দিল্লিতে মুকুলের বাড়ি থেকে মোদি-শাহের ছবি উধাও, জল্পনা
সাউথ অ্যভিনিউয়ের ১৮১ নম্বরে মুকুল রায়ের দিল্লির বাসভবন থেকে সরে গিয়েছে বিজেপির যাবতীয় প্ল্যাকার্ড ও পোস্টার। গেটের পাশে দেওয়াল জুড়ে এত দিন ছিল নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের ছবি-সম্বলিত প্ল্যাকার্ড। কিন্তু এখন খাঁ খাঁ করছে। মুকুল-ঘনিষ্ঠদের দাবি, ঝড়-জলে উড়ে গিয়েছে সব!
নয়াদিল্লির রাজনৈতিক শিবিরের দাবি, দিল্লিতে এখনও সে ভাবে ঝড় হয়নি ঠিকই। কিন্তু মুকুলের রাজনৈতিক ভাগ্যাকাশ এখন খুব নির্মল নয়। বিজেপি নেতৃত্বের কাছে তাঁর দাবি ছিল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব অথবা রাজ্য বিজেপি-তে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ। যাতে ২০২১-এর ভোটের লক্ষ্যে নিজের রাজনৈতিক কাজকর্ম নিজের মতো করে চালিয়ে যেতে পারেন তিনি। কিন্তু দেখা গেল, দিল্লিতে থেকেও পশ্চিমবঙ্গের ভোট-প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক এড়িয়ে শুক্রবার কলকাতায় ফিরে গেলেন তিনি। সূত্রের বক্তব্য, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে মতান্তরের জেরেই কলকাতার উড়ান ধরলেন মুকুল। পাশাপাশি, এটাও মনে করা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছ থেকে তাঁর চাহিদামাফিক কোনও পদ পাওয়ার সম্ভাবনা কমে আসায় তিনি কিছুটা হতাশও। মুকুল নিজে অবশ্য এ দিনও কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে বলেছেন, ‘‘কোনও জল্পনার সুযোগ নেই। আমি চোখের চিকিৎসার জন্য তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছি।’’
তবে এই নিয়ে প্রশ্ন করায় দিলীপবাবু বলেন, “মুকুলদা আমাদের জানিয়েই কলকাতা গিয়েছেন। করোনা-পরিবেশে তিনি সতর্কও থাকতে চাইছেন বয়সের কারণে। তবে দলের প্রস্তুতি-বৈঠকে তিনি ছিলেন। তার আগে ভিডিয়ো বৈঠকেও তাঁকে পাওয়া গিয়েছে।’’ বিজেপিতে কি গুরুত্ব কমছে মুকুলের? তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে দিলীপবাবু বলেন, “আমাদের দলের গুরুত্বটাই আসল, কোনও ব্যক্তির নয়। দল যাকে যে ভাবে ব্যবহার করার প্রয়োজন মনে করে, তাকে সেই ভাবে কাজে লাগায়।’’
সূত্রের খবর, মুকুল এই বার্তাও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে পৌঁছেছিলেন যে, তিনি ভোটের আগে রাজ্যের সংখ্যালঘুদের যতটা সম্ভব মন জয় করার চেষ্টা করবেন এবং তাঁদের তৃণমূল শিবির থেকে বের করে আনতে পারবেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তাঁর কোনও আবেদনেই ইতিবাচক সাড়া আসেনি শাহ শিবিরের থেকে। তবে সূত্রের মতে, বিজেপির রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় স্তরে নেতৃত্বের সঙ্গে সার্বিক তিক্ততা বাড়লেও এবং তৃণমূলের সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে যোগাযোগ রাখলেও নিজের ইচ্ছামাফিক দলত্যাগ করে অন্য দলে যোগ দেওয়া মুকুলের পক্ষে সম্ভব নয়। তাঁর ঘাড়ের উপরে ঝুলছে সিবিআই-এর খাঁড়া।
সূত্রের খবর, রাজ্য বিজেপি-তে মুকুলকে নিয়ে দু’টি মত আছে। এক দল মনে করেন, মুকুলকে যা সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তা-ই যথেষ্ট। অন্য অংশের মতে, মুকুলকে বঙ্গ বিজেপিতে কাজ করতে না দিয়ে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। আড়াই বছরেরও বেশি এই ভাবে কেটে যাওয়ায় মুকুল এখন খানিকটা অধৈর্যই। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে থেকেও দলীয় বৈঠক এড়ানো এবং শুক্রবার তড়িঘড়ি কলকাতায় ফিরে আসা তারই প্রকাশ বলেও বিজেপির ওই অংশের ব্যাখ্যা।
দলের একটি সূত্রের দাবি, মুকুলকে কোণঠাসা করে রাখায় রাজ্য বিজেপির অন্তত দু’জন সাধারণ সম্পাদক, এক জন বাঙালি সাংসদ এবং এক বাঙালি মন্ত্রীও অখুশি। তাঁদের কেউ কেউ জট কাটাতে শাহ, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডা এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষের সঙ্গে কথা বলেছেন। মুকুলকে সক্রিয় করার পক্ষপাতী ওই নেতারা চান, মুকুল ধৈর্য রাখুন। মুকুলকে সক্রিয় করতে চান, এমন এক নেতার কথায়, ‘‘অমিত শাহ, জে পি নড্ডা বাংলার বিধানসভা ভোটকে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছেন। সুতরাং, মুকুলদার মতো ভোটকুশলীকে তাঁরা অবশ্যই কাজে লাগাবেন। করোনার জন্য সব পরিকল্পনায় দেরি হচ্ছে। সব সামলে নেওয়া হবে।’’ তবে তাঁরা মুকুলের হয়ে দরবার চালালেও এখনও মুকুলের জন্য দিল্লির কাছ থেকে কোনও সুখবর নেই।