ভারতীয় সেনা নিয়ে ছবি বানাতে এ বার লাগবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ‘নো অবজেকশন’ সার্টিফিকেট
ভারতীয় সেনাকে উপজীব্য করে আগামী দিনে কেউ ছবি বানাতে চাইলে, কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ‘নো অবজেকশন’ সার্টিফিকেট ছাড়া ছবি রিলিজ করা যাবে না। শুধু ফিল্ম নয়, তথ্যচিত্র এমনকী ওয়েব সিরিজের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম মেনে চলতে হবে। শুক্রবার এই মর্মে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে একটি নির্দেশিকা জারি হয়েছে। ছবির পর্দায় ভারতীয় সেনাকে যাতে বিকৃত ভাবে না তুলে ধরা হয়, তা নিশ্চিত করতেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের এই সিদ্ধান্ত। ছবির নির্মাতাদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে ভারতীয় সেনাকে থিম করে সিনেমা, তথ্যচিত্র বা ওয়েবসিরিজ তৈরি হলে, বাণিজ্যিক ভাবে রিলিজের আগে তা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে জমা দিন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক যদি মনে করে, আপত্তিজনক কিছু নেই, তবে একটি সার্টিফিকেট দেবে। এই ‘নো অবজেকশন’ সার্টিফিকেট ছাড়া সিনেমার ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ভাবে মুক্তি আটকে যাবে। ওয়েব সিরিজ এবং তথ্যচিত্রের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য।
ছবির প্রযোজকদের উদ্দেশে বলা হয়, সেনার ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, এমন কিছু যাতে ছবিতে না-থাকে, তা আপনারা খেয়াল রাখুন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের চিঠিতে আরও বলা হয়, বেশ কয়েকটি প্রোডাকশান হাউজের বিরুদ্ধে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। ছবির গল্পকে বিকৃত করে ভারতীয় সেনার ভাবমূর্তি নষ্ট করা হচ্ছে। এমনকী সামরিক পোশাকেরও মর্যাদাহানি করা হয়েছে। সূত্রের খবর, অভিযোগ মূলত ওয়েব সিরিজ নিয়ে। এর মধ্যে একাধিক অভিযোগ-চিঠিও কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে জমা পড়েছে। চিঠিতে অভিযোগ, ওয়েব সিরিজে যে সমস্ত দৃশ্য দেখানো হচ্ছে, তার সঙ্গে বাস্তবের অনেক ফারাক। কয়েক জন সচেতন মানুষ, অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী ওয়েব সিরিজের প্রোডাকশান হাউজের বিরুদ্ধে এফআইআর পর্যন্ত দায়ের করেছেন। তার পরেই এ বিষয়ে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয় রাজনাথ সিংয়ের মন্ত্রক।
ভারতীয় সেনাকে অবলম্বন করে বলিউডে এ পর্যন্ত একাধিক বাণিজ্যসফল ছবি তৈরি হয়েছে। কখন ছবির প্রেক্ষিত ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ– একাত্তর কিংবা কারগিল। কখনও আবার উড়ির সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, ভারত-পাকিস্তান বর্ডার, অশান্ত কাশ্মীর। কাহিনির শেষ নেই। একটি হিসেব বলছে, ভারতীয় সেনাকে থিম করে বলিউডে প্রায় পঞ্চাশেক ছবি তৈরি হয়েছে। যদিও সব ছবি শেষ পর্যন্ত ব্যবসা দিতে পারেনি।
