বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন – ঘুরে আসুন গনগনি থেকে
আমেরিকার গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের কথা কে না জানে। কিন্তু দেখার সৌভাগ্য কতজনের হয়। মার্কিন মুলুকে না যেতে পারার দুঃখ ভোলাতে ঘুরে আসুন বাংলার নিজস্ব গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন থেকে। গনগনি। মেদিনীপুরের গড়বেতার কাছে গনগনিতে নদীপাড় ক্ষয়ে গিয়ে তৈরি হয়েছে বিস্তৃত র্যাভাইন। ছোটখাটো ক্যানিয়ন বললেও ভুল হবে না। শিলাবতী নদী, যার ডাক নাম শিলাই এঁকেবেঁকে চলেছে এখানে। একদিনে ঘুরে আসা যায়।
এখানে শীতকালে প্রচুর মানুষ পিকনিক করতে আসেন। নদীর পাড়ে বেড়ানোর সেরা সময় ভোরবেলা আর সূর্যাস্তের সময়। তখন লাল পাথুরে মাটিতে ছোট ছোট টিলা বেয়ে এই মিনি ক্যানিয়নে বেড়াতে মন্দ লাগবে না।
লোককথা অনুযায়ী, এই জায়গাতেই নাকি বকাসুরকে বধ করেছিলেন ভীম। আর ক্যানিয়নের গুহার মতো অংশগুলো জনশ্রুতিতে হয়ে গিয়েছে পাণ্ডবদের গুহা! অবশ্য শাল-পিয়ালের জঙ্গলে হারিয়ে যাওয়া গনগনিকে সেরকমই রূপকথার রাজ্য মনে হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।
টিলার কয়েকটা জায়গা আবার মন্দিরের আকারের। স্থানীয় লোকেরা জায়গাটাকে গনগনি দঙ্গা কিংবা গনগনি খোলা বলে উল্লেখ করে। নদীর ক্ষয়ের ফলে ল্যাটেরাইটে তৈরি হওয়া অদ্ভুত সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ দেখতে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসে গনগনিতে। তাদের মধ্যে একটা বড় অংশ ভূগোলের ছাত্রছাত্রীরা। গবেষকদেরও নিয়মিত আনাগোনা রয়েছে এখানে।
গনগনি থেকে ঘুরে আসতে পারেন আশপাশের কয়েকটা বিখ্যাত মন্দিরে। যার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় সর্বমঙ্গলা কালী মন্দির। ষোড়শ শতকে বাগদি রাজা নৃপতি সিংহের তৈরি এই মন্দির। রাধানাথ সিংহ স্মৃতি মন্দির, মল্ল রাজা দুর্জন সিংহের তৈরি রাধাবল্লভ মন্দিরও বহু পুরনো স্থাপত্যের চিহ্ন বহন করে চলেছে।
কীভাবে যাবেন: সাঁতরাগাছি থেকে রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস ছাড়ে। এছাড়া আরণ্যক, শালিমার-সহ বেশ কিছু এক্সপ্রেস ট্রেন রয়েছে যেগুলো গড়বেতা হয়ে যায়। গড়বেতায় নেমে সেখান থেকে গনগনি যাওয়া যায় রিক্সা করেই। গড়বেতা কলেজের কাছেই শিলাবতীর পাড়। গাড়ি বা বাইকে গেলে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে ধরে যেতে হবে। চার ঘণ্টা ড্রাইভ করে চন্দ্রকোণা পৌঁছনো যায়। সেখান থেকে আরও ৪০ মিনিটে গনগনি।