বঞ্চিত দাদা, সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব শুভেন্দুর অনুগামীরা
দলের নতুন পুনর্বিন্যাসে রাজ্যের স্টিয়ারিং কমিটিতে তাঁর ঠাঁই হয়েছে। কিন্তু এক দিকে তৃণমূলের পর্যবেক্ষক প্রথার অবলুপ্তি, অন্য দিকে নবীন-নেতাদের যে ভাবে দায়িত্ব বণ্টন হয়েছে তাতে দাপুটে নেতা শুভেন্দু অধিকারীর ক্ষমতার বৃত্ত সঙ্কুচিত হয়েছে বলেই জল্পনা দলে। বিশেষ করে তাঁর নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে দলের যুব সংগঠনের একচ্ছত্র রাশ গিয়েছে অধিকারী-বিরোধী অখিল গিরির শিবিরের হাতে। শুভেন্দু-অনুগামীরা ‘দাদা’র এই বঞ্চনা নিয়ে সমাজ মাধ্যমে সরব হতেও শুরু করেছেন।
শুভেন্দুকে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি করা হতে পারে—দিন সাতেক আগে থেকেই এ রকম পোস্ট ঘুরছিল শুভেন্দু অনুগামীদের ফেসবুকে। বৃহস্পতিবার সাংগঠনিক রদবদলে সে রকম কিছুই হয়নি। সেই ক্ষোভে নেতার অনুগামীরা কেউ লিখেছেন, ‘কর্ম করিয়ে কর্মী করে রাখা, সময় হলে বুঝতে পারবেন।’ কেউ কেউ আবার লিখেছেন, ‘কাঁথি থেকে কালিম্পং, জননেতা কিন্তু একজন’। ‘তোমারে রুধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে’, ‘রাজ্য সভাপতি যোগ্যতার নিরিখে হোক বিচার / জঙ্গল মহল থেকে পাহাড় আওয়াজ দিচ্ছে বারবার, শুভেন্দুদাকেই দরকার’, কিংবা ‘নতুন কমিটি ভাল লাগল ,২০২১ এর ভোটের রেজাল্টের অপেক্ষায় থাকলাম’— এমন নানা মন্তব্যে ছেয়েছে সমাজমাধ্যম।
শুভেন্দুএ নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করেননি। তবে তাঁর অনুগামীদের একাংশের দাবি, যখনই দল সঙ্কটে পড়েছে, তখনই নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুভেন্দুকে একের পর এক দায়িত্ব দিয়েছেন। আর শুভেন্দু তা পালনে সফল হয়েছেন। লোকসভা ভোটে বিজেপির বাড়বাড়ন্তের পরে যখন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ঘরছাড়া হন, তৃণমূল কার্যালয় দখল হয়ে যায়, তখন শুভেন্দুই রাজ্য জুড়ে ঘুরে কর্মীদের ঘরে ফিরিয়েছেন, মনোবল বাড়িয়েছেন। খড়্গপুর উপ-নির্বাচনে দিলীপ ঘোষের ঘাঁটিতে বিজেপিকে হারানোর পিছনেও মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন শুভেন্দুই। অথচ এ যাবৎ দলে বড় পদ তাঁকে দেওয়া হয়নি। উল্টে লোকসভায় হারের পরে ঝাড়গ্রামে পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব শুভেন্দুকে দেওয়া হলেও সহ-পর্যবেক্ষক হিসেবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে।
নন্দীগ্রামের জেলায় অবশ্য দলের রাশ শিশির অধিকারীর হাতেই রেখেছেন মমতা। জেলা সভাপতি ছাড়াও তাঁকে জেলা চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত করা হয়েছে। অখিল গিরি ছাড়াও কো-অর্ডিনেটর বিধায়ক অর্ধেন্দু মাইতি ও জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ আনন্দময় অধিকারী। অন্যদিকে শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ সংগ্রাম দোলাইকে সরিয়ে জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি করা হয়েছে পার্থসারথি মাইতিকে। আর অখিল-পুত্র সুপ্রকাশ গিরিকে যুব সংগঠনের রাজ্য সহ-সভাপতি করা হয়েছে। এই রদবদলের পরে এ বার ব্লক স্তরে কী পরিবর্তন হবে, তৃণমূলের অন্দরে সেই চর্চা শুরু হয়েছে। জেলা সভাপতি শিশির আধিকারীও বলেন, ‘‘আমাদের দল গতিশীল দল। তাই ব্লক স্তরে পরিবর্তন হতেই পারে।’’ তবে ফেসবুকে শুভেন্দু অনুগামীদের মন্তব্য নিয়ে শিশিরের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি ফেসবুক দেখি না। এ বিষয়ে কিছু বলার নেই। দল আমাকে যে দ্বায়িত্ব দিয়েছে তা ভালভাবে পালনের চেষ্টা করি।’’
তৃণমূল সূত্রে খবর, নন্দীগ্রাম-২, খেজুরি-১, ২ ব্লকে সভাপতির পদ শূন্য রয়েছে। নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের সাংগঠনিক দ্বায়িত্ব সামলাচ্ছেন নন্দীগ্রাম-১ ব্লক সভাপতি মেঘনাদ পাল। আর খেজুরির দু’টি ব্লকে সভাপতি নেই একবছরেরও বেশি। দলের সাংগঠনিক দ্বায়িত্ব সামলাচ্ছেন বিধায়ক রণজিৎ মণ্ডল । এ ছাড়াও শহিদ মাতঙ্গিনীতে ব্লক সভাপতি নেই। সেখানে শরৎ মেট্যাকে ব্লক আহ্বায়ক নিয়োগ করে কাজ চলছে। এই ব্লকে গোষ্ঠীকোন্দলও মাথা চাড়া দিয়েছে। অন্য দিকে, হলদিয়ার সুতাহাটায় ব্লক সভাপতির সঙ্গে তিনজন ব্লক কার্যকরী সভাপতি রয়েছেন। দলীয় সূত্রের খবর, ব্লক সভাপতি অমিয় দাস বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার জন্য তেমন সক্রিয় থাকতে না পারায় কার্যকরী সভাপতিরা সাহায্য করছেন। এখানেও রয়েছে কোন্দল-কাঁটা। ময়না ও মহিষাদলের মতো কয়েকটি ব্লকে আবার দলের ব্লক সভাপতি পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি-সহ পঞ্চায়েতে বিভিন্ন পদে রয়েছেন। নন্দকুমারে বিধায়ক সুকুমার দে-ই দলের ব্লক সভাপতি।
এ বার এই সব ব্লকে নতুন সভাপতি নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে রাশ অধিকারীদের হাতে থাকে কিনা, সেটাই দেখার।