ভর্তির সময় ৫০ হাজার টাকার বেশি অগ্রিম নয়, বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে নির্দেশ রাজ্য সরকারের
করোনা হোক বা অন্য অসুখ, প্রাইভেট হাসপাতাল বা নার্সিংহোম ভর্তির সময় সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকার বেশি অগ্রিম চাইতে পারবে না। এক অ্যাডভাইসরি জারি করে একথা জানাল রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশন। তারা জানিয়েছে, এক্ষেত্রে চিকিৎসা খরচের আনুমানিক হিসেবের ২০ শতাংশ বা ৫০ হাজার টাকা, যেটা কম হবে, সেটাই তারা নিতে পারবে। তার বেশি নয়। সেই মুহূর্তে এই টাকা না থাকলেও রোগীকে জরুরি চিকিৎসা দিতে হবে এবং টাকা জমা দিতে ১২ ঘণ্টা সময় দিতে হবে। ১২ ঘণ্টাতেও টাকা না দিলে ভর্তি বাতিল হবে এবং পরবর্তী এক ঘণ্টায় অন্যত্র নিয়ে যেতে হবে। যে ক’দিন প্রাইভেট হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে রোগী ভর্তি থাকবেন, রোজ তাঁকে বিলের অঙ্ক হোয়াটসঅ্যাপ, এসএমএস বা ই-মেলে জানাতে হবে। অনলাইন পদ্ধতিতে বিলের টাকা নিতে হবে। যদি সম্ভব না হয়, নগদ টাকা দেওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই রসিদ দিতে হবে। এছাড়াও কমিশন জানিয়েছে, রোগ ও রক্তপরীক্ষার বিল দু’হাজার টাকার বেশি হলে অবশ্যই বাড়ির লোকের লিখিত সম্মতি প্রয়োজন। এক্ষেত্রে তাঁদের রেকর্ড করা টেলিফোনে সম্মতিসূচক কথাবার্তাও গ্রাহ্য হবে। রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ক্যাশলেস পরিষেবা প্রাপ্য হলে কোনও অগ্রিম নেওয়া যাবে না। করোনা পরিস্থিতিতে উদ্ভূত ঘটনাবলির জন্য এই নির্দেশ জারি হলেও করোনা, নন-করোনা সব রোগীর ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে।
এদিকে শনিবার সকাল আটটা নাগাদ দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা ৫৮ বছর বয়সি এক করোনা রোগী কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। শুক্রবার রাত ১০টা নাগাদ ওই রোগীকে হাসপাতালের সুপার স্পেশালিটি ব্লকের চারতলার ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। এদিন সকালে অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে তিনি ওয়ার্ডে কাচের জানলা ভেঙে কার্নিশে চলে যান। ঘটনাটি এক স্বাস্থ্যকর্মী দেখে ফেলায় তাঁকে দ্রুত উদ্ধার করা সম্ভব হয়। তাঁর কাউন্সেলিং চলছে। এখানকার রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান ডাঃ নির্মল মাজি জানান, ওই রোগী জানিয়েছেন, দক্ষিণ কলকাতার আলিপুর লাগোয়া একটি প্রাইভেট হাসপাতালে উনি ভর্তি ছিলেন। লাগামছাড়া বিল ও নানা কারণে বিধ্বস্ত ছিলেন তিনি। আলিপুর থেকে মেডিক্যালে আসতে অ্যাম্বুলেন্স বাবদ ১৩ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। তাঁকে এনিয়ে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে চাপড়ার তৃণমূল বিধায়ক রুকবানুর রহমান করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত হয়েছেন নবান্নের এক পুলিস আধিকারিক সহ তিন পুলিসকর্মী। নারকেলডাঙা থানার এক পদস্থ আধিকারিকের শরীরেও করোনা ধরা পড়েছে। শনিবার রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৯৪৯ জন। মোট আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯২ হাজার ৬১৫ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যু হয়েছে ৫১ জনের। ফলে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ২ হাজার ৫ জন। সেইসঙ্গে একদিনে ২৫ হাজার করোনা পরীক্ষা করার লক্ষ্যমাত্রা পার করল রাজ্য। সদ্য করোনায় মৃত তরুণ হার্ট সার্জেন ডাঃ নীতীশ কুমারের পরিবারকে শনিবার পাঁচ লক্ষ টাকা অর্থসাহায্য করেছে ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম। করোনা যোদ্ধা চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হলে, হাসপাতালে শয্যার ব্যবস্থার দাবি তোলা হয়েছিল স্বাস্থ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকে। সচিব সেই দাবি মেনেছেন। এদিকে চিকিৎসকদের করোনা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রতি রবিবার অনলাইন প্রশ্নোত্তর ও আলোচনার আয়োজন করছে স্বাস্থ্য দপ্তর।