বাড়াতে হবে টেস্ট, কনট্যাক্ট ট্রেসিং, মুখ্যমন্ত্রীদের বললেন মোদী
সুস্থতার হার বাড়ছে। তবে মৃত্যুর হার ১ শতাংশের নীচে নামিয়ে আনতে হবে। মঙ্গলবার ১০ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে এমনই বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গত কয়েক দিন ধরে দেশে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৬০ হাজারের কোটায় ঘোরাফেরা করছিল। এ দিন তা কমে ৫৩ হাজারে এসে ঠেকেছে। সেইসঙ্গে গত কয়েক দিনে সুস্থতার হারও তুলনামূলক বেড়েছে। করোনা মোকাবিলায় একজোটে লড়াই চালিয়ে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
দেশের যে ১০ রাজ্যে এই মুহূর্তে করোনার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি, মঙ্গলবার ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে সেখানকার মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাতে শামিল হয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এ ছাড়াও ছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, পঞ্জাব, বিহার, গুজরাত, তেলঙ্গানা এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীরা। করোনা পরিস্থিতি সামাল দেওয়া নিয়ে কী কী পদক্ষেপ করা যেতে পারে এবং এই মুহূর্তে কোথায় কোনও খামতি রয়েছে কিনা, তা নিয়ে এ দিন সবিস্তার আলোচনা হয় তাঁদের মধ্যে।
সেখানেই বিভিন্ন রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে যত সংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত, তাঁদের ৮০ শতাংশই এই ১০ রাজ্যে রয়েছেন। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই ১০ রাজ্যের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মুহূর্তে দেশে করোনা রোগীর সংখ্যা ৬ লক্ষের বেশি। তার মধ্যে অধিকাংশই এই ১০ রাজ্যের মানুষ। তাই এই ১০ রাজ্যে যদি করোনাকে হারানো যায়, তাহলেই করোনার বিরুদ্ধে লড়াই সফল হবে গোটা দেশের।’’
কোনও ব্যক্তির শরীরে করোনা ধরা পড়লে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যদি তাঁর সংস্পর্শে আসা সকলের পরীক্ষা করানো যায়, তাহলেও করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই আয়ত্তে এনে ফেলা সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনও ব্যক্তির শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর সংস্পর্শে আসা সকলের করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। তাতে সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। তাই ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সংক্রমিতের সংস্পর্শে আসা সকলকে চিহ্নিত করে পরীক্ষার করতে হবে। আলাদা করতে হবে কনটেনমেন্ট জোনগুলিকে।’’
করোনা পরীক্ষায় জোর দেওয়া হয়েছে বলেই, সংক্রমণ শনাক্তকরণ এবং তা প্রতিহত করা সম্ভব হচ্ছে বলে মত মোদীর। তাঁর কথায়, ‘‘দৈনিক করোনা পরীক্ষার সংধ্যা ৭ লক্ষে এসে পৌঁছেছে এবং আরও বাড়ছে। তার ফলেই আরও বেশি করে সংক্রমণ শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। রোখা যাচ্ছে নতুন সংক্রমণও। বাকি দেশ গুলির তুলনায় আমাদের এখানে মৃত্যুর হার আগেও কম ছিল। যত দিন যাচ্ছে তা আরও কমছে, যা অত্যন্ত সন্তোষজনক।’’
এই মুহূর্তে দেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২২ লক্ষ ৬৮ হাজার ৬৭৫। তার মধ্যে ১৫ লক্ষ ৮৩ হাজার ৪৮৯ জন ইতিমধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। অর্থাৎ মোট আক্রান্তের ৬৯ শতাংশের বেশি মানুষ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তাই দেশ সঠিক পথেই এগোচ্ছে বলে এ দিন মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘মৃত্যুর হার লাগাতার কমতে থাকার পাশাপাশি, সুস্থতার হার প্রতিদিন বেড়ে চলেছে। এতেই বোঝা যায় সঠিক পদক্ষেপই করেছি আমরা। ঠিক পথেই এগোচ্ছি। তবে মৃত্য়ুর হার ১ শতাংশের নীচে নামিয়ে আনতে হবে।’’
করোনার প্রকোপে দেশ জুড়ে যে মহামারি পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে, তার বিরুদ্ধে কেন্দ্র এবং রাজ্য একজোটে লড়ে চলেছে বলেও জানান মোদী। তিনি বলেন, ‘‘কোভিডের কারণে উদ্ভুত মহামারির বিরুদ্ধে প্রত্যেক রাজ্যই লড়াই করছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে প্রত্যেকের ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ। সকলকে এ ভাবেই এক জোটে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’’ করোনা মোকাবিলায় এই নিয়ে সপ্তম বার বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী।