‘ভারতরত্ন’ বিসমিল্লা খানের বাড়ি ভেঙে দিল যোগী সরকার, বিতর্ক
২০০৬ সালে ওস্তাদ বিসমিল্লা খান মারা যাওয়ার পর তাঁর শিষ্য ও ভক্তরা ওই বাড়িটিকে একটি মিউজিয়াম করার আবেদন জানিয়েছিলেন। উস্তাদের স্মরণে একটি সংগ্রহশালা তৈরি করা হোক, তাতে প্রদর্শিত হোক বিসমিল্লার বিভিন্ন স্মারক- এই ছিল দাবি। সানাইয়ের মতো একটি ‘সাধারণ’ যন্ত্রকে মার্গসঙ্গীতের স্তরে উন্নীত করে পূর্ণ অবয়ব দেওয়ায় উস্তাদ বিসমিল্লার অবদান সর্বজনস্বীকৃত। তাঁর স্মৃতিতেই বাড়িটি হেরিটেজের তকমা দেওয়ার দাবিও করা হয়েছিল। কিন্তু এতদিনে কেউই এ বিষেয় এগিয়ে আসেননি। না রাজ্য সরকার, না কেন্দ্রীয় সরকার।
খান সাহেবের পালিতা কন্যা ও সঙ্গীতশিল্পী সোমা ঘোষ এই ঘটনার পর বিরক্তি প্রকাশ করে জানিয়েছেন, বাবার ( বিসমিল্লাকে তিনি বাবা বলেই ডাকেন) ঘর ভেঙে দেওয়া হয়েছে, এটা শোনার পরই আমি ভেঙে পড়েছি। খুব অবাক হয়েছি। ভেঙে ফেলার পর তাঁর মহামূল্যবান জিনিসপত্রগুলোও ফেলে দেওয়া হয়েছে। ওই ঘরটি শুধুমাত্র একটি ঘর ছিল না। সঙ্গীত অনুরাগীদের জন্য উপাসনার একটি পবিত্র স্থান ছিল। এটি ভারতের একটি ঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে। তাঁর সব জিনিসপত্র সংরক্ষিত করার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আবেদন করব।
১৯৬৩ সালে হাদহা সরাইয়ের ভিক্ষমশাহ লেনের ধারে এই বাড়িটি কেনেন। দোতলা বাড়ির উপরের একটি ঘরে, তিনি থাকতেন। রোজ স্নান করে ওই ঘরে রেওয়াজ করতেন তিনি। গত ১২ অগস্ট ওই ঘরটি প্রথম ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে। প্রসঙ্গত, ওই বাড়িটির মালিক ওস্তাদজির পাঁচ ছেলের এক ছেলে মেহতাব হুসেনের ছেলে। ওস্তাদজির আত্মীয়রা অবশ্য এই ঘটনা অস্বীকার করে জানিয়েছেন, স্থানীয় এক দোকান তৈরির জন্য বাড়িটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
ভারতের স্বাধীনতা ও বিসমিল্লার সানাই
ভারতীয় মার্গসংগীতের অলংকার বিসমিল্লা খানের ছোট ছেলে নাজিম হুসেনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেন, এই বাড়ি ভাঙার ব্যাপারে তিনি আদৌও কিছু জানেন না। যদি তেমন কিছু হয়, তাহলে সে ব্যাপারটি দেখবেন বলে জানিয়েছেন। তবে তিনি এখন ওই বাড়িতে নেই। আগামী ২৪ অগস্টের পর বাড়ি ফিরে তারপর ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
ভারত যেদিন স্বাধীনতার স্বাদ পেল, সেই দিন স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর আমন্ত্রণে রেড ফোর্টে সানাই বাজিয়েছিলেন খান সাহেব। তিনি বারবার বুঝিয়েছেন, যেমন সুরের কোনও ধর্ম হয় না, তেমনি শিল্পীরও কোনও ধর্ম হয় না। এমন ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে জডিয়ে ছিলেন খান সাহেব। কিন্তু সেই মূল্যবান সম্পদের মর্ম বুঝতে পারলেন না তাঁর নাতি-নাতনিদের মতো নতুন প্রজন্ম। স্বাধীনতা দিবসের দিন যে সানাই বাজিয়েছিলেন, সেই সানাইও নাকি বাড়ি ভেঙে ফেলার সময় নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মৃত্যুর পর ভারত ও বিদেশে ছড়িয়ে থাকা শিষ্য ও ভক্তরা খান সাহেবকে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানালেও, বাড়ির অন্দরেই তাঁর মতো আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের কোনও কদর ছিল না।
২০১৭ সালে, উস্তাদের প্রিয় সানাই বিক্রি করতে গিয়ে পুলিশের জালে ধরা পড়েছিল শিল্পীর নাতি নাজরে হাসান। অভিযোগ, মাত্র ১৭ হাজার টাকার নিবিময়ে সে ওই রুপো দিয়ে বাঁধানো সানাই বিক্রি করে দিয়েছিল দুটি গয়নার দোকানে। প্রতিটি সানাইয়ের রূপো বাঁধানো অংশ গায়েব ছিল। গুণধর নাতি সেই রূপো গলিয়ে ফেলেছিল। পরে সেই রূপো উদ্ধার করেছিল পুলিশ।