সরকারি চাকরি শুধু রাজ্যবাসীর জন্য, ঘোষণা মধ্যপ্রদেশ সরকারের
সরকারি চাকরি শুধুই রাজ্যবাসীর জন্য। এমনই ঘোষণা করেছে মধ্যপ্রদেশ সরকার। আর এই সিদ্ধান্ত ঘিরে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। এর আগে মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, হরিয়ানার মতো বেশ কিছু রাজ্য বেসরকারি চাকরিতে সংরক্ষণের কথা ঘোষণা করেছিল। সেই মতো এই রাজ্যগুলির কোথাও ৭০ শতাংশ, কোথাও ৭৫ শতাংশ চাকরি স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য সংরক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। মহারাষ্ট্রে সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ দেওয়া হয়েছে মারাঠি সম্প্রদায়কে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে সরকারি চাকরি পাওয়ার যোগ্য একমাত্র রাজ্যবাসীই—এরকম সিদ্ধান্ত কোথাও ছিল না। ব্যতিক্রম ছিল জম্মু ও কাশ্মীর। কিন্তু মোদি সরকার গত বছর রাজ্যবাসীর জন্যই সংরক্ষিত একঝাঁক বিশেষ সুবিধা সংক্রান্ত আইনের বিলোপ ঘটিয়েছিল। মোদি সরকার এবং বিজেপি প্রচার করেছিল, এক দেশে পৃথক নিয়ম চলতে পারে না। এভাবে একটি রাজ্যের দরজা বাকিদের জন্য বন্ধ করে রাখার নীতি থাকা উচিত নয়। তাই ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদের অবলুপ্তি। যদিও উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে এখনও ওই নিয়ম চালু রয়েছে। কিন্তু এবার মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকার এরকম সিদ্ধান্ত নেওয়ায় রাজনৈতিক মহলেও প্রশ্ন উঠেছে।
মঙ্গলবার মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান ঘোষণা করেছেন, আমরা নতুন আইন আনছি। আগামী দিনে মধ্যপ্রদেশের সরকারি চাকরিতে বহিরাগতদের নিয়োগ হবে না। শুধু রাজ্যবাসীই পাবেন সরকারি চাকরি। এর আগে কংগ্রেসের কমল নাথ সরকার একটি প্রস্তাব এনেছিল। বলা হয়েছিল, ৭০ শতাংশ বেসরকারি চাকরি থাকবে মধ্যপ্রদেশবাসীর জন্য। এবার সেই প্রস্তাবকে ছাপিয়ে গেলেন বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী। এই ঘোষণার কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে, আসন্ন ২৭টি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচন। মধ্যপ্রদেশে ২০১৮ সালে নির্বাচনে হেরে গিয়েও এই বছরই কংগ্রেস থেকে দলবদল করা বিধায়কদের সহায়তায় সরকারে আসা শিবরাজ সিং চৌহানের গরিষ্ঠতা সুতোয় ঝুলছে। তাই ২৭টি আসনের উপনির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২৭টি আসনের সিংহভাগেই ২০১৮ সালে জয়ী হয়েছিল কংগ্রেস।
এই বিধায়করাই যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। সুতরাং আসন্ন উপনির্বাচনে জিতে এলে আবার কংগ্রেস হয়ে যাবে গরিষ্ঠ দল। তাই জয় নিশ্চিত করতেই এই রাজ্যের বাসিন্দাদের জন্য সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণের চমক বলে মনে করা হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তের জেরে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, এরপর যদি সব রাজ্যই একে একে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তাহলে দেশজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ধাক্কা খাবে। কোনও রাজ্যেই অন্য রাজ্যের বাসিন্দারা কাজ পাবেন না। চাকরির পরিসরও হয়ে পড়বে সংকুচিত। মধ্যপ্রদেশের এই সিদ্ধান্তের পর কাশ্মীরের ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা কটাক্ষ করে বলেছেন, কাশ্মীর, লাদাখ, জম্মুতে ভারতের যে কোনও মানুষ এসে চাকরি করতে পারবেন। কিন্তু মধ্যপ্রদেশে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ! এটাই প্রত্যাশিত বিজেপির কাছে!