‘স্বাধীনতা দিবসের সঙ্গে অন্য দিনের তুলনা হয় না’, মোদীকে কটাক্ষ মমতার
যেমন কথা ছিল, বাস্তবেও হয়েছে তাই। ধূমধাম করে অযোধ্যায় রাম মন্দিরের ভূমিপুজো করা হয়েছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে রাম মন্দিরের শিলান্যাস করেছেন। তবে, বিতর্ক তৈরি হয়েছে তাঁর করা একটি মন্তব্যকে ঘিরে। শিলান্যাস সেরে নিজের বক্তৃতায় রাম মন্দির আন্দোলনকে স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে তুলনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বুধবার এ নিয়ে সুর চড়িয়েছিল বামেরা। ব্রিটিশদের ‘চরবৃত্তি’ করার অভিযোগে মোদী তথা বিজেপিকে একহাত নিয়েছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। অতটা না হলেও এবার মোদীর সেই ‘স্বাধীনতা’ মন্তব্যকে খারিজ করে দিলেন তৃণমূল নেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বৃহস্পতিবার মমতা বলেন, ‘ স্বাধীনতা দিবস আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় দিন। স্মরণীয়, ঐতিহাসিক ও গণতান্ত্রিক দিন। এই দিনের সঙ্গে অন্য কোনও দিনের তুলনা হয় না।’ সেইসঙ্গেই তিনি সাফ জানান, ‘স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায়। এই দিনটাই আমাদের জীবনের সব থেকে স্মরণীয়, বরণীয় দিন। অন্য কোনও দিনই এর সঙ্গে তুলনীয় নয়।’ সেইসঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী এদিন রাজ্যবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে এই বছর কেউ বাইরে কোনও অনুষ্ঠান করবেন না স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে। সবাই নিজের নিজের ঘরে পতাকা তুলুন, ছোট করে অনুষ্ঠান করুন।’
উল্লেখ্য, রাম মন্দিরের শিলান্যাস হওয়ায় সরযূ নদীর তীরে স্বর্ণযুগের সূচনা হল বলে দাবি করছেন রাম ভক্তরা। আর সেই ‘স্বর্ণযুগের’ সূচনা করেছেন স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যদিও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী হয়ে মোদী কীভাবে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নেতৃত্ব দিলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। তবে, তার চেয়েও বেশি বিতর্ক তৈরি হয়েছে তাঁর স্বাধীনতা মন্তব্যে। রাম মন্দিরের ভূমিপুজো সেরেই রাম মন্দিরের ভূমিপুজোর অনুষ্ঠানটিকে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে তুলনা করেছেন মোদী। তিনি বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে সারা দেশ যেমন যোগ দিয়েছিল, তেমনই রাম মন্দিরের জন্যেও অসংখ্য মানুষ বলিদান দিয়েছেন। আজ সেইসব মানুষদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হল। ১৫ অগস্ট যেমন ভারতের স্বাধীনতা দিবস, তেমনই আজকের দিনটি ত্যাগ, সংকল্পের প্রতীক হিসেবে মনে রাখবে গোটা বিশ্ব।’
মোদীর এই মন্তব্যের পরই তাঁকে আক্রমণে নামে বামেরা। কলকাতা থেকে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক কটাক্ষের সুরে বলেন, ‘দেশের প্রধানমন্ত্রী মুখে স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা বলছেন, এটা হাস্যকর। যারা স্বাধীনতা সংগ্রামের গোটা পর্বে ব্রিটিশের চরবৃত্তি করেছিল, তাঁরাই আজ দেশের স্বাধীনতার কথা বলছেন।’ এখানেই না থেমে আরও সুর চড়ান সূর্যকান্ত। বলেন, ‘যাঁরা ব্রিটিশদের মুচলেকা লিখে দিয়েছিল। তাঁরা দেশের স্বাধীনতাকে মন্দির প্রতিষ্ঠার সঙ্গে তুলনা করছেন। আমি জানি না প্রধানমন্ত্রী আন্দামানে গিয়েছেন কিনা, গেলে যে কেউ দেখতে পাবেন, ওখানে সব নাম লেখা আছে। সেই লেখা নামে ওদের একটা নামও দেখাতে পারবেন?’ এরপরই সূর্যকান্ত টেনে আনেন সাভারকারের নাম। বলেন, ‘একজন ছিলেন সাভারকর, তিনি ব্রিটিশদের মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছিলেন। স্বাধীনতার সময় ওদের কাজ ছিল কেবল ব্রিটিশের চরবৃত্তি করা।’ এতটা চড়া সুরে না হলেও এবার মোদীর মন্তব্যের বিরোধিতায় নামলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।