দধিকাদোর মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবের সূচনা হল বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়িতে
করোনা পরিস্থিতি বদলে দিল রাজ পরিবারের পাঁচশো বছরের নিয়ম। সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে এ বছর দুর্গাপুজোয় বলি বন্ধ হল বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়িতে।
রাজা নেই। নেই রাজ্যপাটও। রয়ে গেছে রাজ পরিবারের প্রাচীন রীতি। করোনা পরিস্থিতিতে সেই রীতি মেনে নন্দ উৎসবের দিন দধিকাদো খেলার মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবের সূচনা হল জলপাইগুড়ির বৈকন্ঠপুর রাজবাড়িতে।
জন্মাষ্টমীর পরের দিন নন্দোৎসব। সেদিনই দধি কাদো খেলার মাটি দিয়ে দুর্গাপ্রতিমা গড়ার কাজ শুরু হয় বৈকন্ঠপুর রাজবাড়িতে। সেই নিয়ম অনুযায়ী বুধবার দুপুরে বিভিন্ন ভোগ সাজিয়ে দেওয়া হয় দেবী দুর্গার কাঠামোর সামনে। কাঁসর-ঘণ্টা ও ঢাকের আওয়াজে মুখরিত হয় রাজবাড়ি। নিয়ম মেনে বৈকন্ঠপুর রাজবাড়ির নাট মন্দিরে অনুষ্ঠিত হল দুর্গার ৫১১ বছরের পুরনো কাঠামো পুজো।
কাঠামো পূজোর পর নাট মন্দিরের পাশে কাদা খেলার পুকুরে কাদামাটির সঙ্গে দই মিশিয়ে দেন পুরোহিত। এরপর এলাকার কিশোর-তরুণরা শুরু করে দধিকাদো খেলা। এবার এই সংখ্যাতেও ছেদ পড়েছে। মাত্র দুজন কিশোর এই কাদা খেলায় অংশ নেন। সেই কাদা খেলার মাটি রেখে দেওয়া হয়েছে নাট মন্দিরে। রীতি মেনে প্রতিমা গড়ার সময় এই কাদামাটি মিশিয়ে দেওয়া হবে প্রতিমা গড়ার এঁটেল মাটিতে।
রাজা না থাকলেও রয়ে গেছে রাজ পরিবারের বিভিন্ন প্রাচীন রীতি। আর এই রীতির টানে আজো দূর দুরান্ত থেকে আসা মানুষের ঢল নামে বৈকন্ঠপুর রাজবাড়ীতে। জলপাইগুড়ির নামীদামী বারোয়ারী পুজোকে টেক্কা দেয় রাজবাড়ির পুজো। এবার করোনার দাপটে পরিবর্তন আনা হয়েছে বেশ কিছু প্রথায়। রাজ পরিবারের প্রধান পুরোহিত শিবু ঘোষাল বলেন, ‘‘গত ৫১০ বছর ধরে জলপাইগুড়ি বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়িতে দুর্গাপুজোয় প্রতিদিন পাঁঠা, পায়রা, হাঁস ইত্যাদি বলি দেওয়া হয়ে আসছে। কিন্তু এবার করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে পুজোর সময় দেওয়া হবে না পাঁঠা, পায়রা বা হাঁস বলি। বদলে দেওয়া হবে চালকুমড়ো বলি। বিলি করা হবে না পুজোর ভোগ। সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে দর্শন করতে হবে তপ্ত কাঞ্চনবর্ণা রাজবাড়ির উমাকে।’’
রাজপরিবারের সদস্য প্রণতকুমার বসু বলেন, ‘‘এবারে আমাদের পুজো ৫১১ বছরে পা দিল। নিয়ম নিষ্ঠা করে পুজো করাই আমাদের আসল লক্ষ্য। প্রাচীন ঐতিহ্য জড়িয়ে রয়েছে এই পুজোর সঙ্গে। বহু রীতিনীতি। তার সবই মানা হয় প্রতিবছর। তবে এই অতিমারীর বছরে এবার পরিবর্তন আনতে হচ্ছে কিছু কিছু। এই পরিস্থিতিতে ঠাকুর সবাইকে ভালো রাখুক এটাই তো একমাত্র কামনা।’’