ধ্বংসকারীরা রাষ্ট্র গঠন করে না, ধ্বংস করে
৫ই আগস্ট – রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য যে তারিখটা বেছে নেওয়া হল, সেটি একটি কালাদিবসের বর্ষপূর্তিও বটে। স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে এমন একটি তারিখ বেছে নেওয়া খুবই দুঃখজনক। গত বছর, এই দিন যখন সারা দেশ ঘুমিয়েছিল, কাশ্মীর জেগে উঠেছিল কার্ফু এবং পরাধীনতায়। সেই একই দিনে একদল অপরাধী – যাদের কারাগারে থাকার কথা – তারা একটি মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন। যে মন্দির না রামের না ভারতের।
যে সংবিধানকে রক্ষা করার শপথ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, সেই সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা ধ্বংস করতে চায় তাঁর সংগঠন আরএসএস। মোদীর এই নতুন ভারতে কাশ্মীরের মানুষ পরাধীন, অপরাধী হিন্দুদের কৃতকর্মের জন্য পুরস্কৃত করা হয়। দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেওয়া হয় মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের সহায়তায়। বিজেপির পেটোয়া কিছু সংবাদমাধ্যম মিথ্যে প্রচারে ব্যস্ত।
জনমানসে দুটি ভ্রান্ত ধারণা বদ্ধমূল করে দেওয়া হয়েছে। প্রথম, সঙ্ঘ নির্মিত এই মন্দিরটি একটি হিন্দু মন্দির। দ্বিতীয়, ৩৫এ এবং ৩৭০ ধারা সরিয়ে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে সন্ত্রাস তাড়ানো হয়েছে। ১৯৮০-র দশক থেকেই আরএসএস ও বিজেপির প্রধান হাতিয়ার ছিল বাবরি মসজিদ সরিয়ে রাম মন্দির তৈরী করার প্রতিশ্রুতি। ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর আরএসএসের মদতে মসজিদ ধ্বংস করা হয়।
১৯৮৪ সালে বিজেপি লোকসভায় পেয়েছিল দুটি আসন আর ১৯৮৯ সালে জেতে ৮৫ আসন। ২০১৯ সালেও তারা মাত্র ৩৭ শতাংশ ভোট পায়। কিছু সংবাদমাধ্যম প্রচার করছে এই ভূমি পুজো দেশ বহুকাল ধরে চেয়েছিল। এর থেকে বড় মিথ্যে আর কিছু হতে পারে না। এজন্যই ভোটের শতাংশের কথা বলা হল।
মোদী বললেন কয়েক শতকের লড়াই আজ শেষ হল। অথচ সঙ্ঘের এই লড়াই মাত্র ৩৫ বছরের। মোদী এই মন্দির মামলা ত্বরান্বিত করেন। মসজিদ ভাঙার ষড়যন্ত্র যারা করেছিল, তাদের বিরুদ্ধে কেস না চালাতে সিবিআইকে ব্যবহার করা হয়। আদালত বলে ১৯৯২ সালে মসজিদ ভাঙা বেআইনি ছিল। তা সত্ত্বেও সেই জমি মন্দির তৈরীর জন্যই দেওয়া হয়।
এই রায়ের পর সরকার মন্দিরের জন্য ট্রাস্ট ঘোষণা করে। নৃত্য গোপাল দাস ও চম্পৎ রাই – যাদের কারাগারে থাকার কথা, তাদেরই এই ট্রাস্টের সভাপতি ও সচিব ঘোষণা করা হয়। মোদী ও যোগী এই মন্দিরের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে হিন্দু রাষ্ট্রের যে প্রচার করছেন তার উমটি সংবিধান দেয় না।
এখন মোদীর সঙ্গে ট্রাম্প, পুটিন, বলসোনারো, এরডোগানকে তুলনা করা হয়। কিন্তু যার অনুকরণে মোদী চলছেন তিনি হলেন চেকোস্লোভাকিয়ার রাষ্ট্রনায়ক স্লোবোদান মিলোসেভিক। প্রসঙ্গত, চেকোস্লোভাকিয়া দেশটি আর নেই। ২০০২ সালের স্মৃতিকে পিছে ফেলে ভবিষ্যতের পথে আগুয়ান ভারতবর্ষে ৫ই আগস্ট মিথ্যাচার ও রক্তাক্ত সন্ত্রাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হল মোদির হাতে।