তুঙ্গে চাহিদা, আরও পাঁচ হাজার বিঘায় তুলসি, অশ্বগন্ধার চাষ করবে রাজ্য
করোনা পর্বে তুঙ্গে উঠেছে চাহিদা। তাই আরও প্রায় ১৭০০ একর বা পাঁচ হাজার বিঘা জমিতে তুলসি ও অশ্বগন্ধার চাষ করবে রাজ্য। বর্তমানে রাজ্যজুড়ে প্রায় ৩৫০ একর জমিতে তুলসি চাষ হয়। অশ্বগন্ধা হয় হাজার একর জমিতে। রাজ্য ভেষজ পর্ষদ তুলসি চাষের জমি বাড়িয়ে প্রায় হাজার একর এবং অশ্বগন্ধার চাষ বাড়িয়ে দু’হাজার একরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। পর্ষদের অধিকর্তা ডাঃ প্রশান্ত সরকার এ খবর জানিয়ে বলেন, বাজারে উত্তরোত্তর চাহিদা বৃদ্ধি দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদের চাষ আগামী পাঁচ বছরে দ্বিগুণ করা হবে। বর্তমানে রাজ্যের প্রায় পাঁচ হাজার একর জমিতে নানা ধরনের ভেষজ উদ্ভিদের চাষ হয়। তা বাড়িয়ে ১০ হাজার একর করা হবে। তার মধ্যে করোনা পরিস্থিতির জন্য তুলসি ও অশ্বগন্ধার চাষ অবিলম্বে বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। পর্ষদ অধিকর্তা একইসঙ্গে দাবি করেছেন, ভেষজ উদ্ভিদের চাষ থেকে বাংলার কৃষকদের লাভ হচ্ছে। পতিত জমি থেকেই ফলছে সোনা।
সূত্রের খবর, রাজ্যে বর্ধমান, পুরুলিয়া সহ দক্ষিণবঙ্গের কিছু জেলা ছাড়াও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে তুলসি চাষ হয়। সেই এলাকার পরিসর এবার বাড়ানো হচ্ছে। তুলসির তুলনায় অশ্বগন্ধার চাষ হয় অনেক বেশি জায়গায়। যেমন উত্তর ২৪ পরগনা, নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া প্রভৃতি। সেই চাষের ক্লাস্টারের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে।
চাহিদা কতটা বেড়েছে এই দুই রোগ প্রতিরোধক ভেষজের? উত্তর দেবে বাজারের দামও। ফেব্রুয়ারিতে কলকাতার বাজারে এক কেজি তুলসি ৭০ টাকায় মিলত। এখন তা বেড়ে হয়েছে ২০০ টাকা। ওই একই সময় অশ্বগন্ধার দাম কেজিতে ছিল কমবেশি ১২০ টাকা। তা এখন বেড়ে হয়েছে ২২০ টাকা। সূত্রের খবর, করোনা পর্বের সাত মাস অতিবাহিত। এখনও এ দেশে অতিমারীর সুনির্দিষ্ট ভ্যাকসিন বা ওষুধ বের করতে পারেনি অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞান। একমাত্র ভরসা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো। আর সেজন্যই হাজার হাজার বছর ধরে প্রচলিত আয়ুর্বেদিক ওষধির উপর ভরসা বেড়েছে সাধারণ মানুষের। বিশেষত, তুলসি, কালোমরিচ, অশ্বগন্ধা, গুরুচি বা গুলঞ্চ, শুকনো আদা বা শুঁঠ, দারচিনি ইত্যাদির চাহিদা বেড়েছে বহুগুণ। এগুলির কয়েকটি নিয়ে তৈরি আয়ুর্বেদিক ক্বাথ ইতিমধ্যেই সরকারিভাবে কিনে রোগী, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিসকে বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে।
তুলসির অ্যান্টি ভাইরাল গুণ, জ্বর-সর্দিকাশিতে গৃহস্থবাড়িতে বহু যুগ ধরে ব্যবহার এবং সহজলভ্যতা এর চাহিদা আরও বাড়িয়েছে। পাশাপাশি দেশি-বিদেশি আয়ুর্বেদিক ওষুধ কোম্পানিগুলির কাঁচামাল হিসেবেও তুলসির চাহিদা রয়েছে। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা জানান, তুলসি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বাড়াতে পারে। ফলে করোনা ভ্যাকসিন এলেও তুলসির চাহিদা কমার নয়।
অন্যদিকে রোগ প্রতিরোধক গুণের জন্য অশ্বগন্ধা বিখ্যাত। আয়ুর্বেদিক জগতে আরও এক প্রসিদ্ধ ওষুধ গুলঞ্চ বা গুরুচি। একে ‘সেরার সেরা’ আয়ুর্বেদিক ওষধি উদ্ভিদ বলা হয়। তবে এর চাষ হয় না। বাংলার আগাছা-জঙ্গল থেকে সংগৃহীত হয়। তবুও এর দাম বেড়েছে করোনা পর্বে। করোনার আগে এক কেজি গুলঞ্চের দাম ছিল ২০ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা।