বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে খোলা চিঠি বিদ্বজ্জনদের
বিশ্ব কবির আশ্রম রাজনীতির কাদামাখা কুস্তির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। বিশ্বভারতীতে পাঁচিল ভাঙচুরকাণ্ডে এমনটাই মত বিদ্বজ্জনদের। তরুণ মজুমদার, শঙ্খ ঘোষ, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, মনোজ মিত্র, বিভাস চক্রবর্তীর মতো বুদ্ধিজীবীরা খোলা আবেদনে অনুযোগ করেছেন, বহুদিনের ঐতিহ্য-বাহিত স্মৃতি, শান্তিনিকেতনের সুষমা ও বিশ্বভারতীর শিক্ষা … সবই সমূলে নষ্ট হতে বসেছে। এই দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতিতে আমাদের উদ্বিগ্ন ও বিচলিত করে তুলেছে।
বিশ্বভারতীকাণ্ডে তুঙ্গে রাজনৈতিক চাপান-উতোর। তবে সে পথ সযত্নে এড়িয়ে গিয়েছে বিদ্বজ্জনেরা। তবে বিশ্বভারতীর ভূমিকায় প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। খোলা চিঠিতে লেখা হয়েছে, অতিসম্প্রতি বিশ্বভারতীর কর্মকাণ্ড হৃদয় ভারাক্রান্ত করে তুলেছে। আলোচনা ও ঐকমত্য ছাড়াই পাঁচিল নির্মাণ করছিল কর্তৃপক্ষ। তার ফলে ভাঙচুর ও অরাজকতা। তাতে বিশ্ব কবির আশ্রম রাজনাীতির কাদামাখা কুস্তির আখড়ায় পরিণত হয়েছে।
এদিকে বিশ্বভারতী কাণ্ডের জেরে শাস্তির মুখে ৫ পুলিসকর্মী। তাঁদের ক্লোজড করা হয়েছে। শুরু হয়েছে বিভাগীয় তদন্ত। পুলিস সূত্রে দাবি থানাকে না জানিয়েই ওই পাঁচ জনকে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ নিজেদের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করেছে। যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল পুলিসকর্মীরাও তা সঠিকভাবে পালন করেননি। পাঁচিল ভাঙার আগের দিন ১৬ অগাস্ট, বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুত্ চক্রবর্তী মেলার মাঠে পাঁচিল তোলার কাজে তদারকি করতে যান। সেদিন উপাচার্যের সঙ্গে মাঠে ছিলেন ৪ পুলিস কর্মী। তাঁদের বিরুদ্ধেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিস সূত্রে দাবি, সশস্ত্র পুলিসের তেরো নম্বর ব্যাটেলিয়নের ওই চার পুলিসকর্মীকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের রক্ষীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু, ওই চারজনকে উপাচার্যের দেহরক্ষী হিসাবে নিয়ে যাওয়া হয় ক্যাম্পাসের বাইরেও।
ক্যাম্পাসের ভিতরে পড়ুয়াদের আন্দোলন-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা সামাল দিতেও এই সশস্ত্র পুলিসকর্মীদের কাজে লাগানো হয়। থানাকে না জানিয়ে ৪ পুলিসকর্মীকে ইচ্ছামতো ব্যবহার করে বিশ্বভারতী। পুলিসকর্মীরাও তাঁদের নির্দিষ্ট দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি। ৪ পুলিসকর্মীকেই ক্লোজড করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে বিভাগীয় তদন্ত।
সরিয়ে দেওয়া হয়েছে উপাচার্যের ব্যক্তিগত দেহরক্ষীকেও। পুলিস সূত্রে দাবি, উপাচার্যের দেহরক্ষী বাস্তবে উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ বিশ্বভারতীর ১ মহিলা অধ্যাপকের দেহরক্ষী হিসাবে কাজ করতেন। থানার ওসি, মহকুমা পুলিস আধিকারিকে মত উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করতেন তিনি। ওই দেহরক্ষীর বিরুদ্ধেও শুরু হয়েছে বিভাগীয় তদন্ত। পুলিসকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে মুখ খোলেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে কর্তৃপক্ষ যে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে, পুলিসের পদক্ষেপে বিশ্বভারতীকে, সেই বার্তাই দেওয়া হল বলে মনে করা হচ্ছে। ক্যাম্পাসে নতুন চার জন রক্ষী নিয়োগ করা হয়েছে। উপাচার্য বিদ্যুত চক্রবর্তীর সুরক্ষায় নতুন একজনকে নিয়োগ করা হয়েছে। তবে, নতুন দেহরক্ষীকে নিতে উপাচার্য রাজি নন বলেই খবর।