দেশ বিভাগে ফিরে যান

ভার্চুয়াল ক্লাস থেকে বঞ্চিত দেশের শিক্ষার্থীদের বড় অংশই

July 29, 2020 | 2 min read

‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র ভিতরে এ এক অন্য ‘ভারতবর্ষ’! ভাঙাচোরা পথঘাট। পাহাড়-জঙ্গল কিংবা নদনদী ঘেরা গ্রাম। বিদ্যুৎহীন অথবা বিরামহীন লোডশেডিং। ‘স্মার্টফোন’, ‘ইন্টারনেট’, ‘ভার্চুয়াল’—কথাগুলি দুর্গম পথ উজিয়ে আজও পৌঁছতে পারেনি অন্য ‘ভারত’-এ। আর সেই ভারতেই বেড়ে উঠছে জোৎস্না, স্বপ্না, রাজেশ কিংবা শেখ মুস্তাকদের মতো পড়ুয়ারা। কোভিডের ধাক্কায় স্কুল-কলেজ বন্ধ। ক্লাস চলছে ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’য়। যাকে বলা হচ্ছে ‘ভার্চুয়াল পড়াশোনা’। কিন্তু স্বপ্না, রাজেশরা ঘরে বসে লোডশেডিংয়ের অন্ধকারে। কারও গ্রামে বিদ্যুতের খুঁটি পড়েনি। কেউ আবার স্মার্টফোনে ইন্টারনেট সংযোগ পেতে কালঘাম ছোটাচ্ছে।

ডিজিটাল’ রাজধানীর গা ঘেঁষে এমন ‘ভারত’ও রয়েছে! দিল্লি-নয়ডা সীমান্ত লাগোয়া ছোট্ট গ্রাম। জোৎস্না-স্বপ্নাদের বাস সেই গ্রামে। মাস চারেক আগেও যমুনা পেরিয়ে স্কুলে যেত তারা। বছর তেরোর জোৎস্না কুমার হাইস্কুলে পড়ে। প্রাণের ঝুঁকি নিয়েও দু’বেলাই নদী পারাপার করত তারা। বড্ড কঠিন সেই জীবনযুদ্ধ। তবুও স্কুলে যাওয়ার আনন্দেই লড়াইয়ের ক্লান্তি ভুলে থাকত স্বপ্নারা। ‘ভার্চুয়াল’ ক্লাস শুরু হতেই তাদের সামনে সব অন্ধকার। অসম এক যুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তারা। স্বপ্নার বাবা পেশায় দিনমজুর। ধারদেনা করে একটা স্মার্টফোন কিনেছেন। কিন্তু প্রতিদিন সন্ধ্যা গড়ালেই নিয়ম মেনে লোডশেডিং। মোবাইলের চার্জ ফুরিয়ে গেলেই সব শেষ! তাই ‘ব্রাইটনেস’ কমিয়ে স্ক্রিনে ‘স্টাডি মেটিরিয়াল খুঁজতে গিয়ে বারবার হোঁচট খায় স্বপ্না। ইন্টারনেটের কানেকশনও এই আছে তো এই নেই! দিনের সবক’টা ক্লাস শেষ করতে পারে না সে।

ফরিদাবাদের শুচি সিং। ক্লাস এইটের ছাত্রী সে। বাড়িতে চার ভাইবোন। স্মার্টফোন সাকুল্যে একটি। বাবা রাজেশ কুমার খবরের কাগজ বিক্রেতা। সবার হাতে মোবাইল তুলে দেওয়ার সামর্থ্য নেই তাঁর। রাজেশ জানেন না, কবে পরিস্থিতি বদলাবে। কীভাবে পড়াশোনা শিখিয়ে শুচিদের মানুষ করে তুলবেন! ঠিক একই প্রশ্ন খুঁজে চলেছেন কেরলের শামসুদ্দিন আধোনি। গাড়ি ধোয়ামোছার কাজ করেন তিনি। বড় মেয়ে জিনাতকে ঘিরে তাঁর যাবতীয় স্বপ্ন। বোর্ড পরীক্ষায় ৯৪ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাস করেছে জিনাত। চায় ডাক্তার হতে। এতদিন কোনওমতে ধারদেনা করে, স্ত্রীর গয়ানা বেচে লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছেন তিনি। মন্দার বাজারে এখন আয় নেই শামসুদ্দিনের। মেয়ের হাতে একটা স্মার্টফোন তুলে দিতে অপারগ… অসহায় সেই বাবা।

কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী—দেশজুড়ে ডিজিটাল প্রযুক্তির অন্ধকারের ছবিটা বেশ প্রকট করে দিয়েছে মারণ ভাইরাসের তাণ্ডবলীলা। কোথাও বেরিয়ে পড়েছে নেট পরিষেবার হিংস্র চেহারা। কোথাও বিদ্যুতের ঘাটতি। সরকারের এক সমীক্ষাই বলছে, ২০১৭-১৮ সালে দেশের ১৬ শতাংশ বাসিন্দা দৈনিক ১-৮ ঘণ্টা ইলেক্ট্রিসিটির সুবিধা পান। রোজ ১২ ঘণ্টা আলো থাকে ৪৭ শতাংশের বাড়িতে। ফলে সবার মুখে এখন একটাই প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসছে… ‘ভার্চুয়াল’ ক্লাসের সুযোগ পাবে দেশের কত শতাংশ পড়ুয়া? এতদিনের একটা পরিচিত স্লোগান ছিল—প্রতি হাতে বই চাই। এখন বলা হচ্ছে পড়তে চাইলে স্মার্টফোন চাই! না হলে শিক্ষার ন্যূনতম সুবিধা থেকে হতে হবে বঞ্চিত। আবার স্মার্টফোন থাকলেও যে পড়াশোনার সুবিধা মিলবে, তারই বা গ্যারান্টি কোথায়? অন্তত, কাশ্মীরের শেখ মুস্তাক, মুম্বই কলোনির জ্যোতি রান্ধে কিংবা ধারাভি বস্তির সুমিত ওয়াদেকারকে সেই নিশ্চিন্দি কেউ দিতে পারছে না। এরা সকলেই উঠতি প্রজন্মের প্রতিনিধি। আবার একইসঙ্গে ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র এক অন্ধকার বৃত্তের নাগরিকও। ‘ভার্চুয়াল’ শিক্ষাপদ্ধতি জ্যোতি-জোৎস্নাদের কাছে প্রযুক্তির আশীর্বাদ না অভিশাপ—বিতর্ক ক্রমেই মাথাচাড়া দিচ্ছে।
 অনলাইন ক্লাসে ব্যস্ত শিক্ষিকা মা ও পড়ুয়া মেয়ে। ছবি: পিটিআই 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#India, #covid-19, #virtual class

আরো দেখুন