পুজোর আগে লোকসানের ক্ষতে প্রলেপ দিতে মরিয়া শপিংমলগুলি
করোনা আবহে তাল কেটেছে ফ্যাশন দুনিয়ার। অর্থনৈতিক পড়তির কারণে বিলাসিতার ধারেকাছে নেই শহরবাসী। ফলে ভয়ঙ্কর ছেদ পড়েছে আধুনিক মল কালচারে। অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী ছাড়া নিত্যনতুন জামাকাপড় কেনা বন্ধ। গত চার মাসে শহরের বিভিন্ন নামজাদা মলে বিক্রিবাটা একেবারে তলানিতে। প্রতিদিন স্টোর খুললেও হাতেগোনা কয়েকজন কাস্টমার ছাড়া বেচাকেনা প্রায় নেই বললেই চলে। শহরের প্রায় সবকটি বড় শপিং মলের গোডাউনে পড়ে রয়েছে কোটি কোটি টাকার স্টক। এই ভয়ানক ক্ষতি সত্ত্বেও দুর্গাপুজোকেই এখন পাখির চোখ করতে চাইছে শপিংমলগুলি। কোভিডের বাড়বাড়ন্তে সমস্ত ব্যবসা বিশবাঁও জলে। শহরের শপিংমলগুলি তার বাইরে নয়। খাবার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু জিনিস ছাড়া মলের ফ্যাশন স্টোরে পা পড়ছে না কোনও ক্রেতার। ধর্মতলার এক নামজাদা শপিংমলের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিপার্টমেন্ট ম্যানেজার বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, গত চার মাসে মলের দৈনিক সেল ৩০-৫০ শতাংশ কমে গিয়েছে। মূলত সাধারণ মানুষের হাতে টাকা না থাকায় এই অবনতি বলে মনে করছেন তিনি। তিনি পরিসংখ্যান দিয়ে জানান, প্রাক-করোনা পর্বে এই স্টোরের জামাকাপড়ের বিভাগে প্রতিদিন গড় বিক্রি ছিল ১০-১২ লক্ষ টাকা। যা এখন দু’-তিন লক্ষ টাকায় নেমে এসেছে। একইসঙ্গে খাবার এবং অন্যান্য সামগ্রী মিলিয়ে দৈনিক গড় বিক্রি কমেছে প্রায় ২৫-৩০ লক্ষ টাকা। দক্ষিণ কলকাতার আরও এক জনপ্রিয় শপিংমলের অবস্থাও প্রায় এক। সেখানকার স্টোর ম্যানেজার জানিয়েছেন, তাঁদের গোডাউনে পড়ে রয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকার জামাকাপড়। তাঁর মতে, পুজোর সময় এই সমস্ত স্টক খালি করে দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে ক্রেতাদের জন্য কিছু বাড়তি ছাড় দিয়েই গোডাউন খালি করতে চাইছেন তাঁরা।
প্রতিবছর আগস্টের শুরু থেকেই ধীরে ধীরে দুর্গাপুজোর কেনাকাটা শুরু হয়। তবে চলতি পরিস্থিতির নিরিখে সেই কেনাকাটা যে বেশ খানিকটা বিলম্বিত হবে, তা বলাই বাহুল্য। শপিংমল কর্তৃপক্ষগুলির দাবি, দেরিতে শুরু হলেও পুজোকে কেন্দ্র করে কেনাকাটার ধুম ফিরবে। তবে আগের তুলনায় মানুষ অনেক বেশি সংযত হয়ে খরচ করবেন, ধারণা বিভিন্ন নামজাদা শপিংমল সংস্থার। শহরের প্রায় প্রতিটি সংস্থার মতে, স্বাধীনতা দিবসের সপ্তাহ থেকেই পুজোর কেনাকাটা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। তাই এই সময় জামাকাপড় এবং অন্যান্য সামগ্রীর উপর বিশেষ সেল দিয়ে থাকেন তাঁরা। করোনা পরিস্থিতিকে মাথায় রেখে জমে থাকা স্টক খালি করার জন্য এবছরও ছাড়ের পরিকল্পনা করছেন বিভিন্ন শপিংমল সংস্থার কর্ণধাররা। নির্দিষ্টভাবে দুর্গাপুজোর জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা এখনও ঠিক করেনি কোনও মল কর্তৃপক্ষ। তবে ক্রেতাদের যে খরা করোনাকালে তীব্রভাবে দেখা গিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে কাটবে বলে আশাবাদী শপিংমলগুলির কর্ণধার থেকে কর্মচারী সকলেই।