উইকেন্ডে ঘুরে আসুন জগৎ শেঠের প্রাসাদ থেকে
মুর্শিদাবাদ মানে ইতিহাস। মুর্শিদাবাদের প্রতিটি পরতে পরতে মোড়া ইতিহাসের অজস্র কাহিনী আজ আমাদের বিস্মিত এবং আশ্চর্য করে। হাতের কাছে থাকা এই প্রাচীন জনপদটির নবাবী আমলের রাজধানী ছিল। আর সেই কারণেই এখনো তার মধ্যে রাজ ঐশ্বর্যের ছোঁয়া লেগে রয়েছে। সেরকমই একটি বৈভব পূর্ণ স্থান আজ আমরা পরিভ্রমণ করতে চলেছি ,সেটি হল মুর্শিদাবাদের কাঠগোলা বাগানবাড়ি।
ইতিহাস অনুযায়ী বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলা সাম্রাজ্যের অন্যতম বিশ্বাসঘাতক হিসেবে পরিচিত জগৎ শেঠের এই প্রাসাদ মহিমপুরে অবস্থিত। পেশায় ব্যবসায়ী মাওয়ারি সম্প্রদায়ের জগৎ শেঠের নাকি আমোদের স্থান ছিল কাঠগোলা প্যালেস। কথিত আছে, নবাব সিরাজের মৃত্য়ুর জন্য দায়ী এই ব্যবসায়ীর আনুগত্যে খুশি হয়ে তাঁকে নাকি এই প্রসাদ উপহার দিয়েছিল ইংরেজ।
প্রাসাদের পাশে সুবিশাল পুকুর এবং সেটিকে ঘিরে রাখা সুদীর্ঘ বাগান মুর্শিদাবাদের অন্যতম আকর্ষণ। জগৎ শেঠের কুঠিবাড়ির অদূরে অধিরথ মন্দিরও পুরনো সময়ের ধারক ও বাহক। ১৮৭৩ সালে জিয়াগঞ্জের কোটিপতি ধনপত সিং দুগার এবং লক্ষ্মীপত সিং দুগার মন্দিরটি তৈরি করেন।
লক্ষীপৎ,জনপৎ,মহীপৎএবং ধনপৎ নামের চার ভাই নির্মাণ করেছিলেন এই সুবৃহৎ কাঠগোলা বাগান। বাগানে ঢোকার মুখে একটি বিশাল নহবত গেট, আর তার পূর্ব পশ্চিমে যে রাস্তাটি গেছে সেখানে এক সময় ছিল প্রচুর কাঠের গোলা। কথিত আছে একসময় দুগার পরিবারের জৈন মতাবলম্বী এই চার ভাই জগৎশেঠের সহযোগিতায় তৎকালীন নবাবের কাছ থেকে বারোশো টাকায় ৩২ বিঘায় এই বাগানটা কিনে নেন। এরপর তাদের দখলে চলে আসে আড়াই হাজার বিঘা সম্পত্তি।
আজও কাঠগোলা বাগানে প্রবেশ করার পর আম বাগানের ভিতর আপনি চার ভাইয়ের বিশাল মূর্তি দেখতে পাবেন ঘোড়ায় চড়া অবস্থায়। হাজারদুয়ারি থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এটি। প্রায় আড়াইশো বিঘা জায়গা নিয়ে নির্মাণ করা হয় এই বিশাল অট্টালিকা টি, আর এর সামনে খনন করা হয় একটি বিশাল পুকুর। যেখানে আবার রাখা থাকতো বিভিন্ন ধরনের রঙিন সৌখিন মাছ। জানা যায় নবাব সৈয়দ হাসান আলী মির্জা কাঠগোলা বাগানের নাচ মহলে নিজে অংশগ্রহণ করতেন।
এই সুবৃহৎ অট্টালিকা ছাড়া এখানে রয়েছে একটি জৈন মন্দির ।এছাড়াও রয়েছে হেরেম, চিড়িয়াখানা এবং শ্বেত পাথর দিয়ে বাঁধানো একটি পুকুর। আর ঐশ্বর্য বৈভবের চিহ্ন হিসেবে বিভিন্ন মহামূল্যবান তৈজসপত্র , আসবাবপত্র এই গুলোর কথা তো বলাই বাহুল্য। এখানে গ্রিক ভাস্কর্য এর অনুকরণে অনেক মূর্তি দেখা যায়।
বর্তমানে কাঠগোলা বাগান পর্যটকদের কাছে অতি প্রিয় একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিগণিত হয়েছে ।আর হবে নাই বা কেন এই বাগানের সৌন্দর্য প্রাসাদের ভাস্কর্য সমস্ত কিছুই তো পরিচয় দেয় ঐতিহাসিক এবং শৈল্পিক মনোভাবের। এ কাঠগোলা বাগান এ বিশাল অট্টালিকাটি ছাড়াও আর যা যা দর্শন করা জিনিস আছে সেগুলি হল সংগ্রহশালা ,আদিনাথ মন্দির, গোপন সুরঙ্গ পথ ,শ্বেত পাথরে বাঁধানো পুকুর।