২০১৬ সালে উড়িতে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর পাকিস্তানে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়েছিল ভারতীয় সেনা। সেই ঘটনার উপর নির্মিত ‘উড়ি: দ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ ২০১৯ সালে মুক্তির প্রথম ৫ দিনেই বক্স অফিসে ৫০ কোটি টাকার ব্যবসা দিয়েছিল। ১০ দিনের মাথায় ১০০ কোটি ছাড়িয়ে যায়। ২০১৯ সালে বলিউডে এটিই প্রথম ব্লকবাস্টার সিনেমা। হিটের তালিকায় রয়েছে বর্ডার (১৯৯৭), লক কারগিল, লক্ষ্য (২০০৪), ট্যাংগু চার্লে, সুরিয়া (২০০৮), প্রহার: দ্য ফাইনাল অ্যাটাক (১৯৯১)-এর মতো ছবি।
সম্প্রতি পূর্ব লাদাখের গলওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় সেনার উপর চিনের লালফৌজের অতর্কিত আক্রমণও ছবির পর্দায় নিয়ে আসতে চলেছেন অজয় দেবগণ। ছবির নাম এখনও ঠিক না হলেও, বিষয় লাদাখে ভারতীয় সেনার আত্মত্যাগ। সূত্রের খবর, সিনেমার চিত্রনাট্য লেখার কাজ চলছে। অজয় দেবগণের এফ ফিল্মসের সঙ্গে এটি প্রযোজনা করবে সিলেক্ট মিডিয়া হোল্ডিংস এলএলপি। তবে, অজয় নিজে এ ছবিতে অভিনয় করবেন কি না, জানা যায়নি। এদিকে, অজয়ের মুক্তি প্রতিক্ষীত ‘ভুজ: দ্য প্রাইড অফ ইন্ডিয়া’ও যুদ্ধ কেন্দ্রিক। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই এতে তুলে ধরা হয়েছে। অভিনয় করেছেন সঞ্জয় দত্ত, সোনাক্ষী সিনহা, এমি বৃক ও শরদ কেলকার। অভিষেক দদাইয়া পরিচালিত সিনেমাটি শিগগিরই ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাবে।
ভারতীয় সেনাকে থিম করে বলিউডের কয়েকটি ছবি
‘১৯৭১’, ‘১৯৭১- বিয়ন্ড বর্ডারস’, ‘অঘটন’, ‘আক্রমণ’, ‘আব তুমহারি হাওয়ালে ওয়াটন সাথিয়ো’, ‘আইয়ারি’, ‘আংগার বেদি’, ‘ব্যাটেলিয়ান ৬০৯’, ‘বর্ডার’, ‘বর্ডার কাশ্মীর’, ‘সিটিজেন’, ‘দিল সে’, ‘দিল জ্বালে’, ‘ফ্রেন্ডস’, ‘গেইম: হি প্লেইস টু উইন’, ‘হাফ উইডো’, ‘হকিকত’, ‘হিন্দুস্থান কি কসম’, ‘হলিডে: আ সোলজার ইজ নেভার অফ ডিউটি’, ‘হাম দোনো’, ‘হাম তুম দুশমন দুশমন’,‘ আই লভ ইন্ডিয়া’, ‘জব তক হ্যায় জান’, ‘কান্দাহার’, ‘কুরুক্ষেত্র’, ‘কেয়া দিল্লি কেয়া লাহোর’, ‘লক্ষ্য’, ‘লালকার’, ‘লক কারগিল’, ‘মে হু না’, ‘মিশন কাশ্মীর’,‘মিশন ৯০ ডেইজ’, ‘নেতাজি সুভাসচন্দ্র বোস: দ্য ফরগটেন হিরো’, ‘পল্টন’, ‘পরমাণু’, ‘ফ্যান্টম’, ‘প্রহার: দ্য ফাইনাল অ্যাটাক’, ‘পুকার’, ‘রাজস্থান’, ‘রঙ্গন’, ‘শহিদ ই কারগিল’, ‘সুরিয়া’, ‘সোলজার’, ‘সুবেদার জগবিন্দর সিং’, ‘ট্যাংগো চার্লে’, ‘টিউব লাইট’, ‘উড়ি: দ্য সার্জিকাল অ্যাটাক’, ‘ওয়াগহ’,‘ইয়াহ’, ‘বীর জারা’, ‘জমিন’,‘মাদ্রাজ ক্যাফে’, ‘চক্রভুজ’, ‘দেওয়ার’, ‘বিজেতা’,‘হিন্দুস্থান কি কসম’, ‘ওয়ার ছোড় না ইয়ার’,‘আর্মি’,‘ ইয়াহ’।