প্রতি ১২ জনে একজন ‘সুপার স্প্রেডার’ কলকাতায়, বলছে রিপোর্ট
ইতিমধ্যেই শহরে করোনা পরীক্ষায় র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু করেছে কলকাতা পুরসভা। মূলত, ‘সুপার স্প্রেডার’দের চিহ্নিত করতেই এই উদ্যোগ। নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার পরেও শহরে কেন বা কাদের জন্য সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত, তা শনাক্ত করতেই এই টেস্ট। রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, কলকাতায় প্রতি ১২ জনে একজন ‘সুপার স্প্রেডার’।
কলকাতা পুরসভার মুখ্য প্রশাসক ফিরহাদ হাকিমের ৮২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে গত বৃহস্পতিবার এই পরীক্ষা শুরু হয়েছিল। গত কয়েকদিনে ১১, ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড সহ বরো ৩-এর বিভিন্ন জায়গায় এবং ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডে এই পরীক্ষা হয়েছে। রবিবার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে চলে অ্যান্টিজেন টেস্ট। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মূলত হামের ক্ষেত্রে এই ‘সুপার স্প্রেডার’ শব্দটি ব্যবহার করা হতো। করোনা-পর্বে দিল্লিতে প্রথম আলোচনায় উঠে আসে এই শব্দটি। সেখানে শুরু হয় টেস্ট। এবার কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গেও শুরু হয়েছে এই উদ্যোগ। ‘সুপার স্প্রেডার’ কারা? স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মনে এই প্রশ্ন উঠে আসে। পুর-কর্তারা বলছেন, নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার পরেও শহরে আক্রান্তের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেখা গিয়েছে, প্রতিদিনই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে মানুষ বাজারে ভিড় জমাচ্ছেন। ফলে বাজার হয়ে উঠেছে সংক্রমণের আঁতুড়ঘর। পাশাপাশি, লকডাউনে শহরের একটা বড় অংশের মানুষ কাছে-পিঠে যাতায়াতের ক্ষেত্রে অটো, ট্যাক্সি, রিকশ ব্যবহার করছেন। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে এঁরাই করোনার বাহক হয়ে উঠেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। এঁরাই ‘সুপার স্প্রেডার’। তাই এঁদের চিহ্নিত করতেই এই কার্যক্রম।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কথায়, যে রোগীদের মধ্যে আর পাঁচজন আক্রান্তের তুলনায় রোগ ছড়ানোর প্রবণতা বেশি, তাঁদেরই এই শ্রেণীতে ফেলা হয়। এই অংশটা হল কুড়ি শতাংশ। এঁদেরই চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে এবং সংক্রামিত এলাকায়, বাজারে, অটো এবং রিকশচালকদের মধ্যে সন্দেহভাজনদের অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হচ্ছে। করোনা পজিটিভ হলে যথাযথ ব্যবস্থা করছে প্রশাসন। কিন্তু, কারও উপসর্গ রয়েছে, অথচ রিপোর্ট নেগেটিভ, তাঁদের পুনরায় পুরনো নিয়মে আরটিপিসিআর-এ লালারসের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সূত্রের খবর, গত শনিবার পর্যন্ত কলকাতায় টেস্টের সংখ্যা ছিল ৪৪৬। যার মধ্যে পজিটিভ ৪১ এবং আরটিপিসিআরে ৭০ জনের টেস্ট হয়েছে। রবিবার ফের নতুন ৬০ জনের অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হয়। সেখানে মাত্র চারজন পজিটিভ। সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত শহরে ৫০৬ জনের টেস্ট হয়েছে। হিসেব বলছে, শনিবার পর্যন্ত যেখানে প্রতি ১০ জনে একজন পজিটিভ মিলেছিল, সেখানে রবিবার সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ১২ জনের মধ্যে একজন। যদিও পুরসভা মনে করছে, রবিবার উত্তর কলকাতায় পরীক্ষা হওয়ার কারণে এই সংখ্যা নামমাত্র। কিন্তু পূর্ব কলকাতা, ইএম বাইপাস সংলগ্ন এলাকা, দক্ষিণ-পূর্ব কিংবা দক্ষিণ কলকাতার ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা অনেকটাই বেশি হবে। এই প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ অনির্বাণ দলুই বলেন, সরকারের পরিকল্পনাকে স্বাগত জানাচ্ছি। ‘সুপার স্প্রেডার’দের চিহ্নিত করে চিকিৎসা পরিষেবার আওতায় আনলে, সংক্রমণের হার অনেকটা কমানো যেতে পারে। সাধারণ মানুষও তুলনামূলকভাবে কিছুটা নিশ্চিন্ত হবেন। অন্যদিকে, কলকাতা পুরসভার কোভিড-১৯ সংক্রান্ত উপদেষ্টা ডাঃ শান্তনু সেন বলেন, বিজ্ঞানসম্মত উপায়েই এই কাজ চলছে। পুর-এলাকায় সংক্রমণ যাতে আটকানো যায় বা কমানো যায়, সেই উদ্দেশ্যেই ‘সুপার স্প্রেডার’ চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে।