শাহিনবাগ আন্দোলন খাটো করার চেষ্টা বিজেপি ও আপের, ক্রুদ্ধ আন্দোলনকারীরা
উনি কে? আন্দোলন চলাকালীন কখনও মঞ্চে দেখেছেন? কিংবা নেতৃত্বে? বিজেপিতে সদ্য যোগ দেওয়া স্থানীয় সমাজকর্মী শাহজাদ আলি এবং তাঁর সঙ্গীদের সম্পর্কে প্রশ্ন করলেই ঝাঁকে ঝাঁকে এমন পাল্টা প্রশ্ন ধেয়ে আসছে শাহিনবাগের প্রতিবাদীদের তরফ থেকে। মোদ্দা বক্তব্য, কে কোন দলে যোগ দেবেন, তা তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কিন্তু যে ভাবে রবিবার বিজেপিতে যোগ দেওয়া ব্যক্তিদেরই শাহিনবাগে সিএএ-এনআরসি বিরোধী আন্দোলনের মুখ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা হচ্ছে, তা তীব্র আপত্তিকর।
স্থানীয় ওই ব্যক্তির বিজেপিতে যোগ দেওয়াকে কেন্দ্র করে যে ভাবে আন্দোলনকে ‘ছোট করার চেষ্টা’ চলছে, তাতে শাহিনবাগ বিজেপির উপরে যতটা ক্ষুব্ধ, ততটাই গরগরে রাগ অরবিন্দ কেজরীবালের আম আদমি পার্টির (আপ) উপরে। শাহজাদ ও তাঁর সঙ্গীদের বিজেপি-যোগ প্রসঙ্গে আপের অভিযোগ, এ থেকে স্পষ্ট যে, দিল্লি বিধানসভা ভোটে ধর্মীয় মেরুকরণের লক্ষ্যে টানা তিন মাস রাস্তা রুখে ওই প্রতিবাদ জারি রাখায় মদত দিয়েছিল বিজেপি। শাহিনবাগে ধর্না-প্রতিবাদের নীল নকশা, কৌশলও তাদেরই। আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা শাহিন কওসরের কথায়, “আপ তার মানে মনে করে যে, বিজেপির কথাতেই ওই প্রবল ঠাণ্ডায় মাসের পর মাস রাস্তায় বসেছিলাম আমরা! এই আন্দোলনকে খাটো করার ক্ষেত্রে তা হলে ওরাও বিজেপির থেকে পিছিয়ে নেই।”
আন্দোলনে আগাগোড়া যুক্ত প্রকাশ দেবীর দাবি, “যে শাহজাদকে আন্দোলনের মুখ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা হচ্ছে, তিনি প্রতিবাদস্থলে রোজ আসতেন কোথায়? বরং খারাপ ব্যবহারের জন্য তাঁকে একাধিক বার সেখান থেকে বার করে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন স্বেচ্ছাসেবীরা।” তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, “এত দিন সবাই জানত, শাহিনবাগে আন্দোলনের রাশ ছিল মহিলাদের হাতে। নেতৃত্বে ছিলেন দাদিরা। তা হলে রাতারাতি শাহজাদ নেতা হলেন কী ভাবে?” কওসরেরও জিজ্ঞাসা, “শাহজাদই যদি নেতা হন, তা হলে সিএএ-এনআরসি বিরোধী আন্দোলনের জন্য মীরন হায়দর, সফুরা জ়ারগররা জেলে থাকলেও তিনি বাইরে কেন?” তাঁর মতো এলাকার অনেকেরই অভিযোগ, “এ আসলে বিজেপি এবং আপের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। দুই দলই চায় শাহিনবাগের আন্দোলনকে খাটো করে দেখাতে।”
এই সুযোগে আপ-কে আরও একবার বিজেপির ‘বি-টিম’ বলে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না কংগ্রেস। করোনা-কালে দল বেঁধে প্রতিবাদের সুযোগ না-থাকায় গত কয়েক মাসে যে ভাবে একাধিক আন্দোলনকারীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে গ্রেফতার করেছে অমিত শাহের নিয়ন্ত্রণে থাকা দিল্লি পুলিশ, তা মাথায় রেখে নাম বলতে চাইছেন না অনেকে। এঁদের ক্ষোভ, শাহজাদ এবং তাঁর সঙ্গীদের এমন ভাবে বিজেপিতে যোগ দেওয়ানো হল, যেন আন্দোলন নিয়ে ভুল বুঝে মাথা নোয়াচ্ছে শাহিনবাগই। আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত একাধিক জনের আশঙ্কা, বিজেপির এই চালে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস তৈরি হতে পারে। যা সব থেকে বড় বাধা নতুন করে আন্দোলন গড়ে তোলার পথে। তার উপরে, প্রতিবাদ হলেও তখন হয়তো কথা বলার জন্য প্রতিনিধি হিসেবে ডাক পড়বে শাহজাদদেরই! বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা শাহজাদ অবশ্য বলেছেন, “নিজেকে নেতা হিসেবে কখনও দাবি করিনি। তবে এলাকার মুসলিমদের সুবিধা-অসুবিধা-দুশ্চিন্তার কথা আলোচনার টেবিলে বসে দলকে, সরকারকে জানাতে আপত্তি নেই।” Advertisement
প্রকাশ, কওসরদের তবু আশা, “নেতা কারা, আন্দোলন কীসের, কাদের উদ্যোগ- মানুষ সব জানেন। রাতারাতি মুখ হিসেবে কাউকে তুলে ধরে সেই ধারণা গুলিয়ে দেওয়া শক্ত।”