দুই তীর্থ , এক মেট্রো, স্বপ্নপূরণ মমতার
স্বপ্নপূরণ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সম্ভবত দুর্গাপুজোর আগে ট্রায়াল। আর কালীপুজোর আগেই মেট্রোর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে দক্ষিণেশ্বর। মেট্রোর একপারের শেষ স্টেশন কবি সুভাষ। অপর পারে নোয়াপাড়া। সেখান থেকে দক্ষিণেশ্বর। মাঝখানে বরানগর। অর্থাৎ, এই একই মেট্রো লাইনে জুড়ে যাবে কালীঘাট-দক্ষিণেশ্বর।
রেলমন্ত্রী থাকাকীলন কালীঘাট ও দক্ষিণেশ্বরের মধ্যে মেট্রো সংযোগে উদ্যোগী হয়েছিলেন মমতা। রাজ্যের একাধিক রেল প্রকল্পের মধ্যে এটা ছিল তাঁর স্বপ্ন-প্রকল্প। দমদম থেকে নোয়াপাড়া—সম্প্রসারণের কাজ অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন নিয়মিত মেট্রো চলে এই রুটে। কিন্তু নোয়াপাড়া থেকে দক্ষিণেশ্বর মেট্রো সম্প্রসারণের পরিকল্পনা হোঁচট খায় জমি-জটে। রাজ্য ও রেলের যৌথ প্রচেষ্টায় সেই জট কাটে। তারপরই গতি পায় সম্প্রসারণের কাজ। টানা প্রায় ১০ বছর চলার পর কাজ এখন সম্পূর্ণ হওয়ার পথে। সম্প্রসারণ প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা রেলওয়ে বিকাশ নিগম লিমিটেড (আরভিএনএল)-এর আধিকারিক রাজকুমার দাস মঙ্গলবার বলেছেন, ‘আশা করছি, সবকিছু ঠিকঠাক চললে কালীপুজোর আগেই দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত মেট্রো চালু করতে আমরা সক্ষম হব।’
কালীপুজোকে লক্ষ্যমাত্রা ধরে শেষ পর্বের কাজ চলছে জোরকদমে। প্রতিদিনই কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখছেন আরভিএনএল ও মেট্রোরেলের আধিকারিকরা। জানা গিয়েছে, দক্ষিণেশ্বর মেট্রো স্টেশন সাজানোর কাজ প্রায় শেষ। স্টেশন হচ্ছে মন্দিরের আদলেই। স্টেশনে পৌঁছনোর জন্য থাকছে পৃথক রাস্তা। আবার শিয়ালদহ-ডানকুনি শাখার দক্ষিণেশ্বর স্টেশন থেকেও মেট্রো ধরার একটি রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। অর্থাৎ দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের সঙ্গে লোকাল ট্রেন ও মেট্রো সংযোগের একটা বৃত্ত পূর্ণ হচ্ছে মমতার স্বপ্ন-প্রকল্পের হাত ধরে।
নোয়াপাড়া থেকে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের দূরত্ব ৪.১ কিমি। মাঝখানে একটিমাত্র স্টেশন বরানগর। বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের উপর নির্মিত হচ্ছে এই স্টেশন। ডানলপ মোড় থেকেও এই স্টেশনে পৌঁছনো যাবে খুব সহজে। আরভিএনএল সূত্রের খবর, স্টেশন ভবন নির্মাণের কাজও প্রায় শেষের পথে। বসে গিয়েছে এসকালেটর। প্ল্যাটফর্মে বোর্ড লাগানোর কাজ হয়ে গিয়েছে। এখন কাজ চলছে টিকিট কাউন্টারে মেশিন ও এটিভিএম বসানোর। তবে এখনও বরানগরে সামান্য কিছু কাজ বাকি রয়েছে। রেলের ট্র্যাক বসানোর কাজ সম্পূর্ণ হলেও তা চার্জ করে বারবার পরীক্ষা করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে ট্র্যাক। মন্দির দর্শনে বিশেষ বিশেষ তিথির কথা মাথার রেখে কলেবরে বেশ বড় করা হয়েছে দু’টি স্টেশনকেই।
তবে নোয়াপাড়া থেকে দক্ষিণেশ্বর মেট্রো চলাচলে একটিমাত্র সমস্যা ভাবাচ্ছে রেলকর্তাদের। সেটা হল, দক্ষিণেশ্বরে কারশেড করার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা মেলেনি। ফলে ‘ওয়ান ওয়ে’ যাত্রার উপর নির্ভর করতে হবে দর্শনার্থীদের। অর্থাৎ, নোয়াপাড়া কারশেড থেকে যাত্রী নিয়ে ট্রেন ঢুকবে দক্ষিণেশ্বর স্টেশনে। যাত্রী নামিয়ে সেটি ফের বরানগর স্টেশনে যাবে। সেখানে ক্রসওভার থেকে লাইন বদল করে ফিরে আসবে দক্ষিণেশ্বর স্টেশনের অন্য প্ল্যাটফর্মে। তারপরই যাত্রী নিয়ে ওই ট্রেনই ফিরবে নোয়াপাড়া। সেখান থেকে দমদম হয়ে কবি সুভাষ স্টেশন। ফলে দক্ষিণেশ্বরে মেট্রোর ‘আপ ও ডাউন’ বেশ সময় সাপেক্ষ হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে বিশেষ কিছু দিনে দক্ষিণেশ্বরে দর্শনার্থীদের ভিড় হলে, তা সামলানো অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে মেট্রো কর্তৃপক্ষের আশ্বাস, যাত্রী সুরক্ষার সবদিক মাথায় রেখেই মেট্রো চলাচল করবে। যাত্রী নিয়ন্ত্রণে থাকবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাহিনীও।