মেঝেতে রামচন্দ্রের ছবি, পাশে জুতো , পুজোপাঠে পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদকে ঘিরে তুঙ্গে বিতর্ক
মেঝেতে রামচন্দ্রের ছবির কাছে জুতো রেখে পুজোপাঠ করায় বিতর্কে জড়ালেন পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো (Jyotirmay Singh Mahato)। রাম মন্দিরের ভূমিপুজোর দিন গত বুধবার সন্ধেয় প্রদীপ প্রজ্বলনের কর্মসূচি সেরে তার নানা ছবি তিনি নিজে ফেসবুকে পোষ্ট করতেই বিতর্ক দানা বাঁধে।
রাত ৮.৩৭ মিনিট নাগাদ তাঁর ওই পোস্টে দেখা যায়, ফ্রেমে বাঁধানো রামচন্দ্রের ছবি ঘরের মেঝেতে রেখে প্রদীপ জ্বালিয়ে আরাধনা করছেন তিনি। সঙ্গে রয়েছেন আরও কয়েকজন। আর তার পাশেই রয়েছে দু’জোড়া জুতো। জনপ্রতিনিধির এমন রাম পুজোর ছবি রাত থেকেই সোশ্যাল সাইটে ছড়িয়ে পড়ে।
সাংসদকে রীতিমতো কাঠগড়ায় তুলে সমালোচনা করতে থাকেন বিরোধী-সহ সাধারণ মানুষজনও। বৃহস্পতিবার বেলার দিকে পুরুলিয়া বজরং দল সাংসদের ওই রাম পুজো নিয়ে সরব হতেই বিষয়টি অন্য মাত্রা পেয়ে যায়। সোশ্যাল সাইটে সরাসরি বজরং দল সাংসদকে আক্রমণ করে লেখেন, “প্রভু শ্রীরামের পুজো করছেন। দীপ প্রজ্বলিত করলেন। কিন্তু প্রভুকে মাটিতে রেখে। এই আদর্শ আপনার? যার নাম করে সব থেকে বেশি ভোটে পশ্চিম বাংলাতে জয় করলেন আজ ওনাকে মাটিতে রাখলেন। এটা হিন্দু হিসাবে আমরা মানতে পারছি না।” বজরং দলের এই পোস্টের শেষে রীতিমতো হুঁশিয়ারির ঢঙে লেখা রয়েছে, “সব সহ্য হবে কিন্তু প্রভুজির অপমান সহ্য হবে না। সবাই ভাল করে শুনে রাখুন, যে রকম সম্মান দেবে, সেরকম ফেরত পাবে।”
ঝাড়খণ্ড লাগোয়া পুরুলিয়ায় বিজেপির সঙ্গে বজরং দলের সংঘাত বেঁধেছে বেশ কিছুদিন ধরেই। এই ঘটনায় তা একেবারে বেআব্রু হয়ে গেল। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের জেলা সহ সভাপতি সুরজ শর্মা বলেন, “ভোটের সময় রামচন্দ্রের আদর্শের কথা বলব। আর রামের পুজোর সময় তাঁর ছবি জুতোর পাশে মেঝেতে রেখে পুজো করব এ কেমন চিন্তাধারা? সাংসদ নাকি আবার রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের সদস্য ছিলেন। অথচ পুজো পাঠ করতেই শেখেননি।” এই ঘটনায় সাংসদের সংঘে থাকা নিয়েও বজরং দল সরব হয়েছে। পুরুলিয়া জেলা বজরং দল তাদের ওই পোস্টে আরও লিখেছে, “সংঘকে ব্যবহার করে বোকা বানিয়ে নিজেদের লবি চালিয়ে মানুষকেও বোকা বানাচ্ছেন। আর সংঘের আদর্শ এভাবে অপমান করা কোন দিন ঠিক না।”
এই বিষয়ে সাংসদ তথা দলের রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর প্রতিক্রিয়া নিতে গেলে তিনি মেজাজ হারান। পরে বলেন, “জুতো এক কোণাতে ছিল। বর্ষায় তো ফেলে দিতে পারিনা। সোশ্যাল সাইটে এসব তৃণমূল অপপ্রচার করছে। বজরং দল এই নিয়ে কোন কথাই বলতে পারে না।” অথচ বজরং দলের জেলা সংযোজক অভিমুন্য কুমার বলেন, “সাংসদের এমন পুজো পাঠকে ধিক্কার জানাই। পুজো পাঠের পদ্ধতি শিখে তবে সেই কাজ করা উচিত।” সাংসদের এমন পুজো পাঠে সরব হয়েছেন বিরোধীরাও। পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর তথা পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওনারা তো ধর্মপ্রাণ নন। ধর্মকে রাজনীতির আঙিনায় ব্যবহার করেন। সেটাই আরও একবার প্রমাণ হল।”