বড়দার উত্তরসূরি খুঁজতে তৎপরতা তুঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেসে
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে সোমেন মিত্রের উত্তরসূরি খোঁজার কাজ বেশি দিন ফেলে রাখতে চান না তাঁরা। কলকাতায় এসে তেমনই ইঙ্গিত দিলেন বাংলার এআইসিসি পর্যবেক্ষক গৌরব গগৈ। রাজ্যের নেতারাও তাঁর কাছে আর্জি জানিয়েছেন, সোমেন মিত্রের অসম্পূর্ণ কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে হাইকম্যান্ড যেন দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়। গৌরবককে পাশে বসিয়ে দলের প্রবীণ সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য জানিয়ে দিয়েছেন, সোমেন যে ভাবে বামফ্রন্টের সঙ্গে যৌথ আন্দোলনের কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, সেই পথেই এগোবে প্রদেশ কংগ্রেস। সোমেন মিত্রের স্ত্রী শিখা মিত্র এবং ছেলে রোহনের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের সমবেদনা জানিয়েছেন গগৈ।
সোমেন-প্রয়াণে রাজ্যজুড়ে সাত দিন কংগ্রেসের সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থগিত রাখা হচ্ছে। রাজ্যের সমস্ত প্রান্তে সোমেন মিত্রের স্মরণসভা করতে বলা হয়েছে কর্মীদের। প্রদেশ কংগ্রেসও কেন্দ্রীয় ভাবে স্মরণসভার আয়োজন করবে। বাম নেতাদেরও সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে। এ সবের পাশাপাশি গগৈয়ের মাধ্যমে রাজ্য ও জেলাস্তরের নেতাদের মনোভাব বুঝে নিতে চাইছে দিল্লি। এদিন গগৈ বলেন, ‘সোমেন মিত্র যে উচ্চতায় পৌঁছেছিলেন, সেখানে পৌঁছনো সত্যিই শক্ত। কিন্তু তাঁর স্বপ্নগুলো আমাদেরই পূরণ করতে হবে। আমরা দলের বিভিন্ন নেতার সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছি। কী ভাবে আমরা এগোবে, তা নিয়ে সবার মত জানার চেষ্টা করছি।’
প্রবীণ নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্যকেই আরও একবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদে বসিয়ে দেওয়া কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের কাছে সব থেকে সহজ বিকল্প বলে মনে করছেন অনেকেই। আবার বিধানসভা ভোটের আগে সর্বভারতীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব যদি বাংলায় কোনও দাপুটে নেতাকে বিধান ভবনে বসাতে চায়, তা হলে অধীর চৌধুরীর থেকে যোগ্যতর বিকল্প হতে পারে না বলে দলের বড় অংশ মনে করছে। কিন্তু লোকসভার দলনেতা, পিএসি চেয়ারম্যান পদে থাকা অধীরকে বিধান ভবনের চেয়ারে ফেরাতে হলে সংসদে তাঁর দায়িত্ব কাকে দেওয়া হবে, সেই প্রশ্নও উঠতে পারে। আবার আবদুল মান্নান যেহেতু এখন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা, তাঁর ক্ষেত্রেও উঠতে পারে একই প্রশ্ন। প্রথাগত ভাবে ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ রীতি এখনও চালু আছে কংগ্রেসে। এটা যেমন ঠিক, তেমনই জরুরি ও কঠিন পরিস্থিতিতে ব্যতিক্রম ঘটিয়ে ব্যাকরণের বাইরে বেরিয়ে আসার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না রাজ্য নেতারা। আর এ সবের মধ্যে না-গিয়ে দল যদি সংগঠন থেকে অন্য কোনও ‘বিকল্প’ মুখ তুলে আনতে চায়, তা হলে সেই নেতার পরিচিতি এবং রাজ্যব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা কতটা, সেটাও ভেবে দেখার বিষয়।
সময়টা যেহেতু বিধানসভা ভোটের প্রাকপর্ব, তাই বাংলায় নতুন প্রদেশ সভাপতি খোঁজার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের খুব বেশি পরীক্ষা করার জায়গা নেই বলেই মনে করছে দলের বড় অংশ। অমিতাভ চক্রবর্তী, শুভঙ্কর সরকারের মতো অপেক্ষাকৃত তরুণ প্রজন্মের নেতাদের মধ্যে কাউকে বেছে নিতে হলে দলকে আগে নীতিগত নবীনযুগ চালু করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেক্ষেত্রে সমস্ত সিনিয়র নেতার মতামত অবশ্যই পরখ করে দেখতে চাইবেন সর্বভারতীয় নেতৃত্ব।