জাতীয় সংগীতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে যুক্ত করা হোক, বিস্ফোরক দাবি ত্রিপুরার এই প্রাক্তন কংগ্রেস নেতার
ফের বিতর্কিত দাবির ত্রিপুরা রাজপরিবারের সদস্য তথা প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা প্রদ্যোৎ কিশোর দেববর্মার। ‘জনগণমন’ – জাতীয় সংগীতকে সংশোধন করার মতো বিস্ফোরক দাবি তুললেন তিনি। স্বাধীনতার পর থেকে এই পর্যন্ত সংবিধানের একাধিক সংশোধন হলেও জাতীয় প্রতীক, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত – এই তিন বিষয়ে কোনও পরিবর্তনের দাবি এর আগে শোনা যায়নি। এবার সেই জাতীয় সংগীত পরিবর্তন করে তাতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে সংযুক্ত করার কথা বললেন প্রদ্যোৎ বিক্রম মাণিক্য দেববর্মা। নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে একটি পোস্ট করেছেন তিনি। ত্রিপুরার প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির সেই পোস্ট নিয়ে ইতিমধ্যে সমালোচনা শুরু হয়েছে নানা মহলে।
নিজের ফেসবুকে ভারতের মানচিত্র-সহ একটি পোস্ট করেছেন ত্রিপুরার প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদ্যোৎ বিক্রম মাণিক্য দেববর্মা। তাতে তিনি লিখেছেন, ১৯১১ সালে যে সংগীত রচিত হয়েছিল সেটিই আজ জাতীয় সংগীত, কিন্তু সেই সংগীতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কথা উল্লেখ না থাকায় সেটি ওই অঞ্চলের জন্য অপমানজনক। প্রসঙ্গত, এর আগে প্রদ্যোৎ কিশার দেববর্মার পিতা কিরীটি দেববর্মা কংগ্রেস সাংসদ ছিলেন। তিনি এই ধরনের দাবি কখনও উত্থাপন করেননি। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রদ্যোৎ কিশোরের এই ধরনের দাবি উত্থাপন উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষের ভাবাবেগকে উসকে দেওয়ার প্রবণতা কি না, এই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পরে রাষ্ট্রসংঘে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের কাছে কোনও এক অনুষ্ঠানের জন্য ভারতের জাতীয় সংগীতের একটি রেকর্ড চাওয়া হলে, তাঁরা তৎক্ষণাৎ ভারত সরকারকে বিষয়টি অবহিত করেন ও ‘জনগণমন’বাজানোর পক্ষে মত প্রকাশ করেন। সরকারের অনুমোদনক্রমে রাষ্ট্রসংঘের অর্কেস্ট্রা বাদনের একটি গ্রামোফোন রেকর্ড সেই অনুষ্ঠানে সাফল্যে সঙ্গে বাজানো হয়।
স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু পরে বলেছিলেন, এই গানের সুর সেদিন সবার দ্বারা প্রশংসিত হয় এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা এই সুরটির স্বাতন্ত্র ও অভিজাত্যে মুগ্ধ হয়ে এর স্বরলিপি চেয়ে পাঠান। পরবর্তীকালে ‘জনগণমন’কেই ভারতের জাতীয় সংগীত করার পক্ষে মত প্রকাশ করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। অবশেষে ২৪ জানুয়ারি ১৯৫০ সালে ভারতের সংবিধান সভা এই গানটিকে জাতীয় সংগীত (National Anthem) হিসেবে গ্রহণ করে । সভাপতি ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ বলেন , ”‘জনগণমন’নামে গানটি কথা ও সুর-সহ ভারতের জাতীয় সংগীত রূপে সরকারিভাবে স্বীকৃত হওয়ার দিন এও উল্লেখিত ছিল, কোনও নির্দিষ্ট কারণ উপস্থিত হলে সরকার এই গানের কথায় যে কোনও রকম পরিবর্তন আনতে পারবেন। স্বাভাবিক কারণেই প্রদ্যোৎ কিশোরের এই দাবি যে একেবারেই ভিত্তিহীন, তা জাতীয় সংগীতের স্বীকৃতিকালে বলা হয়নি।” এখন দেখার, আগামী দিনে বিষয়টি কোন দিকে গড়ায়।