই বহু বিতর্ক এবং রহস্য আছে। নিন্দুকেরা বলেন, ২০১৬ সালে রিজার্ভ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর রঘুরাম রাজন (Raghuram Rajan) সরকারের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ার কারণেই পদ ছেড়ে চলে যান। তাঁর পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী নিজের ‘প্রিয়পাত্র’ উর্জিত প্যাটেলকে ওই পদে বসাতে চাইছিলেন। কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার বছর দুই পরেই সরকারের সঙ্গে মতবিরোধ শুরু হয় উর্জিত প্যাটেলের। এবং শেষপর্যন্ত ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে পদত্যাগ করেন তিনি। ঠিক কী নিয়ে সরকারের সঙ্গে তাঁর বিরোধ বেঁধেছিল সেটা নিয়ে অবশ্য এতদিন পর্যন্ত ধোঁয়াশা ছিল। এবার নিজেই সেই ধোঁয়াশা খানিকটা কাটিয়ে দিলেন আরবিআইয়ের প্রাক্তন গভর্নর।
শুক্রবার উর্জিতের লেখা ‘ওভারড্রাফ্ট: সেভিং দ্য ইন্ডিয়া সেভার’ বইটি প্রকাশিত হয়েছে। যাতে তিনি সরকারের সঙ্গে তাঁর সেসময়ের বিবাদ নিয়ে মুখ খুলেছেন। আরবিআইয়ের (RBI) প্রাক্তন গভর্নরের দাবি, সরকারের সঙ্গে তাঁর বিবাদের অন্যতম কারণ হল, ঋণখেলাপি আইন। উর্জিতের অভিযোগ, রিজার্ভ ব্যাংকের উলটোপথে হেঁটে সরকার ঘুরপথে এই আইনটি লঘু করতে চাইছিল। আর সেটা নিয়েই যত মতানৈক্য। নিজের বইয়ে প্রাক্তন আরবিআই গভর্নর লিখেছেন,”কেন্দ্রের সঙ্গে মতবিরোধের সুত্রপাত ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই। সেসময় আরবিআই একটি সার্কুলার জারি করে। যাতে বলে হয়েছিল, যে সমস্ত ঋণগ্রহীতা সময়মতো নিজেদের ঋণের কিস্তি শোধ করতে পারবে না, ব্যাংকগুলি তাঁদের একটি তালিকা তৈরি করবে এবং তাঁদের ঋণখেলাপি হিসেবে শনাক্ত করার কাজ শুরু করবে। দেউলিয়া হওয়ার পর ঋণখেলাপি সংস্থার নিলামের সময় প্রতিষ্ঠাতারা যাতে আর ওই সংস্থার শেয়ার না কিনতে পারে, তা নিশ্চিত করা হবে।”
আরবিআইয়ের প্রাক্তন গভর্নরের দাবি, এই আইনটি সুদূরপ্রসারী। এতে ব্যাংক জালিয়াতি অনেকটাই কমত। এটা নিয়ে যখন আলোচনা হচ্ছিল তখন পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির (Arun Jaitly) সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল তাঁর। কিন্তু সার্কুলারটি জারি হওয়ার পরই কেন্দ্র উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। এবং এই সার্কুলার সম্পর্কে গুজব রটানো হয়। ব্যবসায়ীদের ভয় দেখানো হয়। ফলে ওই সার্কুলারটি লঘু করা বা প্রত্যাহার করার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে চাপ আসতে থাকে। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে পদত্যাগ করেন উর্জিত। তাঁর পরিবর্তে রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর পদে আসেন শক্তিকান্ত দাস। তিনি রিজার্ভ ব্যাংকের সার্কুলারটি অনেকটাই লঘু করে দেন। ঠিক হয় কিস্তি শোধ করতে না পারলে সঙ্গে সঙ্গে ঋণগ্রহীতার নাম আলাদা করে শনাক্ত করা হবে না। অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনার জন্য তাঁদের সময় দেওয়া হবে। একই সঙ্গে ঋণখেলাপিদের দেউলিয়া ঘোষণা করার নির্ধারিত সময়সীমাও তুলে দেওয়া হয়।
ওয়াকিবহাল মহল অবশ্য বলছে, উর্জিতের সঙ্গে সরকারের বিবাদের এটি একটি কারণ হলেও, মূল কারণ ছিল অন্য। সরকার ভোটের আগে আরবিআইয়ের গচ্ছিত টাকার একটা বড় অংশ উন্নয়ন খাতে কাজে লাগাতে চেয়েছিল। যাতে তীব্র আপত্তি ছিল তৎকালীন গভর্নরের। সেটা নিয়েই বিবাদ।। পরে শক্তিকান্ত দাস দায়িত্বে এসে সরকারকে সেই অর্থ ব্যবহারেরও অনুমতি দেন।