রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

বেসরকারি হাসপাতালকে ৭ দফা নির্দেশ, রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের

August 3, 2020 | 2 min read

কোভিড–আক্রান্ত রোগী ভর্তিতে শয্যা–সঙ্কট দূর করা, বিলে লাগাম টানা, ওষুধ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ মানা, পিপিই নামে অতিরিক্ত চার্জ না নেওয়া–সহ ৭ দফা কড়া অ্যাডভাইসরি দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন। টেস্ট থেকে শুরু করে করোনা চিকিৎসা— স্বাস্থ্য কমিশনের জারি করা অ্যাডভাইসরি সব বেসরকারি হাসপাতালে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিশনের চেয়ারপার্সন কলকাতা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীমকুমার ব্যানার্জি।  তিনি বলেছেন, ‘বিলে রাশ টানা, ওষুধের খরচ কমানো, রোগীরা ভর্তির জন্য শয্যা যাতে পান এই সমস্ত বিষয়ে আমরা জোর দিচ্ছি। মূল উদ্দেশ্য, পরিষেবা পেতে গিয়ে সাধারণ মানু্ষকে যাতে হয়রানির শিকার হতে না হয়।’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বিল  কমানোর বিষয়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে আগেই সতর্ক করেছিলেন। কোভিড সংক্রমণে গুরুতর অসুস্থদের হাসপাতালে ভর্তির প্রক্রিয়া যাতে মসৃণ হয় সেদিকেও নজর দিচ্ছে রাজ্য সরকার। 

অভিযোগ, কোভিড সুরক্ষা বর্মর নামে যেমন খুশি টাকা নিচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। পিপিই, মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজারের নামে অতিরিক্ত বিল নেওয়া যাবে না। কোভিড রোগীর বিলে রাশ টানার ব্যাপারে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে স্বাস্থ্য কমিশন আগেও নির্দেশ দিয়েছিল। এদিন আবারও অ্যাডভাইসরি দিয়ে তাতে বলা হয়েছে, পিপিই বাবদ সরকার দৈনিক যে ১০০০ টাকা খরচের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দিয়েছে তা–ই নিতে হবে। পিপিই ছাড়াও সুরক্ষার জন্য মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজার, হেড গিয়ার প্রভৃতি প্রয়োজনীয় সামগ্রী ‘‌কোভিড প্রোটেকশন চার্জ’‌ হিসেবে ওই ১,০০০ টাকার মধ্যেই রাখতে হবে। অন্যদিকে, বহির্বিভাগে কোভিড সুরক্ষার নামে রোগীর কাছ থেকে ৫০ টাকার বেশি চার্জ নেওয়া যাবে না।

করোনা টেস্টের খরচ বাবদ সরকার যে মূল্য অর্থাৎ ২,২৫০ টাকা বেঁধে দিয়েছে সেটাই নিতে হবে। অধিকাংশ বেসরকারি ল্যাবরেটরি থেকে বাড়তি টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পেয়েছে কমিশন। এমনকী রোগীর বাড়িতে সোয়াব সংগ্রহ করতে গিয়ে যাতায়াত খরচ বাবদ বাড়তি টাকা নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ। সেখানেও কমিশন রাশ টেনে জানিয়েছে, যাতায়াত খরচ বাবদ দূরত্ব অনুযায়ী প্রতি কিলোমিটার–পিছু ১৫ টাকা নেওয়া যেতে পারে।

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া রোগীকে অহেতুক নির্দিষ্ট ব্র‌্যান্ডের দামি ওষুধ দেওয়া যাবে না। বাজারে অনেক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক্স রয়েছে, যা বিভিন্ন দামে পাওয়া যায়। দামি ওষুধের দাম বিলে ধরা যাবে না। অভিযোগ, অনেক জায়গায় রোগীর পরিবারের সাধ্যের বাইরে ওষুধের বিল হচ্ছে। কোন ব্র‌্যান্ডের ওষুধের খরচ রোগীর পরিবার দিতে পারবে তা হাসপাতালকে জেনে পরিবারকেই বাছাই করার সুযোগ দিতে হবে।

উদাহরণস্বরূপ আইসিইউ, আইটিইউ–তে সাধারণত ‘‌মেরোপেনম’ ওষুধ ব্যবহৃত হয়।  যেটি বিভিন্ন ব্র‌্যান্ডের একাধিক দামে দোকানে পাওয়া যায়। ‌এই ধরনের ওষুধ অন্তত ৩–৪ রকমের ব্র‌্যান্ডের ফার্মাসিকে মজুত রাখতে হবে। চিকিৎসক নির্দিষ্ট ব্র‌্যান্ড প্রেসক্রাইব না করলে চেষ্টা করতে হবে তুলনায় কম দামের অন্য ব্র‌্যান্ডের ওষুধ দেওয়ার।

রোগীর তুলনায় শয্যাসংখ্যা কম, তাই কোভিড রোগীকে ভর্তির ক্ষেত্রে অন ডিউটি চিকিৎসককে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য কমিশন। শয্যার অভাবে রোগীদের দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। কোনও সুপারিশ বা অন্য কারও বিবেচনা উপেক্ষা করে ইমার্জেন্সিতে আসা কোন রোগীকে শয্যা দেওয়া প্রয়োজন, সেই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি অন ডিউটি চিকিৎসক নিক, অ্যাডভাইসরি স্বাস্থ্য কমিশনের। আইসিইউ, আইটিইউ–তে স্থানান্তরের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি বুঝে একই পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।

জোর করে শয্যা আটকে রাখা যাবে না। রোগীর শারীরিক অবস্থা বুঝে সুস্থ থাকলে চিকিৎসক রোগীকে ছুটির পরামর্শ দেবেন। বাড়িতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ রোগীকে ফোনে গাইড করতে হবে। তবে ছুটির পরামর্শ দেওয়া সত্ত্বেও কোনও রোগী ছুটি না নিতে চাইলে তাঁদের সেফ হোম বা স্যাটেলাইট সেন্টারে স্থানান্তর করতে হবে। এতে শয্যা–সঙ্কট কিছুটা দূর হবে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#covid-19, #Private Hospital

আরো দেখুন