দেশভাগ নিয়ে এই বইগুলো অবশ্যই পড়ে ফেলুন
১৯৪৭ সালে ভারত জুড়ে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে। জন্ম হয় দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের। বিশ্বে এ পর্যন্ত বড় ধরনের যত দেশান্তরের ঘটনা ঘটেছে, এর মধ্যে ভারত-পাকিস্তান ভাগের ঘটনা অন্যতম। দেশভাগের সেই অগ্নিগর্ভ সময়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বা দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। মারা যায় ১০ লাখের বেশি মানুষ। কয়েক কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।
আজও দুটি দেশেই দেশ ভাগের ভয়ঙ্কর স্মৃতি দগদগে হয়ে আছে। একদিন যাদের ভিটে মাটি, গোয়াল ভর্তি গরু, ধান ভর্তি জমি ছিল, তারা রাতারাতি হয়ে গেলেন ‘রিফিউজি’। নিজের দেশ ছেড়ে, নিজের লোকজন ছেড়ে, সব ছেড়ে চলে আসতে হয়েছিল শুধু প্রাণটুকু বাঁচাতে। কিন্তু বাঁচল আর কই? বহু প্রাণ নির্মম ভাবে কেড়ে নিল দেশ ভাগ। যারা বাঁচল তারাও ধুঁকে ধুঁকে সেই স্বপ্নময় স্মৃতি নিয়ে বাঁচল। নিজের ভিটের, নিজের লোকের স্মৃতি সারা জীবন তাড়া করে বেড়ালো।
দেশভাগের সেই মর্মান্তিক ইতিহাস জানতে পড়ুন দেশভাগ নিয়ে লেখা বইগুলি:
১.ইন্ডিয়া উইন্স ফ্রীডম (মৌলানা আবুল কালাম আজাদ)
দেশভাগ নিয়ে তথ্যে সমৃদ্ধ একটি বই। মৌলনা আবুল কালাম আজাদের দৃষ্টি দিয়ে এই ঘটনাকে প্রত্যক্ষ করতে অবশ্যই পড়ুন বইটি।
২. দেশবিভাগ: ফিরে দেখা (আহমদ রফিক)
ভারত বিভাগ এক ঐতিহাসিক রাজনৈতিক ট্র্যাজেডি হিসাবে বিবেচিত। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে এ ইতিহাস এক বিরল রক্তাক্ত ঘটনা। সেটিই ফুটে উঠেছে লেখকের কলমে।
৩.পূর্ব ও পশ্চিম (সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়)
দেশ ভাগের সময় পূর্ব বাংলার অনেক মানুষ নিজেদের বাড়িঘড় ছেড়ে পশ্চিম বাংলায় চলে যান, সেখানেই তাদের জীবন গড়ে ওঠে। পূর্ব বাংলা বা বাংলাদেশের স্মৃতি, নাগরিক জীবন, মুক্তিযুদ্ধ, রাজনীতি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সুন্দর একটি বই।
৪.কেয়াপাতার নৌকা (প্রফুল্ল রায়)
প্রফুল্ল রায়ের উদ্বাস্তু জীবনকেন্দ্রিক যে সমস্ত উপন্যাস রচিত সেগুলি হল ‘কেয়াপাতার নৌকা’, ‘শতধারায় বয়ে যায়’, ‘উত্তাল সময়ের ইতিকথা’, ‘নোনা জল মিঠে মাটি’। আকারে ও নামে আলাদা হলেও আসলে তিনটি উপন্যাস মিলেই একটি উপন্যাস। ‘কেয়াপাতার নৌকো’র পরবর্তী খণ্ড ‘শতধারায় বয়ে যায়’ এবং তারও পরবর্তী খণ্ড ‘উত্তাল সময়ের ইতিকথা’। তিনটি উপন্যাসই আকারে মহাকাব্যিক।
৫.আগুনপাখি (হাসান আজিজুল হক)
‘আগুনপাখি’ উপন্যাসটি আমরা একজন গ্রাম্য নারীর জীবন আখ্যান। তিনি একটি রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের মেয়ে, আবার বিরাট একান্নবর্তী পরিবারের গৃহবধূ। তাঁর চোখেই বর্ণিত হয়েছে এই বাংলার রাজনৈতিক পট পরিবর্তন।
৬.নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে (অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়)
একটি একান্নবর্তী পরিবারের দেশ ছেড়ে চলে আসা, উদ্বাস্তু জীবনের অভিজ্ঞতা, তারই মাঝে প্রকৃতির অনুপুঙ্খ বর্ণনা, লোভী এবং কামুক মানুষের কথা – সব লিখেছেন অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় এই উপন্যাসে অত্যন্ত বিশ্বস্ত ভঙ্গিতে।
৭.বিষাদ বৃক্ষ (মিহির সেনগুপ্ত)
বিষাদ বৃক্ষ উপন্যাসটি একটি ট্র্যাজেডি, একখানি শক্তিশালী এবং বিষাদময় আত্মস্মৃতি যা এই উপমহাদেশের এক ভয়াবহ সময়ের প্রতিবিম্বিত দর্পণ।
৮. ট্রেন টু পাকিস্তান (খুশবন্ত সিংহ)
১৯৫৬ সালে প্রকাশিত এই ঐতিহাসিক উপন্যাসটি রাজনীতির উর্দ্ধে গিয়ে মানবতার কথা বলে। মানো মাজরা নামে এক কাল্পনিক গ্রামের পরিপ্রেক্ষিতে উঠে আসে দেশভাগের বাস্তবতা, বিভীষিকা।
৯. বাঙ্গালা ভাগ হল (জয়া চ্যাটার্জী)
১৯৪৭ সালে বাংলা ভাগ হওয়ার পেছনে কি কি কারণ ছিল, কিভাবে এক দশক ধরে বঙ্গভঙ্গের জন্য সামাজিক প্রস্তুতি চলছিল এই বাংলায় – গবেষণাধর্মী এই উপন্যাস পড়লে জানা যাবে অনেক অজানা তথ্য।
১০. বিয়োগ পর্ব (দেবতোষ দাস)
দেশভাগের প্রেক্ষাপটে এক মর্মস্পর্শী উপন্যাস। ছিন্নমূল এক পরিবারের আখ্যান – যারা স্বাধীনতার পরিবর্তে ভিটেছাড়া হয়েছিল।