লকডাউনে স্তব্ধ কলকাতা
টানা দু’দিন লকডাউনের শুরুটা একেবারে যথাযথ। রাজ্য সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ২০ এবং ২১ আগস্ট সম্পূর্ণ লকডাউন। তার জেরে বৃহস্পতিবার রাস্তাঘাট ছিল একেবারে শুনশান। আগস্টের গত দু’টি লকডাউনে রাস্তায় ইতিউতি গাড়ি চোখে পড়লেও এদিন তা অনেকাংশেই কম ছিল। দোকান-বাজার, গণপরিবহণ সবই ছিল বন্ধ। এদিন সকাল থেকেই দফায় দফায় বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তাঘাট ছিল জনমানব শূন্য। তবে মোড়ে মোড়ে পুলিসি প্রহরা ছিল অত্যন্ত কড়া। মোটের উপর টানা দু’দিনের এই লকডাউনে করোনা সংক্রমণের শৃঙ্খল কিছুটা হলেও ভাঙা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন চিকিৎসক থেকে বিশেষজ্ঞরা। রাজ্য সরকার ঘোষিত এই লকডাউনে শহরবাসীর স্বতঃস্ফূর্ততা নজরে এসেছে। শহরবাসীর মধ্যেও করোনা সংক্রমণের ‘চেন ব্রেকিং’-এর সম্ভাবনাকে আরও উজ্জ্বল করার প্রচেষ্টা দেখা গিয়েছে।
দক্ষিণ কলকাতার নিউ আলিপুর মোড়ে সকাল ৬টা থেকেই কড়া নাকা চেকিং শুরু হয়। চারদিকে গার্ড রেল বসিয়ে রাস্তা সঙ্কীর্ণ করে দেওয়া হয়, যাতে কেউ গাড়ি নিয়ে সহজে যেতে না পারেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন থানার শীর্ষ আধিকারিক সহ ট্রাফিক গার্ডের অন্যান্য পুলিসকর্মীরা। আনোয়ার শাহ রোডের মোড়ে গিয়ে দেখা গেল, কর্তব্যরত অফিসাররা প্রতিটি গাড়ি থামিয়ে চালক এবং যাত্রীদের কাছে রাস্তায় বেরনোর উপযুক্ত নথি রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছেন। সেই নথি দেখে সন্তুষ্ট হলে তবেই মিলেছে ছাড়। এদিন সকাল থেকেই গোটা সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ে বন্ধের ছবি দেখা গিয়েছে। রাসবিহারী মোড় থেকে সাদার্ন অ্যাভিনিউ হয়ে গোলপার্ক যাওয়ার রাস্তায় একজন লোকও চোখে পড়েনি। একই দৃশ্য দেখা গিয়েছে দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন এলাকায়। টালিগঞ্জ করুণাময়ী, যাদবপুর, বালিগঞ্জ সর্বত্রই। উত্তর কলকাতার বিভিন্ন জায়গার সামগ্রিক ছবি প্রায় অভিন্ন। মানিকতলা, শিয়ালদহ এলাকায় কঠোর পুলিসি বন্দোবস্ত দেখা যায়।
সড়কের পাশাপাশি জলপথ পরিবহণও ছিল সম্পূর্ণ স্তব্ধ। এপারে শোভাবাজার, আহিরীটোলা হোক কিংবা গঙ্গার ওপারে হাওড়া, লিলুয়া, বালি—সবকটি ফেরিঘাটই ছিল শুনশান। গাড়ি বা বাইকে ‘জরুরি পরিষেবা’ লেখা কাগজ সাঁটা থাকলেও উপযুক্ত পরিচয়পত্র না দেখে কাউকেই ছাড়েনি পুলিস। বিভিন্ন জায়গায় নজরদারির স্বার্থে ড্রোন উড়িয়ে পর্যবেক্ষণ চালান পুলিসকর্মীরা। শহরের সমস্ত বড় জংশনগুলিতে স্থানীয় থানার শীর্ষ আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন। তবে কোথাও কোনও বেনিয়ম দেখলে কাউকে রেয়াত করেননি তাঁরা। লালবাজারের তথ্য অনুযায়ী, শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে লকডাউন অমান্য করার অপরাধে মোট ৮৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে।