দেশ বিভাগে ফিরে যান

৩৭০ ধারা লোপের জন্যই সীমান্তে অশান্তি 

August 5, 2020 | 2 min read

জম্মু ও কাশ্মীর থেকে সংবিধানের ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের সঙ্গে ভারত-চীন সীমান্ত বিবাদের যোগ রয়েছে বলে জানালেন পাকিস্তানে চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র ওয়াং জিয়ানফেং। কূটনৈতিক মহলের মতে, ৩৭০ ধারা বিলোপের জন্যই যে পূর্ব লাদাখ সীমান্তে অশান্তি চলছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন ওই চীনা আধিকারিক।

টুইটবার্তায় ওই আধিকারিক বলেন, ‘কাশ্মীরের মর্যাদা পরিবর্তন এবং আঞ্চলিক উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভারতের একতরফা পদক্ষেপগুলি চীন এবং পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়েছে এবং ভারত-পাকিস্তান ও চীন-ভারত সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে।’

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যোগসূত্র বজায় রাখার দায়িত্ব পালন করেন জিয়ানফেং। যিনি টুইটারে নিজেকে ইসলামাবাদে চীনা দূতাবাসের প্রেস অফিসার হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি যে টুইট করছিলেন, তা যদিও বা নিজের মত হয়, তা সত্ত্বেও এই প্রথম কোনও চীনা আধিকারিক নয়াদিল্লী-বেজিংয়ের সীমান্ত দ্বন্দ্বের সঙ্গে কাশ্মীরের যোগসূত্র টানলেন।

সেই টুইটের সঙ্গে ‘চীন ইনস্টিটিউটস অফ কনটেম্পরাপি ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস’-এর বিশেষজ্ঞ ওয়াং শিদার একটি নিবন্ধও জুড়েছেন জিয়ানফেং। সেই লেখায় ভারত-চিন সীমান্ত বিবাদের সঙ্গে কাশ্মীরের মর্যাদা পরিবর্তনের যোগ রয়েছে বলে দাবী করা হয়েছে। সেই নিবন্ধের শুরুতেই বলা হয়েছে, ‘কাশ্মীরের মর্যাদা পরিবর্তন এবং আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়ানোর ক্ষেত্রে’ গত বছর আগস্ট থেকে ‘লাগাতার একতরফা পদক্ষেপ’ নিচ্ছে ভারত।

একইসঙ্গে চীনের সুরক্ষা মন্ত্রক বা প্রধান গোয়েন্দা এজেন্সির স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রভাবশালী সংস্থার ওই বিশেষজ্ঞের সেই নিবন্ধে বলা হয়েছে, কাশ্মীরের মর্যাদা পরিবর্তন করা নিয়ে ভারতের সিদ্ধান্তে ‘আঞ্চলিক শান্তির ক্ষেত্রে বড়সড় সংকট তৈরী হয়েছে’।

গত বছর ৫ই আগস্ট যখন জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপ করা হয়েছিল, তখন নয়াদিল্লীর সেই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে দুটি বিবৃতি জারি করেছিল বেজিং। 

পূর্বতন রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীর ভেঙে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করা নিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘ভারত-চীন সীমান্তের পশ্চিম দিকের চীনা ভূখণ্ডকে ভারতের প্রশাসনিক ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তির বরাবর বিরোধিতা করেছে চীন।’ লাদাখ নিয়ে বেজিংয়ের তরফে সেই ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছিল।

শিদার প্রবন্ধেও লাদাখ প্রসঙ্গ তোলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘চীনের দিকে মানচিত্রে ভারত নয়া ভূখণ্ডের প্রসার ঘটিয়েছে। জিনজিয়াং এবং তিব্বতের স্থানীয় (প্রশাসনের) আওতার জায়গাকে লাদাখ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বানানো হয়েছে এবং তথাকথিত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীরের মধ্যে পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরকে রেখেছে।’ আর সেজন্যই পূর্ব লাদাখ সীমান্তে চীন অশান্তি পাকাচ্ছে বলে নিবন্ধে স্বীকার করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘এটা চীনকে কাশ্মীর বিতর্কে জড়িয়েছে এবং কাশ্মীর ইস্যুতে চীন এবং পাকিস্তানকে পালটা পদক্ষেপ করতে বাধ্য করেছে, নাটকীয়ভাবে চীন এবং ভারতের মধ্যে সীমান্ত সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে জটিলতা বাড়ানো হয়েছে।’

নিবন্ধে শিদা দাবী করেছেন, গত বছর ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর যখন বেজিং সফরে গিয়েছিলেন, তখন এই বিষয়গুলিতে চীনের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন সেদেশের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ইউ। তিনি বলেছিলেন, ‘ভারতের পদক্ষেপ চীনের সার্বভৌমত্বের অধিকার এবং স্বার্থকে চ্যালেঞ্জ করেছে এবং দু’দেশের সীমান্ত এলাকায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার চুক্তিকে লঙ্ঘন করেছে।’ যদিও সেই সময় জয়শংকর স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, নয়াদিল্লী যা পদক্ষেপ করেছে তা একান্তই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং তাতে ভারতের বাইরের সীমান্তের উপর কোনও প্রভাব পড়বে না।

তা সত্ত্বেও গত মাস দুই আগে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পূর্ব লাদাখের একাধিক জায়গায় ভারত-চীন দ্বন্দ্ব শুরু হয়। কূটনৈতিক এবং সামরিক স্তরে আলোচনার মাধ্যমে সেই সমস্যার ‘দ্রুত সমাধান’-এর উপর জোর দেওয়া হলে সেই অশান্তি বন্ধ হয়।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#JAMMU AND KASHMIR, #Article 370

আরো দেখুন