বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

মুজিব হত্যাকাণ্ড – কী ঘটেছিল ১৫ই আগস্টের অভিশপ্ত রাতে?

August 15, 2020 | 3 min read

১৫ই আগস্ট ভারতের স্বাধীনতার আনন্দের দিন যেমন, তেমন এটি বাংলাদেশের শোকের দিন। ১৯৭৫ সালের এদিন ভোরে একদল বিপথগামী সেনার হাতে নিহত হয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, তার স্বজনদেরও হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুর অন্য দুই সন্তান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা জার্মানিতে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।

কি ঘটেছিল সেদিন? 

১৪ই আগস্ট সন্ধ্যারাত পর্যন্তও ভিড় ছিল বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে। ছিল অনেক লোকজনের আনাগোণা। ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুর যাওয়ার কথা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে। তার প্রস্তুতিও চলছিল। রাত গড়াতে থাকলে একে একে প্রায় সবাই বিদায় নেন।

বঙ্গবন্ধুর তৎকালীন ব্যক্তিগত সহকারী প্রয়াত আফম মোহিতুল ইসলামের করা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ১৪ই আগস্ট রাতে ঘুমিয়ে পড়ার পর তাকে ডেকে তোলেন ৩২ নম্বর বাড়িতে কর্মরত টেলিফোন মিস্ত্রি। 

মিস্ত্রি বলেন, প্রেসিডেন্ট ডাকছেন। তখন সময় ভোর সাড়ে চারটে কি পাঁচটা। বঙ্গবন্ধু ফোনে আমাকে বললেন, সেরনিয়াতের বাসায় দুষ্কৃতিকারীরা আক্রমণ করেছে। আমি অনেক চেষ্টার পরও পুলিশ কন্ট্রোল রুমে টেলিফোন লাইন পাচ্ছিলাম না। তারপর গণভবন এক্সচেঞ্জে লাইন লাগানোর চেষ্টা করলাম। 

এরপর বঙ্গবন্ধু ওপর থেকে নীচে নেমে এসে আমার কাছে জানতে চান, পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে কেন কেউ ফোন ধরছে না। এসময় আমি ফোন ধরে হ্যালো হ্যালো বলে চিৎকার করছিলাম। তখন বঙ্গবন্ধু আমার হাত থেকে রিসিভার নিয়ে বললেন, আমি প্রেসিডেন্ট বলছি। এসময় দক্ষিণ দিকের জানালা দিয়ে একঝাঁক গুলি এসে ওই কক্ষের দেয়ালে লাগলো।

তখন অন্য ফোনে চিফ সিকিউরিটি মহিউদ্দিন কথা বলার চেষ্টা করছিলেন। গুলির তাণ্ডবে কাঁচের আঘাতে আমার ডান হাত দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। এসময় জানালা দিয়ে অনর্গল গুলি আসা শুরু হলে বঙ্গবন্ধু শুয়ে পড়েন। আমিও শুয়ে পড়ি। কিছুক্ষণ পর সাময়িকভাবে গুলিবর্ষণ বন্ধ হলে আমরা উঠে দাঁড়াই। 

ওপর থেকে কাজের ছেলে সেলিম ওরফে আবদুল বঙ্গবন্ধুর পাঞ্জাবি ও চশমা নিয়ে এলো। পাঞ্জাবি ও চশমা পরে বঙ্গবন্ধু বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন। বঙ্গবন্ধু বললেন- আর্মি সেন্ট্রি, পুলিশ সেন্ট্রি এতো গুলি চলছে তোমরা কি কর? এসময় শেখ কামাল বললেন, আর্মি ও পুলিশ ভাই আপনারা আমার সঙ্গে আসুন। কালো পোশাক পরা একদল লোক এসে শেখ কামালের সামনে দাঁড়ালো। 

আমি  ও ডিএসপি নূরুল ইসলাম খান শেখ কামালের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। নূরুল ইসলাম পেছন দিক থেকে টান দিয়ে আমাকে তার অফিস কক্ষে নিয়ে গেল। আমি ওখান থেকে উঁকি দিয়ে বাইরে দেখতে চেষ্টা করলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে আমি গুলির শব্দ শুনলাম। এসময় শেখ কামাল গুলি খেয়ে আমার পায়ের কাছে এসে পড়লেন। কামাল ভাই চিৎকার করে বললেন, ‘ভাই ওদের বলেন, আমি শেখ মুজিবের ছেলে শেখ কামাল।’ তারপর তারা নুরুল ইসলামকেও গুলি করে।

মোহিতুল ইসলাম এজাহার আরও উল্লেখ করেন, নূরুল ইসলাম যখন আমাদের রুম থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন তখন মেজর বজলুল হুদা এসে আমার চুল টেনে ধরলো। বজলুল হুদা আমাদের নিচে নিয়ে গিয়ে লাইনে দাঁড় করালো। কিছুক্ষণ পর নীচে থেকে আমরা বঙ্গবন্ধুর উচ্চকণ্ঠ শুনলাম। 

বিকট শব্দে গুলি চলার শব্দ শুনতে পেলাম আমরা। শুনতে পেলাম মেয়েদের আর্তচিৎকার, আহাজারি। এরইমধ্যে শেখ রাসেল ও কাজের মেয়ে রুমাকে নিচে নিয়ে আসা হয়। রাসেল আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘আমাকে মারবেনা তো।’ আমি বললাম, ‘না তোমাকে কিছু বলবে না।’ কিন্তু কিছুক্ষণ পর রাসেলকে তার মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রুমের মধ্যে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এরপর মেজর বজলুল হুদা বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের গেটে দাঁড়িয়ে থাকা মেজর ফারুককে বলে, ‘অল আর ফিনিশড।’

প্রতিবেশীর বর্ণনায়

ধানমণ্ডি-৩২ নম্বরের পাশের বাড়িতে তখন থাকতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপউপাচার্য নাসরীন আহমেদ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ভোর রাতে অসংখ্যা গুলির শব্দে ঘুম ভেঙে যায় তাদের। জানালা ও সিঁড়ির পাশে উঁকি দিয়ে দেখতে পান কালো পোশাকধারীরা বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ঘিরে আছে। 

একটু পর তাদের বাড়িতেও হানা দেয় সেনারা। পরিবারের সবাইকে পাশের খালি ভবনে নিয়ে জড়ো করা হয়। দিনব্যাপী একরকম বন্দি জীবন পার করেন তারা। পরে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতে পারেন। তারপর টেলিভিশন চালিয়ে ঘটনা জানতে পারেন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Sheikh Mujibur Rahman

আরো দেখুন