বঙ্গভঙ্গ, রাখি এবং রবীন্দ্রনাথ
আজ রাখি। আজ থেকে ঠিক ১২ দিন পর আবার দেশ জুড়ে পালিত হবে ৭৪ তম স্বাধীনতা দিবস। এই দুয়ের মধ্যে আপাত ভাবে কোনও মিল না থাকলেও স্বাধীনতা প্রাপ্তির আড়ালে থাকা দীর্ঘ সংগ্রামের সঙ্গে রাখি বন্ধনের এক গভীর যোগ রয়েছে। ফিরে দেখা যাক সেই ইতিহাস।
শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমায় ভাইয়ের হাতে বোনেরা রাখি বেঁধে দেন। মূলত ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় এই রীতি চলে আসছে। অবাঙালীদের কাছে রাখি বন্ধন রক্ষা বন্ধন নামেও পরিচিত। কিন্তু বাঙালীদের কাছে রাখি কেবলই ভাই বোনের মধ্যে আবদ্ধ নয়। এছাড়া ধর্মীয় ও সামাজিক গণ্ডি পেরিয়ে রাখিকে রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও জায়গা দিয়েছে বাঙালিই। আর বাঙালির এই রাখি বন্ধনের প্রসঙ্গে উঠে আসবেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম।
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করতে রাখিকে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এই বছরের ২০শে জুলাই ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গের কথা ঘোষণা করে। জানানো হয়, এই আইন কার্যকরীর হবে ১৯০৫ এরই ১৬ই অক্টোবর, বাংলায় ৩০শে আশ্বিন।
সেই সময়, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতায় মানুষ সামিল হয়। ঠিক হয়, ওই দিন বাংলার মানুষ পরস্পরের হাতে বেঁধে দেবেন হলুদ সূতো বাঁধবেন। এই দিনকে মিলন দিবস হিসেবে পালন করা হয়। কবিগুরু এই দিনটিকে রাখি বন্ধন উৎসব পালন করার ডাক দেন। বাংলায় হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌভ্রাতৃত্বকে ফুটিয়ে তুলতেই এই উদ্যোগ নেন রবীন্দ্রনাথ।
এই রাখিবন্ধন উৎসবে সম্প্রীতি যে ভাবে জায়গা করে নিয়েছিল, তা আজকের দিনেও প্রাসঙ্গিক। রবীন্দ্রনাথ এই রাখি বন্ধন উৎসব নিয়েই গান লিখেছিলেন, ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল। পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, হে ভগবান।’