বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

ফিরে দেখা ডিরেক্ট অ্যাকশান ডে-র সেই ভয়ঙ্করতা

August 15, 2020 | 3 min read

সর্বনাশের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তখন সবেমাত্র শেষ হয়েছে৷ দেশের হাওয়ায় তখন আজাদির স্লোগান৷ বহুকাঙ্ক্ষিত সেই স্বাধীনতা এল বটে, তবে তা দেশভাগের বিনিময়ে৷ ভারত ভাগ হল৷ পূর্ব বাংলা আর পশ্চিম বাংলা  আলাদা হয়ে গেল৷ বাংলায় আর পঞ্জাবের এই বন্টনকে, ইতিহাস চিনল বিশ্বের বৃহত্তম মাইগ্রেশন হিসেবে৷

যদিও এই দেশভাগের পটভূমি তৈরি হচ্ছিল অনেকদিন আগে থেকেই৷ ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট৷ পাকিস্তানের দাবিতে মুসলিম লিগ ডিরেক্ট অ্যাকশন ডে-র ডাক দিল৷ পাল্টা প্রতিরোধে হিন্দু মহাসভাও৷ শহরজুড়ে শুরু হয়ে গেল দাঙ্গা৷ কলকাতা কার্যত অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল৷ রাস্তাঘাটে এখানে সেখানে পড়ে রইল লাশ৷ 

পরের দিন দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকার প্রথম পাতা জোড়া শিরোনাম: গ্রেট ক্যালক্যাটা কিলিংস৷ দাঙ্গা চলতে থাকল টানা কয়েকদিন৷ কমপক্ষে দশ হাজার মানুষ নিহত হলেন, জখম হলেন অসংখ্য৷ আর ধর্ষনের কোন হিসেব রইল না।

সংবাদপত্রে সেদিনের একের পর এক ছবি দেখে শিউরে উঠল গোটা বিশ্বের মানুষ৷ কলকাতা শহরের রাস্তায় পড়ে রয়েছে লাশ৷ লাইফ ম্যাগাজিনের আলোকচিত্রী মার্গারেট বোর্ক তখন উপমহাদেশের দেশভাগের ওপর ছবি তুলতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত৷ গ্রেট ক্যালক্যাটা কিলিংসের সময়ে তিনি কলকাতায় এসে হাজির হয়েছিলেন৷ তারপর লেন্সবন্দি করেছিলেন এমন কিছু ছবি, যা আজও ইতিহাসের ভয়ঙ্কর অধ্যায় হয়ে রয়ে গিয়েছে৷   

প্রথম ছবিতে দেখা যাচ্ছে, শকুনের দল যেন উৎসবে মেতেছে৷ রাস্তায় পড়ে রয়েছে  রক্তাক্ত দেহ৷ ওই দেহ ঠুকরে খাচ্ছে শকুনেরা৷ আশপাশের বাড়ির চালায় বাকি শকুনের দল অপেক্ষা করছে৷ ক্যাপশন লেখা: ক্যারিয়ন বার্ডস ফিস্ট অন ভিকটিমস অব ব্লাডি রিলিজিয়াস রায়টস ইন ইন্ডিয়া। 

এর পরের ছবিটি লাইফ-এ ছাপা হয়নি৷ এতই বীভৎস সেই ছবি৷  লেখা রয়েছে: নট পাবলিশড ইন লাইফ, করপসেস ইন আ কার্ট প্রায়র টু বিং ক্রিমেটেড আফটার ব্লাডি রায়োটিং বিটউইন হিন্দুস এন্ড মুসলিম, ক্যালক্যাটা৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ঠেলাগাড়িতে মুখোমুখি বাঁধা হয়েছে দুটো লাশকে৷ ঠেলাগাড়ির চাকার ভিতর দিয়ে একজনের চোখ দেখা যাচ্ছে খোলা অবস্থায়৷ তার ঠিক উল্টোপ্রান্তে শোওয়ানো আরেকটি দেহ৷ দেখে মনে হয় সদ্য যুবক৷ যার এক চোখ যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসছে৷

পরের ছবিটিও লাইফ-এ ছাপা হয়নি৷ যেখানে দেখা যাচ্ছে, দাঙ্গায় নিহতদের এক জায়গায় জড়ো করে তার ওপর কাঠখড় দেওয়া হচ্ছে পোড়াবার জন্য৷  নীচে লেখা: মেন অ্যাড উড এন্ড স্ট্র টু ফিউনারেল প্রেয়ার্স ইন প্রিপারেশন ফর ক্রিমেশন অব করপসের আফটার ব্লাডি রায়টস৷

এর পরের ছবিটিও লাইফ-এ ছাপা হয়নি৷ সত্যিই বড় বীভৎতস সেই ছবি৷ কাঠের চিতার ভিতর থেকে অসংখ্য লাশের মধ্যে থেকে দেখা যাচ্ছে একটা হাত বেরিয়ে রয়েছে৷ সেই হাত যেন

আকাশের দিকে উঠে রয়েছে৷ নীচে ইংরিজিতে লেখা: করপসেস স্ট্রিউন অ্যামং পিসেস অব উড ইন প্রিপারেশন ফর ক্রিমেশন৷

কার প্ররোচনায় কলকাতায় সেদিন দাঙ্গা হয়েছিল, সেই বিতর্ক চলতেই থাকবে। কিন্তু সেদিন কলকাতায় মানুষ মারা গিয়েছিল, এই সত্যিটা তর্কাতীত। 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#India, #direct action day

আরো দেখুন