‘কল্পতরু’ বৃক্ষকে পুনর্জন্ম দিল বোটানিক্যাল গার্ডেন
ঘূর্ণিঝড়ে উপড়ে পড়েছিল শিকড়বাকড় সমেত। শতাব্দীপ্রাচীন সেই বাওবাব বৃক্ষ বা ‘কল্পতরু’ গাছকে পুনরুজ্জীবন দিল হাওড়ার শিবপুরের জগদীশচন্দ্র বসু বোটানিক গার্ডেন কর্তৃপক্ষ। ২০ মে আম্পান ঝড়ের পর থেকে মাটিতে শুয়ে থাকা এই বিরল গাছটিকে পুনরায় দাঁড় করানো হয়েছে। মাটিতে পড়ে থাকা অবস্থাতে এই দু’মাসে সেই গাছে সবুজ পাতারা উঁকি দিয়েছিল। বুঝিয়ে দিয়েছিল, প্রাণ আছে এখনও। সেবাযত্নে সেরে উঠতে পারে গুরুতর জখম এই গাছ। অবশেষে কর্তৃপক্ষের তৎপরতায় কলকাতা মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের অত্যাধুনিক বিশাল ক্রেনের সাহায্যে গাছটিকে পুনরায় স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। জাতীয় এই উদ্যানের কর্তারা আশাবাদী, আফ্রিকার মরুদেশের প্রজাতি এই গাছের বাঁচার লড়াই শেষপর্যন্ত সফল হতে চলেছে। কিছুদিনের মধ্যেই আগের অবস্থাতে ফিরে আসবে শতাব্দীপ্রাচীন কল্পবৃক্ষ। কথিত আছে, এই গাছের তলায় দাঁড়িয়ে কিছু চাইলে তা পূরণ হয়। আদতে প্রচুর পরিমাণ জল ও তাতে দ্রবীভূত স্বাস্থ্যকর খনিজ পদার্থের আধার এই গাছটি। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আমাদের রাজ্যে বাওবাব মাত্র দু’টি রয়েছে। একটি এই উদ্যানে, আরেকটি কলকাতার আলিপুরে হর্টিকালচার উদ্যানে। আমাদের গোটা দেশেও খুব বেশি নেই এই গাছ।
মধ্যপ্রদেশের একটি জাতীয় অরণ্য যে গুটিকয়েক রয়েছে। বোটানিক্যাল গার্ডেনের যুগ্ম ডিরেক্টর ডঃ কণাদ দাস বলেন, অনেক গাছ সহজে প্রতিস্থাপন করা গেলেও বাওবাব গাছের ক্ষেত্রে আমাদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। প্রথমবারের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে আবার আটঘাট বেঁধে নামা হয়। এত ভারী ওজনের এবং লম্বা গাছ পুনরায় সোজা করে দাঁড় করানোর জন্য বিশাল ভারী ক্রেনের প্রয়োজন ছিল। এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কলকাতা মেট্রো রেল, কেন্দ্রীয় পূর্ত দপ্তর, কেন্দ্রীয় হর্টিকালচার বিভাগের সাহায্য নেবে বলে ঠিক হয়। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জন্য একটি অত্যাধুনিক ক্রেন হাওড়াতেই ছিল, সেটি আনা হয়। তার আগে বাওবাব গাছের ক্ষতিগ্রস্ত মূলকে ছত্রাকনাশক বিশেষ তরল দিয়ে শুশ্রূষা করা হয়। ঘূর্ণিঝড়ে বোটানিক গার্ডেনের বহু গাছের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। এমনকী বিশ্বখ্যাত ‘দি গ্রেট বেনিয়ান ট্রি’র প্রায় ৪০টির স্তম্ভমূল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে ১০টি স্তম্ভমূলকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া গিয়েছে। এছাড়াও আরও প্রায় ৩০টি বিরল গাছকে ইতিমধ্যে উদ্যানে পুনরায় স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ গাছই রাজ্যের মধ্যে একমাত্র শিবপুর বি গার্ডেনেই রয়েছে।
যেমন কয়েকদিন আগে এই উদ্যানের একমাত্র রুদ্রাক্ষ গাছটিকেও এভাবে পুনরায় সোজা করে লাগানো হয়েছে বলে জানান কণাদবাবু। তিনি বলেন, ঝড়ের পর কোন কোন গাছকে পুনরুজ্জীবন দেওয়া যাবে, তা ঠিক করতে উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা একটি সমীক্ষা চালিয়ে রিপোর্ট তৈরি করেন। সেই মতো পুনরায় গাছগুলিকে স্থাপন করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউন না চললে এই কাজ আরও দ্রুত করা যেত।