বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

সব পথেই ঈশ্বর উপলব্ধির সাধনা করেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ

August 16, 2020 | 2 min read

মানুষকে সুখী করতে এবং জীবনের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নিরুপনে পরম পুরুষ রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব কিছু দৃষ্টান্তমূলক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। তিনি ছিলেন ধর্মীয় মহাপুরুষ। কিন্তু একটি ধর্মীয় ভাবাদর্শের উপর তিনি নির্ভরশীল ছিলেন না। পরমহংসদেব হিন্দু, খ্রিস্টান, ইসলাম, বৈষ্ণব, শাক্ত, তন্ত্র, বেদান্ত সকল পথে সাধনা করে দেখালেন তিনি অনন্ত ভাবময়।

শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস নতুন কোন ধর্ম সংস্থাপন করেননি। তিনি লক্ষ্য করেছেন বিভিন্ন ধর্মীয় মতাবলম্বীদের মধ্যে বিদ্বেষ ভাবের বহিঃপ্রকাশ। একে অন্যের মত পথের আদর্শকে ঘৃণার চোখে দেখছে। এতে হানাহানি, মারামারি বৃদ্ধি ছাড়া আর কিছুই হচ্ছে না। 

এ অবস্থা দূরীকরণে তিনি অহিংস, ত্যাগ ও প্রেমের পথ দেখানোর জন্য সকল ধর্ম মতে সাধনা করে সকলের উদ্দেশ্যে বললেন, “সকল ধর্মীয় মত পথ সত্য। আন্তরিক হলে সকল পথে পরম স্রষ্টাকে লাভ করা সম্ভব।” পৃথিবীতে অনেক ধর্ম আছে। ধর্মগুলোকে ঈশ্বর বা স্রষ্টাকে লাভের একেকটি পথ বা উপায় বলেছেন তিনি। তাঁর শ্রেষ্ঠ একটি বাণী, “যত মত তত পথ।” 

পৃথিবীতে ধর্মীয় বিদ্বেষ নিয়ে যত রক্তপাত হয়েছে, অন্যথায় এত হয়নি। এ অবস্থার অবসানের জন্যই শ্রীরামকৃষ্ণের আগমন। তিনি ধর্মগুলোর মধ্যে সেতু রচনা করলেন। যাতে একে অন্যের ধর্মীয় আদর্শগুলো গ্রহণ করে পুষ্ট হতে পারে। দেহের জন্য যেমন সুষম খাদ্যের প্রয়োজন, তেমনি সকল ধর্মের আদর্শ প্রত্যেক ধর্মাবলম্বীর দৈহিক বা মানসিক পুষ্টির পরিপূরক।

ধর্ম মূলত আন্তলালন, চর্চা এবং ব্যবহারিক জীবনে নিষ্ঠা প্রয়োগের জিনিস। বাহ্য অনুষ্ঠানগুলো সহায়ক মাত্র। এ জগতের স্রষ্টা এক। সকলকে সহমর্মিতার সঙ্গে বাস উপযোগী করে জগত সৃষ্টি করেছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অসহিষ্ণু কর্মকান্ড দেখা যায়। এর কারণ হলো অজ্ঞানতা। আকাশে কালো মেঘ জমলে এর কিয়দংশ অন্ধকার হয়ে যায়। বাকী অংশ আলোকিত থাকে। তেমনি কিছু মানুষের অজ্ঞানন্ধ আচরণে জগতে অশান্তির সৃষ্টি হয়।

এ অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করে জীবকে লক্ষ্যে পৌঁছে দিতেই রামকষ্ণ পরমহংসদেবের আগমন। যত অন্ধকার সব মনের মধ্যে। তিনি একটি সুন্দর উপমা দিয়েছেন, “মনটি দুধের মত, সেই মনকে যদি সংসার জলে রাখ, তাহলে দুধে জলে মিশে যাবে। তাই দুধকে দই পেতে মাখন তুলতে হয়। যখন নির্জনে সাধন করে মনরূপ দুধ থেকে জ্ঞান-ভক্তি রূপ মাখন তোলা হল, তখন সেই মাখন অনায়াসে সংসার জলে রাখা যায়। সে মাখন কখনও সংসার জলের সঙ্গে মিশে যাবে না। সংসার জলের উপর নির্লিপ্ত হয়ে ভাসবে।” 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Sri Ramakrishna

আরো দেখুন