ফের দিল্লিতে তলব মুকুলকে, মানভঞ্জনের চেষ্টা অমিতদের
তৃণমূল ছেড়ে যখন বিজেপিতে নাম লেখান তিনি, তখন রাজনৈতিক মহলের অনেকেই বলেছিলেন, ‘এই বদল কি স্থায়ী হবে আদৌ’? কিন্তু তারপর লোকসভা ভোটে তিনিই ছিলেন এ রাজ্যে বিজেপির ‘স্ট্র্যাটেজি মাস্টার’। তিনি আর কেউ নয়, বিজেপি নেতা মুকুল রায়। সামনের বছর বিধানসভা ভোটে এ রাজ্যে পদ্ম-রাজ কায়েম করতে তাঁর ‘হিসেব’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করছেন বঙ্গ বিজেপির একটা বড় অংশই। কিন্তু তাঁর সঙ্গে কি বিজেপির দূরত্ব তৈরি হয়েছে অনেকটাই? তাই কি দলের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ছেড়ে কলকাতা ফিরে এসেছেন তিনি? যদিও সেইসব জল্পনাকে উড়িয়ে দিয়ে আপাতত মুকুলের মানভঞ্জনের চেষ্টাই বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব চালাচ্ছেন বলে খবর।
বিজেপির একটা সূত্রের খবর, শুক্রবার কলকাতা ফেরার পরই বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে মুকুলকে ফের দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়েছে। এমনকী শুক্রবারই তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে অমিত শাহের। যদিও দিল্লিতে দলের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ছেড়ে কলকাতায় ফিরে মুকুল জল্পনা উড়িয়ে বলেছিলেন, ‘চার-পাঁচদিন ধরে বৈঠক হবে, এটা আমি জানতাম না। আমার রেটিনার সমস্যা রয়েছে। একটা ইনজেকশন নিতে হবে। সেই ডেট ঠিক করা ছিল আগেই। তাই আমাকে ফিরে আসতে হল। এর মধ্যে কোনও গুঞ্জন নেই।’
আর রবিবার সাংবাদিক বৈঠকে রবিবার মুকুল রায় লেখেন, ‘বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। আমি বিজেপি ছাড়ছি না। বিজেপিতে ছিলাম, আছি এবং থাকব। আমি বিজেপির নির্বাচনী দায়িত্ব পরিচালনা করেছি পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটে। যে সম্মান আমাকে বিজেপি দিয়েছে, তাতে আমি আপ্লুত। অপপ্রচার চলছে চারিদিকে। তাই বাংলার মানুষকে জানাতে চাই, কোনওভাবেই আমি বিজেপি ছাড়ছি না।’
কিন্তু গুঞ্জন কিন্তু থামছে না। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম The Quint-এর তরফে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, মুকুলের সঙ্গে অনেক আগে থেকেই দূরত্ব বেড়েছে বিজেপির। আর সেই সূত্রেই গত মার্চ মাস থেকে নিজের পুরোনো আস্তানা তৃণমূলের সঙ্গে আলোচনা চলছে তাঁর। ওই ওয়েবসাইটের দাবি, মার্চ থেকেই তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন মুকুল রায় ও তাঁর ছেলে শুভ্রাংশু। (সূত্রের সত্যতা যাচাই করেনি এই সময় ডিজিটাল)। একজন তৃণমূলের শীর্ষ নেতাই এহেন দাবি করেন।
রবিবার মুকুল রায় আরও জানিয়েছেন, ‘আমার চোখের সমস্যা রয়েছে। সেই কারণেই এসেছি কলকাতায়।’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে তাঁর ‘সংঘাত’ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে এদিন মুকুল জানান, ‘এগুলো ক্লাবে বা সংবাদমাধ্যমে আলোচনার বিষয়। এরকম কোনও বিষয়ই নেই। কারও সঙ্গে আমার কোনও সংঘাত নেই।’ মুকুল রায়ের দিল্লির বাড়ি থেকে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের ছবি সরানোর প্রসঙ্গটি নিয়েও এদিন মুকুল রায় দাবি করেছেন, ‘এগুলো নির্বাচন কমিশন করেছে। আমি জানতাম না। এবার দেখছি।’
তবে, এ রাজ্যে সপ্তাহে দুদিন করে লকডাউন প্রসঙ্গে অন্যান্য বিজেপি নেতাদের থেকে সুর অনেকটাই নরম রেখেছেন তিনি। বলেছেন, ‘আগে কঠোর লকডাউন হলে ভালো হত। কিন্তু এখনও তো লকডাউন ছাড়া উপায় নেই।’ যদিও মুকুল রায় যাই দাবি করুন না কেন, গুঞ্জন কিন্তু এখনও থামার লক্ষণ দেখা দিচ্ছে না।