দেশ বিভাগে ফিরে যান

৬ কিলোমিটার দীর্ঘ নির্মীয়মাণ ফ্লাইওভার ভেঙে পড়ল গুরগাঁওতে

August 23, 2020 | 2 min read

শনিবার রাতে (২২ অগস্ট) নির্মীয়মাণ একটি উড়ালপুলের একাংশ ভেঙে পড়ল গুরগাঁওয়ের সোহনা রোডে। শনিবার রাত ৯টা ৪৭ মিনিটে আচমকা নির্মীয়মাণ ওই ফ্লাইওভারের একাংশ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। সম্প্রতি ওই ফ্লাইওভারের দু’টি পিলারের উপর একটি গার্ডার বসানো হয়েছিল। সোহনা রোডে বিপুল গ্রিন কনডমিনিয়ামের সামনে শনিবার রাতে সেটি ভেঙে পড়ে যায়। তার জেরে কমপক্ষে দু’জন জখম হন। ২০১৮ সালের শেষ থেকে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই উড়ালপুলটির নির্মাণকাজ চলছে।

দু’জন যে জখম হয়েছেন, গুরুগ্রাম পুলিশের তরফে তা নিশ্চিত করা হয়েছে। ওই দু-জনই শ্রমিক বলে জানা গিয়েছে। পুলিশ জানায়, নির্মীয়মাণ অংশটি রাতে ভেঙে পড়ার কারণেই বড় বিপত্তি এড়ানো গিয়েছে। শনিবার হওয়ার অফিস-কাছারি বন্ধ ছিল। তা ছাড়া সপ্তাহান্তে রাজ্য সরকারের কোভিড বিধিনিষেধের কারণে রাস্তায় লোকজন, যানবাহন বিশেষ ছিল না। সেক্ষেত্রে দিনে দুর্ঘটনা ঘটলে, বড় বিপদ ঘটে যেতে পারত।

অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অফ পুলিশ (সদর) আমন যাদব জানান, দুর্ঘটনার কয়েক মিনিটের মধ্যে তাঁরা খবর পেয়েছেন। পাঁচ মিনিটের মধ্যে পুলিশের পেট্রোলিং গাড়ি সেখানে পৌঁছে যায়। উদ্ধারকারী দলও পৌঁছায়। তবে, কোনও প্রাণহানির খবর নেই। ঘটনাস্থলে থাকা দু’জন শ্রমিক জখম হয়েছেন। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার বৈষ্ণবনগরে ফরাক্কা ব্যারেজের (Farakka barrage) উপর নির্মীয়মাণ একটি সেতু ভেঙে এক ইঞ্জিনিয়ার-সহ কমপক্ষে তিন জন মারা যান। জখম হন আরও তিন জন। ভেঙে পড়া ওই সেতুর ধ্বংসস্তূপে শ্রমিকদের অনেকেই আটকা পড়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত ওই তিন জন ছাড়া বাকি সকলকে নিরাপদে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার তদারকিতে মালদায় ওই সেতু নির্মাণের কাজ চলছিল। পুলিশ জানায়, মৃতদের একজন ৩৬ বছর বয়সি জুনিয়ার ইঞ্জিনিয়ার শ্রীনিবাস।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে পুরনো ফরাক্কা সেতুর সমান্তরালে নয়া সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। দক্ষিণ ভারতের একটি সংস্থার পাশাপাশি একটি চিনা সংস্থাও নির্মাণকাজে যুক্ত। সেতুটির মালদা ও মুর্শিদাবাদ– দু’দিকেই কাজ চলছিল। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ মালদার বৈষ্ণবনগর থানা এলাকার দিকে সেতুর এক ও দু’নম্বর পিলারের মধ্যে গার্ডার বসানোর সময় ভেঙে পড়ে গার্ডারটি। সেখানে তখন কাজ করছিলেন কমপক্ষে ১০ শ্রমিক। ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে যান কয়েক জন।

কয়েক বছর আগে ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ কলকাতার পোস্তায় নির্মীয়মাণ এমনই একটি উড়ালপুল ভেঙে কমপক্ষে ২৬ জন মারা যান। আরও ৭০ থেকে ৭৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছিল জখম অবস্থায়। উড়ালপুলের ভেঙে পড়া চাঙড় এবং স্টিলের কাঠামোর নীচে অনেকই অর্ধেক চাপা পড়ে ছিলেন। কারও মাথা বেরিয়েছিল বাইরে, কারও পা। নির্মীয়মাণ বিবেকানন্দ উড়ালপুলটি গণেশ টকিজ মোড়ের কাছে ভেঙে পড়েছিল।

ঘড়িতে তখন বেলা ১২টা ৪০। রবীন্দ্র সরণি ও কে কে টেগোর রোড ক্রসিংয়ে নির্মীয়মাণ পোস্তা উড়ালপুলের ১৫০ মিটার অংশ ভেঙে পড়ে। বিশালকার লোহার বিমের নীচে চাপা পড়েন অসংখ্য পথচারী, ট্যাক্সিচালক-সহ বহু মানুষ।

উড়ালপুল ভেঙে পড়ার ঘটনায় গাফিলতির অভিযোগ ওঠে নির্মাণকারী সংস্থা আইভিআরসিএল-এর দিকে। খড়্গপুর আইআইটি-র দেওয়া রিপোর্টে সামনে আসে ভুল নকশা আর গুণগত মান যাচাইয়ের অভাবেই ভেঙে পড়ে পোস্তা উড়ালপুল। রিপোর্টে পরিষ্কার বলা হয়, বিবেকানন্দ উড়ালপুলের নকশায় ত্রুটি ছিল এবং ওই ভুল নকশাই অনুমোদন করা হয়েছিল। উড়ালপুলের সব নির্মাণসামগ্রীর গুণগত মানও ঠিক ছিল না। কোয়ালিটি চেকিং ঠিকমতো হয়নি। পূর্বতন বাম সরকারের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলে তৃণমূল সরকার। পালটা সিপিআইএম দাবি করে, উড়ালপুলে যে অংশটি ভেঙে পড়েছে, তা তৃণমূল সরকারের আমলেই তৈরি হওয়া। এই চাপানউতোরের মধ্যেই তত্‍‌কালীন মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় ও খড়গপুর আইআইটি-র তিন অধ্যাপককে নিয়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি ওই উড়ালপুলের উপর দিয়ে যান চলাচলের বিপক্ষে মত দেয়। আবার উড়ালপুলটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকাও বিপজ্জনক। তাই নির্মীয়মাণ উড়ালপুলের বাকি অংশ ভেঙে ফেলাই উচিত বলে জানায় কমিটি।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Uttar Pradesh, #Flyover Collapses, #Gurgaon

আরো দেখুন