বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

বাংলার গৃহস্থালি থেকে হারিয়েছে ঘুঁটে

August 10, 2020 | 2 min read

সামান্য কিছু বছর আগে পর্যন্তও বেশীরভাগ গৃহস্থ বাড়িতে রান্নার জন্য রান্নাঘরে কিংবা সিঁড়ির নীচে কয়লা আর ঘুঁটের সহাবস্থান দেখতেই অভ্যস্থ ছিল আমাদের চোখ৷ অথচ এখন শহর তো বটেই, গ্রামাঞ্চলেও রান্না করার ক্ষেত্রে ঘুঁটের ব্যবহার কমতে কমতে প্রায় শূন্যে এসে দাঁড়িয়েছে৷ 

কাঠের উনুনে খুব বেশী প্রয়োজন না হলেও কয়লার উনুন ধরাবার সময় আগে ঘুঁটে জ্বালিয়ে নেবার রেয়াজ ছিল সব হেঁসেলেই৷ তা ছাড়া শুধু ঘুঁটে জ্বালিয়েও রান্না হত অনেক বাড়িতে৷ এখনকার মতো গ্যাস সমস্ত রান্নাঘরে অপরিহার্য হয়ে ওঠেনি৷ 

শহরাঞ্চলে একটু বেলা হলেই অল্প কিংবা মধ্যবয়সি মহিলারা মাথায় ঝুড়ি ভর্তি ঘুঁটে নিয়ে শহরের রাস্তায় রাস্তায় ফেরি করে বেড়াত ‘ঘুঁটে নিবি গো , ঘুঁটে ’ বলে৷ বাড়ির মেয়েরা ঘুঁটেওয়ালিকে ডাকত৷ ঘুঁটেওয়ালি মাথা থেকে ঘুঁটের ঝুড়ি নামিয়ে কিছুক্ষণ দাওয়ায় বসত৷ এক গ্লাস জল চেয়ে খেত৷ চেনা হয়ে গেলে দুই চারটি সুখ দুঃখের কথাও আলোচনা করত৷ ঘুঁটের সাইজ কিংবা ঠিকঠাক শুকনো কি না এই নিয়ে দর দাম চলত৷ তার পর হারিয়ে যাওয়া হিসাবের একক ‘গণ্ডা এবং পন ’ দিয়ে ঘুঁটের বিক্রীর হিসাব তৈরী হত৷

ঘুঁটে তৈরী হয় গোবর থেকে৷ এখনও হয়৷ গোবরের সাথে একটু ছাই, মাটি , খড়ের টুকরো মেশান হয় যাতে নরম গোবর কিছুটা শক্ত হয় পাশাপাশি যাতে কিছুটা লাভজনক হয়ে ওঠে ঘুঁটে বিক্রীর ব্যবসা৷ এভাবে ছোটো গোবরের তাল তৈরী করে তা দেয়ালে কাছ থেকে ছুড়ে মারলে বিজ্ঞানের নিয়মে গোল ডিসের আকারে তা দেয়ালে কিংবা মাটির ওপরে আটকে যায়৷ দুই তিনদিন রোদ্দুরে শুকোলে তা দেয়াল বা মাটি থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হয়৷ তৈরী হয়ে যায় আমাদের আলোচ্য ঘুঁটে৷ 

রাঁধুনি বা যিনি উনুন ধরান তিনি ঘুঁটে ভেঙে তাতে কিছুটা কেরোসিন তেল ছিটিয়ে দিতেন যাতে ঘুঁটে তাড়াতাড়ি জ্বলে৷ তার পর দেশলাই কাঠি জ্বেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হত তাতে৷ ঘুঁটের আগুন ধীরে ধীরে কয়লাকে জ্বালাত৷ তার পর শুরু হত রান্না৷ রান্নার মাঝ পথে আঁচ কমে গেলে কিছুটা ঘুঁটে ভেঙে দেওয়া হত বাকি রান্না শেষ করার জন্য৷ এ ভাবেই বাঙালির হেঁসেলে ঘুঁটে ছিল এক অপরিহার্য বস্ত্ত , রান্নার উপকরণ৷ 

এখন বলতে গেলে সেই ঘুঁটেও নেই, ঘুঁটেওয়ালিও নেই৷ এখন আর শোনা যায় না ‘ঘুঁটে নেবি গো , ঘুঁটে ’ ডাক৷ 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Ghute, #Domestic People

আরো দেখুন