‘পাশে আছি, পাশে থাকুন’, প্রধানমন্ত্রীকে বার্তা মমতার
সঙ্কটের সময় কেন্দ্রের পাশে থাকার বার্তা আরও এক বার দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে দাবি জানালেন, রাজ্যের দুঃসময়ে কেন্দ্রও যেন তার পাশে থাকে। সোমবার পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভিডিয়ো বৈঠকে মমতার আর্জি— জনসংখ্যা, জনঘনত্ব এবং ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গের গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে কেন্দ্র যেন ইতিবাচক পদক্ষেপ করে।
এ দিন ভিডিয়ো-বৈঠকে কলকাতা, মুম্বই ও নয়ডায় তিনটি বিশ্বমানের কোভিড পরীক্ষাকেন্দ্রের উদ্বোধন করেন মোদী। সেই উপলক্ষেই হাজির ছিলেন মমতা, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে ও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে মমতা বলেন, “কোভিড বা যে কোনও সমস্যায় একসঙ্গে কাজ করা জরুরি। এটাই গণতন্ত্রের পরম্পরা। অনেক বড় রাজ্য আমাদের, কসমোপলিটান চরিত্র। অনেকগুলি রাজ্য এবং দেশের সীমানা-সীমান্ত রয়েছে। তাই পশ্চিমবঙ্গের জন্য বিশেষ পদক্ষেপ করুন। আমি আবার বলছি, গঠনমূলক যে কোনও পদক্ষেপ করা হলে কেন্দ্রের সঙ্গে সহযোগিতা করব।”
কোভিড পরিস্থিতিতে রাজ্যের মূল দাবি যে আর্থিক, সেটা আজ স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা। লকডাউনের জেরে রাজস্ব আদায় যখন তলানিতে, তখন কী ভাবে রাজ্য চালাচ্ছেন, সে ব্যাখ্যা প্রধানমন্ত্রীকে এর আগেও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন তিনি জানান, আমপান-তাণ্ডবের পরে আর্থিক পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে। মমতা বলেন, কোভিড সামলাতে রাজ্য ইতিমধ্যেই ২৫০০ কোটি টাকা খরচ করেছে। কিন্তু কেন্দ্রের থেকে এই খাতে টাকা এসেছে মাত্র ১২৫ কোটি। আমপানে ৩৫ হাজার কোটি টাকা সাহায্য চাওয়া হলেও কেন্দ্র এ পর্যন্ত স্রেফ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। এই সব খাতের অর্থ ছাড়াও সামগ্রিক ভাবে প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকার দাবি এ দিন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ নিয়ে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ আজ বলেন, ‘‘আমপানে প্রথমে এক লক্ষ কোটি চেয়ে এখন ৩৫ হাজারে নেমেছে রাজ্য। আমপানে কত বিদ্যুতের খুঁটি আর বাঁধ ভেঙেছে, সেই অঙ্কের মাথামুন্ডু নেই। বৈঠক ডাকা হলে মুখ্যমন্ত্রী বা মুখ্যসচিব আসেন না। অনুপস্থিত থাকেন মন্ত্রী এমনকি জেলাশাসকেরাও। তা হলে কেন্দ্র প্রকৃত তথ্য পাবে কী করে!’’
বেহাল আর্থিক পরিস্থিতি সামাল দিতে এফআরবিএম আইন শিথিল করে বাজার থেকে ধার নেওয়ার সীমা রাজ্যের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিএসডিপি)-এর ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করার অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু এই বাড়তি ২ শতাংশের মধ্যে মাত্র ০.৫ শতাংশ বিনা শর্তে নেওয়া যাবে। বাকি ১.৫ শতাংশ ধার নিতে গেলে নানা শর্তপূরণ করতে হবে। নবান্নের দাবি, পুরোটাই শর্তহীন করা হোক। দিলীপ ঘোষের পাল্টা যুক্তি, ‘‘কেন্দ্রের টাকা এসে পড়ে থাকে, কিন্তু খরচ হয় না। আয়লার ত্রাণে আসা পাঁচ হাজার কোটি টাকা ফেরত চলে গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এক দিকে বলে রাজ্যের জিডিপি বেড়েছে। তা হলে এমন ভিখিরি দশা কেন?’’
এ দিনের বৈঠকে রাজ্যপালের প্রসঙ্গও উঠে এসেছে। জগদীপ ধনখড় রাজ্যপাল হয়ে আসার পর থেকেই তাঁর সঙ্গে সংঘাত লেগে রয়েছে রাজ্য সরকারের। আজ নাম না-করে মমতা অভিযোগ করেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী সাহায্য করলেও, সাংবিধানিক পদে বসে কেউ কেউ সরকারকে বিরক্ত করে যাচ্ছেন।’’ যার জবাবে দিলীপবাবু বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষ সত্যি কথা বললে পুলিশ দিয়ে পেটানো যায়। কিন্তু রাজ্যপাল সত্যি কথা বললে তা করা যায় না। তাঁর অপ্রিয় কথাগুলির জবাব দিতে না-পারায় ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হচ্ছে।’’ রাজ্যপালকে কেন মুখ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা এড়িয়ে যাচ্ছেন তা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিলীপ বলেন, ‘‘রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থায় ডামাডোল চলছে। এক্তিয়ারবলে শিক্ষাসংক্রান্ত কিছু জানতে চাইলে উপাচার্য কেন দেখা করবেন না?’’
পরীক্ষাকেন্দ্রের উদ্বোধন করে মোদী জানান, নতুন ল্যাবে দিনে ১০ হাজার করোনা পরীক্ষার পাশাপাশি ডেঙ্গি, এইচআইভি-র মতো কয়েকটি রোগের নমুনা পরীক্ষা করা যাবে। উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে মমতা বলেন, “রাজ্যের হাতেও যদি কিছু ল্যাব দেওয়া হয়, তা হলে সরকারি হাসপাতালগুলির উপকার হবে।”
কিছু দিন আগেই স্বাস্থ্য মন্ত্রক চিঠি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ক্রমবর্ধমান মৃত্যুহার ও সংক্রমণ কমাতে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছিল। এর আগে সমালোচনার জবাব কড়া ভাবেই দিলেও, আজ সেই প্রসঙ্গ এড়ান মুখ্যমন্ত্রী। উল্টে সরকারি হাসপাতালে শয্যার সংখ্যা বাড়ানো, বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে কোভিড হাসপাতালে পরিণত করা, সেফ হাউস, কোভিড যোদ্ধা ক্লাব তৈরির মতো উদ্যোগের ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে মমতা বলেন, “বিশ্বকে জানাতে পারেন, এ রাজ্যে নিখরচায় কোভিড চিকিৎসা হচ্ছে। টেলিফোন-পরামর্শ, স্যাটেলাইট স্বাস্থ্য পরিষেবার সুবিধা নিয়ে রাজ্যের ৮৭% কোভিড আক্রান্ত বাড়িতে বা সেফ হোমে থেকে চিকিৎসা করাচ্ছেন। মাত্র ১২-১৩% মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হচ্ছে। ’’